প্রশ্নঃ প্রতিবন্ধের উপাদানগুলো ব্যাখ্যা কর। সাক্ষ্য আইনে “এসটোপেল” নীতির গুরুত্ব আলোচনা কর। সংক্ষেপে প্রতিবন্ধ ও রেস জুডিকাটার মধ্যে পার্থক্য দেখাও।
প্রতিবন্ধ (Estoppel): Estoppel শব্দটি ফরাসী শব্দ ‘Estoupe’ হতে উদ্ভূত, যার অর্থ হচ্ছে নিবৃত্তি। কোন ব্যক্তি যখন একটি কথা বলে এবং সে কথার উপর ভিত্তি করে অন্য ব্যক্তি কোন কাজ করে থাকে তখন প্রথম ব্যক্তিকে তার সে কথাটি আর পরিবর্তন করতে দেয়া যায় না। এটাই হচ্ছে প্রতিবন্ধ সূত্রের মূল কথা। এই সূত্রটি সাক্ষ্য আইনের ১১৫ ধারায় বিবৃত হয়েছে। এই ধারায় বলা হয়েছে যে, কোন ব্যক্তি যখন তার ঘোষণা, কাৰ্য কিংবা নিরবতা দ্বারা অন্য ব্যক্তিকে ইচ্ছাকৃতভাবে কোন বিষয় সত্য বলে বিশ্বাস করায়েছেন, এবং সেই বিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে কোন কাজ করতে দিয়েছেন, তখন সেই ব্যক্তি অথবা তার প্রতিনিধির সাথে কোন মামলায় উক্ত বিষয়ের সত্যতা অস্বীকার করতে পারবেন না।
কোন ব্যক্তি যখন তার ঘোষণা দ্বারা অন্য কোন ব্যক্তিকে কোন কিছু করতে প্ররোচিত করে, তখন প্রথম ব্যক্তি তার ঘোষণা আর প্রত্যাহার করতে পারেন না। উক্ত ঘোষণা প্রতিবন্ধরূপে কাজ করে। নিজ স্বার্থ সিদ্ধির জন্য কেউ যেনো একই বিষয়বস্তু সম্পর্কে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কথা বলতে না পারে তারই ব্যবস্থা করা হয়েছে এই প্রতিবন্ধনীতিতে।
উদাহরণঃ ক স্বেচ্ছায় এবং মিথ্যাভাবে খ-কে বিশ্বাস করান যে, ক কোন একটি জমির মালিক এবং তদ্বারা খ- কে ঐ জমি কিনতে প্রলুব্ধ করেন। পরবর্তীকালে ক প্রকৃতরূপেই ঐ জমির মালিক হন। বিক্রয়ের সময় এবং জমিতে ক এর কোন স্বত্ব ছিল না, এই অজুহাত উত্থাপন করে ক উক্ত বিক্রয়টি নাকচ করার চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধ নীতি কাজ করবে। তাকে বিক্রয় সময়ের স্বত্বহীনতা প্রমাণ করতে দেয়া হবে না।
ঘটনার বিষয়ে প্রতিবন্ধ নীতি কার্যকর হলেও আইন বিষয়ে এই নীতি কার্যকর নয়। কোন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আইন বিষয়ে ভুল তথ্য দিলে এবং অন্য ব্যক্তি তার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কোন কাজ করলে আইন বিষয়ে ভুল তথ্য দাতার বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধ নীতি কার্যকরী করা যায় না। তাই কোন নাবালক তার সম্পত্তি বিক্রয় করতে আইনগত কোন অসুবিধা নাই, এ কথা বলে অন্যকে তার সম্পত্তি ক্রয় করতে প্ররোচিত করলে, পরে যদি সে বিক্রয় নাকচ করতে চায় তবে সে এক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে তো পারবে। কেননা প্রতিবন্ধ নীতি কার্যকরী হবে না। এটা ধরে নেয়া হয় যে, দেশের আইন সকলে জানে। তাই অন্যের কথায় আইনের অজ্ঞতাহেতু কোন কাজ করলে আইনের সহায়তা সে পাবে না।
