পৃথিবীতে এমন অনেক জিনিস আছে যা সম্পর্কে আমাদের ধারণা নেই। তাই আমি পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য – জিনিস সম্পর্কে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আপনারা যারা পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য – জিনিস সম্পর্কে জানতে চান আমার আজকের পোষ্ট তাদের জন্য। পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য – জিনিস সম্পর্কে জানুন।

পৃথিবীর আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অনেক অজানা কাহিনী।পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য জিনিস সম্পর্কে আপনাদের সামনে বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য জিনিস সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

পোস্ট সূচিপত্রঃ পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য – জিনিস 

তাজমহল

ভারতের উত্তরপ্রদেশে আগ্রায় অবস্থিত একটি রাজকীয় সমাধির নাম হল তাজমহল। তাজমহল ভারতের আগ্রায় যমুনা নদীর তীরে শতাব্দী ধরে জাদু ছড়াচ্ছে। এই বিশ্বে যত স্থাপত্য রয়েছে তাজমহলের সৌন্দর্য সবচেয়ে বেশি। তাজমহল নির্মাণ কাজ শুরু ১৬৩২ সালে এবং তা শেষ হয় ১৬৫৩ সালে। এই তাজমহল নির্মাণ করা হয় সাদা মার্বেল পাথর দিয়ে।

এই সাদা মার্বেল পাথরে তৈরি তাজমহলের উপর যখন সূর্যের আলো পড়ে তখন মনে হয় মুক্তা জলে। সূর্যের আলোয় ঝলমল করছে এই তাজমহল। প্রায় ৭৩ মিটার উচু ওস্তাদ আহমেদ লাহৌরী তাজমহলের প্রধান নির্মাতা ছিলেন। সম্রাট শাহাজান ছিলেন মোঘল বংশের পঞ্চম সম্রাট। শাহজাহান তার প্রিয়তমা স্ত্রী মমতাজ মহলের প্রতি ভালবাসার স্মৃতি ধরে রাখতে এই তাজমহল তৈরি করেছিলেন।

আরো পড়ুনঃ সেন্টি লেন-নিষিদ্ধ দ্বীপ- সম্পর্কে জেনে নিন

এই তাজমহলের  নির্মাণে ২০হাজার  শ্রমিক ২২ বছর ধরে কাজ করেছেন। তাজমহল নির্মাণে তিন ৩ কোটি ২০ লাখ রুপি তখনকার সময়ে ব্যয় হয়েছিল। মুঘল সম্রাট শাহজাহান তার স্ত্রী আরজুমান্দ বানু মমতাজ মহল নামে পরিচিত। মুঘল স্থাপত্যের আকর্ষণীয় নিদর্শন হল এই তাজমহল। এর নির্মাণশৈলীতে সম্মিলিত রয়েছে ভারতীয়, পারস্য, তুর্কি সহ ইসলামী স্থাপত্য।

এই তাজমহলে চারটি মিনার রয়েছে এবং প্রতিটি মিনারের উচ্চতা ১৬২.৫ ফুট। ১০০০ হাতি দিয়ে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে তাজমহল তৈরির বিভিন্ন মালামাল নিয়ে আসা হয়েছিল। ৩ একর জায়গা জুড়ে এই তাজমহল নির্মাণ করা হয়েছে এবং যমুনা নদীর পাড় থেকে উচ্চতা প্রায় ১৬০ ফুট। তাজমহলের সামনের চতরে প্রায় ১৬ টি ফুলের বাগান রয়েছে এবং বাগানে দৈর্ঘ্য প্রায় ৩২২৯ বর্গফুট।

মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরি একটি পানির চৌবাচ্চা রয়েছে ঠিক বাগানের মাঝখানে। এছাড়াও একটি সরলরৈখিক চৌবাচ্চা রয়েছে তাজমহলের উত্তর দক্ষিণ দিকে। এই চৌবাচ্চায় দেখা যায় তাজমহলের প্রতিফলন। মনমুগ্ধকর গম্বুজ গুলো তাজমহলের সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে তুলে। যখন সূর্য উদয় হয় তখন সাদা মার্বেল পাথরে তৈরি তাজমহল যেন গোলাপি আভায় বিকরীত হয়।

