প্রশ্নঃ পৌরনীতি, সুশাসন এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এর সম্পর্ক আলোচনা কর।
ভূমিকাঃ পৌরনীতি ও সুশাসন হলো সামাজিক বিজ্ঞান। সমাজবদ্ধ মানুষের আচরণ, দৃষ্টিভঙ্গি, আশা-আকাঙ্ক্ষা, কার্যাবলি ইত্যাদি বিষয় পৌরনীতির আলোচনার বিষয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাস, অর্থনীতি ও সমাজবিজ্ঞান প্রভৃতি অপর সামাজিক বিজ্ঞানগুলোও মানুষের সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবন নিয়ে আলোচনা করে। সুতরাং সব সামাজিক বিজ্ঞানই পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। শুধু তাই নয়— দর্শন, মনোবিজ্ঞান, নীতিশাস্ত্র প্রভৃতি নৈতিক বিজ্ঞানের সাথেও পৌরনীতির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। জ্ঞানের এই মূল্যবান শাখাগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলো।
পৌরনীতি, সুশাসন এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (Civics, Good Governance & Information and Communication Technology.): পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সম্পর্ক খুবই নিবিড়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির ফলে তথ্য ও যোগাযোগের ক্ষেত্রেও আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। তথ্য ও যোগাযেগের দ্রুত উন্নতি সাধিত হওয়ায় বিশ্বের সকল প্রান্তের মানুষের মধ্যে নিবিড় যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও প্রযুক্তির ব্যবহার একটি দেশের জনগণের মূল্যবোধের ক্ষেত্রে বিরাট পরিবর্তন সাধন করেছে। অতীতের কৃষিভিত্তিক সমাজবিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর এবং শিল্প সমৃদ্ধ সমাজে পরিণত হতে চলেছে। এর ফলে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন ঘটছে। পরিবর্তন ঘটছে মূল্যবোধের জগতেও।
পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মধ্যে নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।
পৌরনীতি, সুশাসন এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সাদৃশ্যঃ
১. লক্ষ্যের ক্ষেত্রে অভিন্নতাঃ উভয়ের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন এবং তা হচ্ছে রাষ্ট্র ও নাগরিকের কল্যাণ সাধন ও উন্নয়ন।
২. বিষয়বস্তুর ক্ষেত্রে সাদৃশ্যঃ জ্ঞানের উভয় শাখার আলোচ্য বিষয়ে মিল লক্ষ্য করা যায়। জ্ঞানের উভয় শাখাই সমাজ, নাগরিক ও নাগরিকতা, নাগরিক সেবা, নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য, সরকার, প্রশাসন, প্রশাসনিক জবাবদিহিতা, জনমত, সুশাসন প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা করে থাকে।
৩. একে অপরের পরিপূরকঃ পৌরনীতি ও সুশাসন রাষ্ট্র ও নাগরিকের কল্যাণ নিয়ে আলোচনা করে। তথ্য ও গাযোগ প্রযুক্তির সাহায্য ছাড়া রাষ্ট্র ও নাগরিক কল্যাণের কথা চিন্তা করা যায় না।
৪. একটির ওপর অন্যটির প্রভাবঃ উভয় শাস্ত্রই একে অপরের ওপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ছাড়া নাগরিক কল্যাণ সম্ভব নয়। ঠিক তেমনি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সাথে সংশ্লিষ্টদের ও রাষ্ট্র প্রশাসন ও নাগরিকদের সম্পর্কে জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা থাকতে হয়।
পৌরনীতি, সুশাসন এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এর বৈসাদৃশ্যঃ
১. পদ্ধতিগত পার্থক্যঃ পৌরনীতি ও সুশাসনের অনুশীলন পদ্ধতি মূলত ঐতিহাসিক ও বিশ্লেষণধর্মী। কিন্তু তথ্য ও প্রযুক্তিবিদ্যার অনুশীলন পদ্ধতি মূলত গাণিতিক ও তথ্যনির্ভর।
২. দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্যঃ পৌরনীতি ও সুশাসনে বিদ্যমান সমস্যাগুলোকে নাগরিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হয় এবং বিশ্লেষণ করা হয়। কিন্তু তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে এগুলোকে দেখা হয় তথ্য ও প্রযুক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে।
৩. বিষয়বস্তুগত পার্থক্যঃ পৌরনীতি ও সুশাসন রাষ্ট্র ও নাগরিকতা বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করে। অপরদিকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কীভাবে সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণ করা হয় সেগুলোর উপর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিদ্যা অধিক গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করে থাকে।
উপসংহারঃ তবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির ফলে নাগরিক জীবনের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের পাশাপাশি আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির দিগন্তেও। মানবসভ্যতার প্রগতির ধারা আরো গতিশীল হয়েছে এবং জাতীয় জীবনের সবক্ষেত্রে উন্নতি ও প্রগতির সোপান রচিত হয়েছে। বিদ্যুৎ, বেতারযন্ত্র, টেলিভিশন, ইন্টারনেট, ই-মেইল প্রভৃতি পৃথিবীর এক প্রান্তের সমাজব্যবস্থা, আচার-আচরণ, কৃষ্টি, সভ্যতা, সংস্কৃতি, সাহিত্য ইত্যাদি অতি সহজে অন্য প্রান্তের সমাজজীবনে প্রভাব বিস্তার করছে। দ্রুতগামী আকাশযান দূরকে নিকট করে চলেছে। ঘরে বসেই মানুষ তথ্য পাচ্ছে, সারা পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারছে। তথ্যের অবাধ প্রবাহের সৃষ্টি হওয়ায় প্রশাসনে দুর্নীতি কমে যাচ্ছে, প্রশাসন স্বচ্ছ হয়ে উঠছে। ফলে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত হচ্ছে। কাজেই পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সম্পর্ক যে খুব নিবিড় তা নির্দ্বিধায় বলা যায়।
Leave a comment