স্বাধীনতাকালীন ভারতবর্ষের শিক্ষা ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী ও উন্নয়নমুখী করার লক্ষ্যে বহু শিক্ষা সংক্রান্ত কমিটি ও কমিশন গঠন করা হয়। বহু বিশেষজ্ঞের মতামতের উপর ভিত্তি করে ভারতে মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরকে সম্পূর্ণ নতুন রূপে গড়ে তোলা হয়। মাধ্যমিকশিক্ষা কাঠামােকে উন্নত করার লক্ষ্যে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা কাঠামোকে নবকলেবর প্রদানের বন্দোবস্ত করা হয়। ফলে ১৯৪৮-৪৯ খ্রিস্টাব্দে রাধাকৃষাণ কমিশন থেকে শুরু করে ১৯৫২-৫৩ খ্রিস্টাব্দে মুদালিয়র কমিশনের আমল পর্যন্ত নানাভাবে শিক্ষা কাঠামো পরিবর্তন আসে। ১৯৫০-এর পূর্বে প্রচলিত শিক্ষাকাঠামাের সঙ্গে ১৯৫২-৫৩-র মুদালিয়র কমিশন কর্তৃক রচিত শিক্ষা কাঠামো এই কারণে কিছু পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।

তৎকালীন শিক্ষাব্যবস্থা দুটি স্তরে বিভক্ত ছিল। প্রথম স্তরটি ছিল প্রাথমিক শিক্ষা বা নিম্ন বুনিয়াদি শিক্ষার স্তর এবং দ্বিতীয় স্তরটি ছিল মাধ্যমিক শিক্ষা স্তর। এই মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরের আবার উচ্চ প্রাথমিক বা উচ্চ বুনিয়াদি বা নিম্ন মাধ্যমিক এবং উচ্চ বা উচ্চতর মাধ্যমিক স্তরে বিভক্ত ছিল। প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রচলিত শিক্ষা কাঠামোর সঙ্গে মুদালিয়র কমিশনের শিক্ষা কাঠামো বিশেষ প্রভেদ ছিল না। উভয় ক্ষেত্রেই প্রাথমিক শিক্ষা ছিল ৪ বা ৫ বছরের এবং এইসময় শিক্ষার্থীরা প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি অথবা প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা গ্রহণ করত।

দ্বিতীয় স্তর অর্থাৎ মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরের শিক্ষায় উচ্চ বুনিয়াদি শিক্ষার ক্ষেত্রে মুদালিয়ার কমিশন প্রচলিত শিক্ষা কাঠামোর অর্থাৎ পঞম থেকে অষ্টম অথবা ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত এই ৪ বা ৫ বছরের শিক্ষার প্রতি আস্থা রেখেছেন। কিন্তু উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রচলিত শিক্ষা কাঠামোর সময়কাল ছিল ২ বছর; শিক্ষার্থীদের পড়তে হত নবম ও দশম শ্রেণিতে। অন্যদিকে মুদালিয়র কমিশনের আমলে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা হয় ৩ বছরের; যেখানে শিক্ষার্থীদের নবম, দশম ও একাদশ শ্রেণিতে পাঠগ্রহণ করতে হত।

সুতরাং দেখা যাচ্ছে, বিদ্যালয় স্তরে শিক্ষার কাঠামো প্রচলিত ব্যবস্থায় ছিল (৪+৪+২) বা ১০ বছরের অথবা (৫+৩+2) বা ১০ বছরের এবং অন্যদিকে, মুদালিয়র কমিশনের আমলে শিক্ষা কাঠামো ছিল (৪+৪+৩) বা (৫+৩+৩) বা ১১ বছরের।

সাধারণ শিক্ষা ও কারিগরি শিক্ষার কাঠামো ছাড়া মুদালিয়র কমিশন অন্যান্য যে সকল বিদ্যালয় সম্পর্কে সুপারিশ করেছে, সেগুলি হল- (১) কৃষি বিদ্যালয়, (২) পাবলিক স্কুল, (৩) আবাসিক বিদ্যালয়, (৪) আবাসিক দিবা বিদ্যালয়, (৫) প্রতিবন্ধী স্কুল, (৬) বালিকাদের জন্য পৃথক বিদ্যালয়, (৭) আংশিক সময়ের বিশেষ বিদ্যালয় প্রভৃতি। এই সকল বিদ্যালয় গুলো সম্পর্কে সুপারিশ গুলি হল— 

  • এইসকল বিদ্যালয়গুলোকে নতুনভাবে গড়ে তোলা, 
  • এগুলো কাঠামোগত পরিবর্তন সাধন করা, 
  • সরকারি অনুদানের মাত্রা হ্রাস করে এই সকল বিদ্যালয়গুলিতে জাতীয় শিক্ষা কাঠামোর অন্তর্ভুক্তিকরণ 
  • দৈহিক ও মানসিক ইত্যাদি বিভিন্ন প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ শিক্ষাব্যবস্থা করা ও বিশেষ ধরনের বিদ্যালয় স্থাপন করা। 
  • অনেকে বদলির চাকরি করে তাই তাদের সন্তানদের জন্য আবাসিক বিদ্যালয় সুবিধা প্রদান, 
  • দেশের পাবলিক স্কুলগুলির শিক্ষাকাঠামাে হবে জাতীয় শিক্ষা কাঠামোর ন্যায় প্রভৃতি।