এই তাজমহলে শায়িত আছেন পঞ্চম মুঘল সম্রাট শাহজাহান এবং তার প্রিয়তমা স্ত্রী আরজুমান্দ বানু  মমতাজ মহল। ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্পট হল এই তাজমহল। প্রায় ৩০ লক্ষ পর্যটক প্রতিবছর এই তাজমহল দেখতে আসে। তাজমহলের আশেপাশে যে কোন বায়ু দূষণ কারি যান চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। 

আরো পড়ুনঃ ভিক্টোরিয়া – মেমোরিয়াল- স্মৃতিসৌধ ভ্রমণ সম্পর্কে জেনে নিন

কথিত আছে সম্রাট শাহজাহান তাজমহল নির্মাণ কাজ শেষ হতে না হতেই তাঁর পুত্র আওরঙ্গজেব কর্তৃক আগ্রার কেল্লায় গৃহবন্দী হন।আর জীবনের শেষ সময় টুকু তিনি কেল্লার জানালা দিয়ে তাজমহল দেখেছিলেন। তার মৃত্যুর পর আওরঙ্গজেব থাকে তার প্রিয়তমা স্ত্রী মুমতাজ মহলের কাছে শায়িত করেন। ১৯৮৩ সালে তাজমহলকে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। 

২০০৭ সালে এই তাজমহল পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য – তালিকাভুক্ত  হয়েছে।ভারতের মুসলিম শিল্পে সর্বাপেক্ষা ও অনুপম রত্ন বলে স্বীকৃতি লাভ করেছে এই সাদা মার্বেল পাথরে তৈরি তাজমহল। তাজমহল কে সার্বজনীন প্রশংসিত শ্রেষ্ঠ কর্ম বলা হয়ে থাকে। পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য – জিনিস সম্পর্কে জেনে নিন

পেত্রা

পেত্রা জর্ডানের “রোজ সিটি” হিসেবে পরিচিত। পেত্রার চারপাশে রয়েছে গোলাপি মাটির খাড়া বাধ যার কারণে হয়তো এর নাম পেত্রা। এই পেত্রা নামটি গ্রিক শব্দ Petros থেকে এসেছে বলে ধারণা করা হয়ে থাকে। পেত্রা শব্দের অর্থ হলো পাথর। পেত্রা ছিল নবাটায়েন সাম্রাজের রাজা চতুর্থ আরে টাসের উজ্জ্বল রাজধানী। এটি আরো মরুভূমির ধারে বর্তমানে জর্ডানের দক্ষিণ-পশ্চিম হুর পাহাড়ের পদতলে ওয়াদি মুশা নামক একটি গ্রামে অবস্থিত।

পেত্রা বিস্তৃ ত প্রায় ২৬৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এবং এর উচ্চতা প্রায় ৮১০ মিটার। পেত্রা গাবতাইন রাজ্যের রাজধানী ছিল খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ পূর্বাব্দ থেকে ২০০ খ্রিস্টপূর্ব পর্যন্ত। এটি পাথর দিয়ে তৈরি বলে এর নামকরণ করা হয়েছে পেত্রা। এই নগরটি একসময় অত্যন্ত সুরক্ষিত ও সুন্দর দুর্গ ছিল। এই নগরটি নিপুনভাবে তৈরি করা হয়েছিল পাথরের গায়ে খোদাই করে। এই নগরটি পাহাড় এবং ঝর্ণা দিয়ে ঘেরা।

আরো পড়ুনঃ রানী ভিক্টোরিয়া – ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল স্মৃতিসৌধ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

পেত্রার মূল শহরে একটি হার্ডিয়েন ফটোক নামে প্রবেশদ্বার রয়েছে। এগুলো অবশ্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এখন ধ্বংস হয়েছে। খাজানাতে ফেরাউন মন্দির হলো পেত্রার মূল আকর্ষণ। পর্যটকরা জর্ডানের বেড়াতে গেলে পেত্রাকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে। কারণ পেত্রা হলো প্রত্নতত্ত্বের ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব সম্মেলন। পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য – জিনিস সম্পর্কে জেনে নিন।

সেখানে ইচ্ছে করলে ঘোড়া, গাধা ও উটের পিঠে উঠা যায়। ১৮১২ সালে সুইস পরিব্রাজক জোহান লুডিগ আরবের এই প্রাচীন শহর আবিষ্কার করেন। খ্রিস্টপূর্ব ৩১২ সালে নাবা তাইন রাজ্যের রাজধানী হিসেবে পেত্রা গড়ে ওঠে। এই নগরী গুহার মধ্যে তৈরি হলেও সুরক্ষিত একটি দুর্গ। এই দুর্গ দ্রুত ধ্বংস হয় রোমান শাসনের সময় সামুদ্রিক বাণিজ্য শুরু হলে।