প্রতিবন্ধের উপাদানঃ
(১) প্রতিবন্ধ যার বিরুদ্ধে, কার্যকরী করতে চাওয়া হচ্ছে সেই ব্যক্তি অথবা তার প্রতিনিধি কোন ঘোষণা, কার্য অথবা নিরবতা দ্বারা স্বেচ্ছায় অন্য পক্ষকে কোন বিষয়ে কিছু কার্য করতে প্রভাবিত করেছিলেন।
(২) অন্য ব্যক্তি উক্ত ঘোষণা, কাৰ্য বা নিরবতা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কোন কাজ করেছিলেন।
(৩) এরূপ ঘোষণা, কার্য বা নিরবতা কোন ঘটনা বিষয়ে করা হয়েছিল, কোন আইন বিষয়ে নয়।
(৪) পরবর্তীতে এরূপ ঘোষণাকারী ব্যক্তি বা তার প্রতিনিধি এমন কোন অজুহাত উত্থাপন করেন, যা তার পূর্ব বর্ণিত ঘোষণা, কার্য ও নিরবতার পরিপন্থী।
এসটোপেল বা প্রতিন্ধের গুরুত্বঃ কোন ব্যক্তি যখন তার ঘোষনা কার্য-কিংবা নিরবতা দ্বারা অন্য ব্যক্তিকে ইচ্ছাকৃতভাবে কোন বিষয় সত্য বলে বিশ্বাস জন্মান, তখন সেই ব্যক্তি অথবা তার প্রতিনিধির সাথে কোন মামলায় উক্ত বিষয়ের সত্যতা অস্বীকার করতে পারেন না। নিজ স্বার্থ স্বিদ্ধির জন্য কেউ কেউ প্রথমে এক কথা বলে এবং পরে আরেক কথা বলে। কিন্তু আইন অত্যন্ত সজাগ ৷ আইন এই সকল ব্যক্তির বিরুদ্ধে একটা নীতি ব্যবহার করে তাকে পূর্বের অবস্থান থেকে সরে আসার পথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা সৃষ্টি করে এবং নিখুঁত করে সেই জন্য তার নিজের কথা বা কাজের অবস্থানে থাকতে হয়, ফলে যার ক্ষতি করতে চেয়েছিলেন তার সোচ্চার হয়। সেই জন্য Esloppel বা প্রতিবন্দ নীতির গুরুত্ব অপরিসীম।
প্রতিবন্ধ ও রেস জুডিকাটার মধ্যে পার্থক্যঃ রেসজুডিকাটা ও প্রতিবন্ধের মধ্যে নিম্নোক্ত পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়-
(১) দেওয়ানী কার্যবিধির ১১ ধারায় রেসজুডিকাটার বিধান রয়েছে। পক্ষগণের মধ্যে বিচারে নিষ্পত্তিকৃত মামলা পুনরায় বিচারের জন্য আদালতে আনয়নে রেসজুডিকাটা বাধা প্রদান করে। পক্ষান্তরে, সাক্ষ্য আইনের ১১৫ ধারায় বর্ণিত স্বীকৃতির প্রতিবন্ধকতা বা নিবৃত্তির নীতি দুটি পরস্পর-বিরোধী বক্তব্য পেশ করা হতে পক্ষগণ বিরত রাখে।
(২) রেসজুডিকাটা জননীতি বা সর্বজনীন কল্যাণমূলক নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। অপরদিকে, প্রতিবন্ধকতা সাক্ষ্য আইনের একটা নীতি যার উপর ভিত্তি করে কোন মামলা দায়ের করা যায় না।
(৩) রেসজুডিকাটা আদালতের সিদ্ধান্তের উপর প্রতিফলন ঘটায়। অপরদিকে প্রতিবন্ধকতা পক্ষগণের, সাক্ষ্য প্রদানের ব্যাপারে অর্থাৎ আচরণের উপর প্রতিফলন ঘটায়।
রেসজুডিকাটা ও প্রতিবন্ধের মধ্যে মোটামুটি এগুলিই হচ্ছে পার্থক্য।
Leave a comment