প্রশ্নঃ সমাজবিজ্ঞানী প্যারেটো বর্ণিত সামাজিক পরিবর্তনের তত্ত্বটি আলোচনা কর।

অথবা, সমাজবিজ্ঞানী প্যারেটো বর্ণিত সামাজিক পরিবর্তনের তত্ত্বটি বর্ণনা কর।

ভূমিকাঃ সামাজিক পরিবর্তন একটি জটিল প্রক্রিয়া। সামাজিক পরিবর্তনের ব্যাখ্যাদানে বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী বিভিন্ন তত্ত্ব প্রদান করেছেন। এক এক সমাজবিজ্ঞানী এক এক দৃষ্টিকোণ থেকে সামাজিক পরিবর্তন ব্যাখ্যা করেছেন। তবে প্যারোটার মতবাদ অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য।

প্যারেটোর মতবাদঃ প্যারেটো নামক একটি মতবাদের সাহায্য সামাজিক পরিবর্তন ব্যাখ্যা করেছেন। প্যারেটোর তত্ত্বের মূল বৈশিষ্ট্যগুলো হলোঃ

(১) প্রভাব-প্রতিপত্তির ক্ষেত্রে এলিটদের স্থান চিরস্থায়ী নয়।

(২) এই পরিবর্তন ঘটে চক্রাকার সহজাত প্রবাহের মতো।

(৩) সামাজিক পরিবর্তন অবিরত ঘটতে থাকে।

(৪) সামাজিক পরিবর্তন সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সকল ক্ষেত্রেই পরিলক্ষিত হয়।

(৫) প্যারেটোর মতে সমাজে দু’ধরনের লোক থাকে। যথাঃ ক. প্রচলিত ধারা অনুসরণকারী, খ. প্রগতিশীল। 

(৬) সমাজে সক্ষম ও পারদর্শী লোকেরা হচ্ছে এলিট।

প্যারেটোর তত্ত্বের সমালোচনাঃ পৃথিবীতে কোনো কিছুই সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। প্যারেটোর তত্ত্বের সীমাবদ্ধতাগুলো হলোঃ

(১) প্যারেটো সম্পূর্ণরূপে উৎকৃষ্ট ও নিকৃষ্ট গুণাবলির ওপর এবং মনস্তাত্ত্বিক ধরনের ওপর দৃষ্টিপাত করেছেন। 

(২) শাসক এলিটের ধারণাটি সঠিক নয়।

(৩) তিনি Marxism-এর বিরোধিতা করেন নি, বরং একে ব্যবহার করেছেন।

প্যারেটোর তত্ত্বের বৈশিষ্ট্যগত দিকঃ সামাজিক পরিবর্তন হলো সমাজের অত্যাবশ্যকীয় বৈশিষ্ট্য। এর ব্যাখ্যায় প্যারেটোর মতবাদ অনেক তাৎপর্যপূর্ণ। প্যারেটোর তত্ত্ব অনুসারী সমাজে দুই ধরনের এলিট শ্রেণি রয়েছে।

(১) শাসক এলিট,

(২) অশাসক এলিট।

যে শাসক এলিট শ্রেণি হচ্ছে তারাই যারা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত নয় অথচ তারা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে চায়। তারা বিভিন্ন কৌশলে শাসক এলিটদের পরাস্ত করতে চায়। শাসক এলিটরা যে শৌর্য বীর্য নিয়ে ক্ষমতায় আসে তা চিরকাল টিকে থাকে না। এভাবে সময়ের পরিক্রমার শাসক এলিটদের শৌর্য-বীর্য লোপ পায় ও অশাসক এলিটরা শাসক এলিটদের পরাস্ত করে ক্ষমতায় চলে আসে। একে বলে ক্ষমতার পালাবদল। এ প্রক্রিয়াটি পৃথিবীর অনেক রাষ্ট্রেই আমরা দেখতে পাই। প্যারেটো দেখিয়েছেন যে, সমাজে মূলত দু’শ্রেণির লোক বাস করে। এক দল হচ্ছে প্রগতিশীল যারা পরিবর্তন চায় অন্য দল হচ্ছে গতানুগতিক সমাজ ব্যবস্থার অনুসরণকারী। অশাসক এলিট যারা পরবর্তীকালে শাসক এলিটে পরিণত হয় তারা হচ্ছে প্রগতিশীল শ্রেণির লোক। তাদের সমালোচনার কারণেই মূলত শাসক এলিটদের কর্তৃত্ব ক্ষীয়মান হতে থাকে। আবার অশাসক এলিটরা যখন শাসক এলিটে পরিণত হয় তখন প্রথমদিকে তাদের অনেক জনপ্রিয়তা থাকে। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় তাদেরও জনপ্রিয়তা হ্রাস পেতে থাকে ও অন্য আরেকদল অশাসক এলিট তাদের সরিয়ে শাসক এলিটে পরিণত হয়। এভাবে সমাজব্যবস্থা চক্রাকারে ঘুরতে থাকে।

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, সামাজিক পরিবর্তন সংক্রান্ত তত্ত্ব সামাজিক পরিবর্তনের ব্যাখ্যায় যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। যদিও প্যারেটোর তত্ত্বের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে তবুও এ তত্ত্ব সামাজিক পরিবর্তনের ব্যাখ্যার নতুন দিক উন্মোচন করেছে। তবে প্যারেটো সামাজিক দল ও গোষ্ঠীসমূহের সাথে এলিটদের কোনো সম্পর্ক দেখাননি যার কারণে তার তত্ত্বটি কিছুটা অসম্পূর্ণ মনে হয়। অবশেষে, প্যারেটোর মতবাদ সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার পরিবর্তন সংক্রান্ত আলোচনার যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।