খ্রিস্টপূর্ব ৩৬৩ সালে ভূমিকম্প হয় এবং এই ভূমিকম্পে ধ্বংস হয় এর দালান গুলো। এই দুর্গটি নির্মিত হয়েছিল গ্রিক রোমান্স শৈলীর অনুকরণে এবং এটা ছিল একটি নাট্যশালা। এই নাট্যশালাই ৪ হাজার দর্শকের বসার ব্যবস্থা ছিল। পেত্রা অবস্থিত এলডিআর আশ্রম এর  ৪২ মিটার ওপরে। মধ্যপূর্ব এশিয়ার সংস্কৃতির উৎকৃষ্ট নিদর্শন হলো হেলেনীয় পেত্রার পাশা-দোপম সমাধিগুলি।

আরো পড়ুনঃ হার্ডিঞ্জ ব্রিজ – হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ভ্রমণ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

এই পেত্রা দুর্গ প্রায় ৫00 বছর পূর্বে পৃথিবীর আলোচনার বাইরে থাকলেও এখন এটি একটি আলোচিত দুর্গ। ১৮১২ সালে এটিকে পুনরায় সারা বিশ্বের সামনে উপস্থাপন করেন লুইস পর্যটক জোহান লুভিগ বুর্খাদত। এই পেত্রার মধ্যে অবস্থিত নাট্যশালা হলো একটি গোলাকার নাট্যশালা। এছাড়া এর মধ্যে রয়েছে একটি স্টেডিয়াম যেখানে দর্শক ধারণ করতে পারে ১৫০০ জন। 

এখানে একটি লাইব্রেরী, সৈন্য দের জন্য ব্যারাক ও ১০ হাজার বর্গফুটের একটি সচিবালয়। ইউনেস্কো ১৯৮৫ সালে একে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট বলে ঘোষণা করে। এর চার বছর পর অর্থাৎ ১৯৮৯ সালে গঠন করা হয় পেত্রা ন্যাশনাল ট্রাস্ট এবং ২০০৭ সালে পেত্রাকে নথিভুক্ত করা হয় পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য – এর মধ্যে। পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য – জিনিস সম্পর্কে জেনে নিন।

কলোসিয়াম

কলোসিয়াম হল একটি ছাদবিহীন মঞ্চ যা ইতালির রোম শহরে অবস্থিত। এই মঞ্চ প্রস্তুত করা হয়েছিল সাধারণত কোন প্রতিযোগিতা ও প্রদর্শনীর জন্য। কোলোশিয়াম ইতালির রোমের সবচেয়ে বিখ্যাত নিদর্শন। বিশ্বের যতগুলো সেরা স্তম্ভ রয়েছে কলোসিয়াম তাদের মধ্যে অন্যতম। বিজয়ী রোমান সৈন্যদের পুরস্কৃত করা হয় সাম্রাজ্যের গৌরব গাথা তুলে ধরার জন্য এই বিশাল অ্যাম্পি থিয়েটারটি নির্মিত হয়েছিল। রোম শহরকে বলা হয় ল্যান্ড অফ মার্বেল বা মার্বেলের শহর। 

আর এই মার্বেল শহরের কেন্দ্রস্থলেই এই কলোসিয়াম অবস্থিত। প্রমাণ প্রকৌশলীদের চোখ ধাঁধানো নই পূর্ণ রয়েছে এই নিদর্শনে এটি নির্মাণ করেছিলেন ফ্লাভিয়ান বংশের সম্রাট ভেম্পাসিয়ান ও তার পুত্র সম্রাট তাই শাস ন৭০ থেকে ৮০ খ্রিস্টাব্দের কোন এক সময়ে আর ফ্লাভিয়ান এটি তৈরি করেছিলেন বলে একে ফ্লাবিয়ান আম্পিয়ার থিয়েটার বলা হয়। এখানে প্রধানত বন্যপ্রাণীদের লড়াই ও মল্ল যুদ্ধে যুদ্ধ এ ছাড়াও যুদ্ধ ও মন্তস্থ করা হতো।

