থর্নডাইকের শিখনতত্ত্বটি শারীরতত্ত্ববিদদের দ্বারা বিশেষভাবে সমালােচিত হলেও এই তত্ত্বটি শিক্ষাজগতে এক আলােড়ন সৃষ্টি করেছিল। এই তত্ত্বটির শিক্ষাগত তাৎপর্য নিম্নে আলােচনা করা হল一

(১) শিক্ষকের দায়িত্ব বৃদ্ধি : এতদিন শিক্ষার্থীর অকৃতকার্যতার জন্য তার বুদ্ধি বা মেধাকে দায়ী করা হত; তার জন্য শিক্ষকের কোনাে দায় থাকত না। কিন্তু এই তত্ত্ব অনুযায়ী সমস্ত দায় শিক্ষকের দক্ষতার। অর্থাৎ শিক্ষার্থীর অকৃতকার্যতার জন্য শিক্ষকের দক্ষতার অভাবই দায়ী। ফলে শিক্ষকের দায়িত্ব বৃদ্ধি পায়।

(২) প্রস্তুতির উপর গুরুত্ব: শিক্ষার্থী পাঠগ্রহণের জন্য শারীরিক, মানসিক ও প্রাক্ষোভিকভাবে কতটা প্রস্তুত তার উপর তার সাফল্য নির্ভরশীল। তাই শিখন পরিস্থিতিতে সে কতটা প্রস্তুত সেই বিষয়ে শিক্ষককে নিশ্চিত হতে হবে।

(৩) শিখনের ফল তৃপ্তিদায়ক করে তােলা: শিখনের ফল শিক্ষার্থীর কাছে তৃপ্তিদায়ক বা সুখকর বা আনন্দদায়ক হলে শিখন স্থায়ী হবে। তাই পাঠ্যবিষয়কে শিক্ষার্থীর সামনে এমনভাবে উপস্থাপন করতে হবে যাতে শিক্ষার্থীর মধ্যে এইসকল অনুভূতিগুলি আসে এবং তা বিরক্তিকর না হয়।

(৪) অনুশীলনের উপর গুরুত্বদান: শিখন অনুশীলন নির্ভর হওয়ায় শিক্ষার্থী যাতে বারংবার অনুশীলনের সুযােগ পায় সেদিকে সজাগ থাকতে হবে।

(৫) শিক্ষকের আংশিক সহযােগিতা: কোনাে সমস্যা সমাধানে শিক্ষক মহাশয় শিক্ষার্থীকে পুরােপুরি সাহায্য না করে আংশিক সাহায্যদান করবেন।

(৬) শিক্ষার্থীর ভুলে শাস্তির ভ্রূকুটি নয়: নতুন কোনাে কিছুর শিখনে শিক্ষার্থীর ভুল হওয়াটাই স্বাভাবিক। ভুল হলে শিক্ষার্থীকে শাস্তি দেওয়া চলবে না; শাস্তি না দিলেই তার শেখার প্রতি আগ্রহ বাড়বে।

(৭) পূর্ব অভিজ্ঞতার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সমস্যা নির্বাচন: শিক্ষার্থীর সামনে এমন সব সমস্যা তুলে ধরতে হবে যা সে তার পূর্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সমাধান করতে সমর্থ হয়।

প্রচেষ্টা ও ভুল তত্ত্বের ত্রূটি 

থর্নডাইকের প্রচেষ্টা ও ভুল  যেসকল সীমাবদ্ধতা লক্ষ করা যায় সেগুলি হল—

(১) সমস্ত ধরনের শিখনকে ব্যাখ্যা করা যায় না: মস্তিষ্কের স্নায়ুমণ্ডলীতে বিশেষ বিশেষ স্নায়ুগুলির মধ্যে সংযােগস্থাপনই হল শিখন। কিন্তু ল্যলে, ফ্রাঞ্জ, ক্যামেরল প্রমুখ প্রসিদ্ধ গবেষকগণ প্রমাণ করেছেন যে স্নায়ুমূলক সংযােজনের মাধ্যমে সমস্ত ধরনের শিখন প্রক্রিয়ার সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব নয়।

(২) শিখন প্রক্রিয়ার বহু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য উপেক্ষিত: শিখন প্রক্রিয়ার বহু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য থর্নডাইকের শিখন পদ্ধতিতে উপেক্ষিত। যেমন— শিখনের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে সচেতনতা, শিখন পরিস্থিতিতে প্রক্ষোভের ভূমিকা এখানে উপেক্ষিত।

(৩) যুক্তি, পরিকল্পনাকে স্বীকার করা হয়নি: থর্নডাইকের শিখন পদ্ধতিতে যুক্তি, পরিকল্পনা প্রভৃতির কোনাে ভূমিকা নেই। কিন্তু ইয়র্কস প্রমাণ করেছেন যে, যে-কোনাে শিখন পরিস্থিতিতে মনুষ্যেতর প্রাণীও যুক্তি প্রয়ােগ করে।

(৪) অন্তর্দৃষ্টির গুরুত্ব অস্বীকার: সমগ্রতাবাদীদের মতে, সবসময় শিক্ষার্থীরা প্রচেষ্টা ও ভুলের মাধ্যমে শেখে না, পরিস্থিতি অনুযায়ী অন্তদৃষ্টির মাধ্যমেও শেখে, যা থর্নডাইক স্বীকার করেননি।