যেসব স্থানে শহর বা নগর গড়ে ওঠে কিংবা কোনাে গােষ্ঠীবদ্ধ বসতি ক্রমে ক্রমে পৌর বসতিতে রূপান্তরিত হয় সেসব স্থানের বেশির ভাগ মানুষ দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তরের অর্থনৈতিক কাজে অর্থাৎ শিল্পোৎপাদন ও পরিসেবামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকে। শহরাঞ্চলে অধিকাংশ জমি বহুতল বাড়ি, রাস্তাঘাট নির্মাণ, প্রশাসনিক কাজ, ব্যাবসাবাণিজ্য, দোকানপাট, অফিসআদালত, ব্যাংক, হাসপাতাল, বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির জন্য ব্যবহৃত হয়। শহরের সীমানা বা শহরতলি এলাকার সামান্য পরিমাণ জমি বাজারকেন্দ্রিক শস্য উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হয়। তবে এই কাজে খুব কম সংখ্যক লােক নিযুক্ত থাকে। এইসব কারণে পৌর জনবসতিতে প্রাথমিক স্তরের কাজ অর্থাৎ কৃষিকাজের প্রাধান্য কম।

পৌর বসতির শ্রেণিবিভাগ করা হয় তার কার্যাবলির ভিত্তিতে। পৌর বসতিতে প্রধানত শিল্প (দ্বিতীয় স্তরের) ব্যাবসাবাণিজ্য ও পরিসেবামূলক (তৃতীয় স্তরের) কাজ হয়।

[1] প্রশাসনিক কাজ : সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলি সম্পাদনের জন্য, দেশ ও রাজ্য প্রভৃতি পরিচালনার জন্য, আইনআদালত প্রভৃতি সক্রিয় রাখার জন্য প্রশাসনিক স্তরে বহু কাজ থাকে। এজন্য বড়াে বড়াে শহরে প্রধান বা মুখ্য কার্যালয়গুলি আছে। রাজ্যের রাজধানীগুলি প্রশাসনিক কাজের জন্যই গড়ে উঠেছে। দেশের রাজধানীতে আন্তর্জাতিক স্তরের প্রসাশনিক কাজ হয়। রাজ্যের রাজধানী শহরে ব্যাংক, বিমা প্রভৃতি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আঞ্চলিক প্রধান কার্যালয় রয়েছে।

[2] পরিসেবামূলক কাজ : প্রতিটি পৌর বসতিতে জনগণের সুবিধার্থে কিছু কিছু পরিসেবামূলক কার্যাবলি সম্পাদন করা হয়ে থাকে। এইসব পরিসেবামূলক কাজের অন্তর্ভুক্ত কার্যাবলিগুলি হল-

  • শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাজার ও উন্নত যােগাযােগ ব্যবস্থা গড়ে তােলা।

  • রাস্তার পাশে আলাের ব্যবস্থা করা

  • পয়ঃপ্রণালী পরিষ্কার করে শহরের জনগণের স্বাস্থ্যের উন্নতিকরণে প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

  • স্বচ্ছ পানীয় জলের সরবরাহের ব্যবস্থা করা।

[3] শিল্পোৎপাদনমূলক কাজ : যেসব শহরে শিল্পোৎপাদনের প্রয়ােজনীয় পরিকাঠামাে এবং সুযােগসুবিধা বর্তমান থাকে সেইসব শহর শিল্পোৎপাদনমূলক কার্যাবলিতে অংশ নেয়।

[4] বাণিজ্যিক ক্রিয়াকলাপ সম্পাদনজনিত কাজ : অনেক পৌর বসতিগুলিতে বাণিজ্যিক কার্যাবলি সম্পাদিত হয়। এই ধরনের পৌর বসতিতে শিল্পের জন্য কাঁচামাল সংগ্রহ, শােধন ও বাণিজ্যের জন্য প্রয়ােজনীয় দ্রব্য সংগ্রহ ইত্যাদি নানাবিধ কার্যকলাপ হয়ে থাকে।