আরো পড়ুনঃ বা”ংলাদেশ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

নিষ্ঠুর সম্রাট তাই তাসের তত্ত্বাবধানে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছিল এই মঞ্চ ব্যবহার করা হতো সাধারণত গ্লাডিয়েটরদের লড়াই, বিদ্রোহীদের মৃত্যুদন্ড, মঞ্চ নাটক এবং বিভিন্ন জীবজন্তুর লড়াই করার জন্য কলোসিয়া ৮০ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট তিতুশের রাজত্বকালে এটি সম্পূর্ণ হয়। কলোসিয়ামের দৈর্ঘ্য ১৮৮মিটার প্রস্থ ১৫৬ মিটার এবং এর উচ্চতা ৪৮ মিটার। আর এর প্রত্যেক তলায় রয়েছে ৮০টি করে মোট ২৪০ টি আ র্চ।

আর এতে রয়েছে তিনটি লেভেল এগুলো নির্মাণ করা হয়েছিল পাথর, ইট, বালি,মাটি, কাট ইত্যাদি দিয়ে। ইতিহাসবিদদের মতে, এই কলসিয়াম উদ্বোধনীর দিনে হত্যা করা হয়েছিল হাতি, সিংহ, ভালুক, গন্ডার ও বনমহরি সহ প্রায় ১000 পশু। পশু হত্যার পর এখানে শুরু হয় যুদ্ধবন্দীদের মরণ পন লড়াই একে অপরের সাথে। রোমান শাসক জুলিয়াস সিজার উপভোগ করেছিলেন ৩০০ গ্ল্যাডিয়েটরের লড়াই। 

এই কালোসিয়ামে অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারিয়েছে রক্ত পিপাসু রোম সম্রাটদের আনন্দের খোরাক হয়ে। যারা লড়াই করত তাদের বলা হয় গ্লাডিয়েট। ঐতিহাসিক ঘটনার প্রেক্ষাপট হলিউডের বিখ্যাত রাসেল ক্রো অভিনীত গ্ল্যাডিয়েটর  ছবিটি তৈরি হয়েছে। বৃহৎ এই অ্যাম্পি থিয়েটারে ৫০ হাজার দর্শক  ধারণ ক্ষমতা ছিল। এর ওপরে সামিয়ানা টাঙ্গানো হতো দর্শকদের রোদ- তাপ থেকে রক্ষা করার জন্য। ২১৭ খ্রিস্টাব্দে এই ভবনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল অগ্নিকাণ্ডে।

আরো পড়ুনঃ রাজশাহী কলেজ সম্পর্কে জানুন

এরপর ৬৪৩ খ্রিস্টাব্দে ও ১৩৪৯ খ্রিস্টাব্দে দুবার ভূমিকম্পে এই স্থাপনাটি ধ্বংস হতে বসে ছিল। ষষ্ঠ শতকে এটি রূপান্তরিত হয় সমাধি ক্ষেত্র হিসেবে। দ্বাদশ শতকে এই ভবনটি ভাড়া দেওয়া হয়েছিল আবাসিক ও বাণিজ্য আবাসন হিসাবে। এটি দুর্গে পরিণত হয় ত্রয়োদ শতকে। কলো সিয়ামের নির্মাণশৈলী বিস্মৃত করেছে পুরো বিশ্বকে কারণ এটি চার তলা বিশিষ্ট ছাদবিহীন দুর্গ। এটি ছয় ৬ একরভূমির উপর প্রতিষ্ঠিত। বছরে প্রায় চার ৪ লাখ ভবন পিপাসু লোক এটি দেখতে রোমে যায়।

চিচেন ইৎজা

মেক্সিকোর উত্তরে  যুকাতান উপদ্বীপে অবস্থিত মায়ান সভ্যতার সব থেকে বিখ্যাত মন্দির শহর হল চিচেন ইৎজা। সভ্যতার একটি বড় শহর এই শহরটির ১00 বর্গ কিলোমিটার আয়তন ছিল। অনুমান করা হয় এটি ৬00 সালে অর্থাৎ ১৪০০ বছর আগে এটি নির্মাণ করা হয়। এই চিচেন ইৎজা একটি পিরামিডের পাশে অবস্থিত। এই স্থাপত্য দেখতে অনেকটা পিরামিডের মতো। চমৎকার সিড়ি আছে এর চারদিকে। চৌকা ঘর আছে এই চিচেন ইৎজার একেবারে শিখরে।

এটি বর্তমানে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সম্পদ। এটা কলম্বিয়ান যুগের একটি কেন্দ্রবিন্দু। সূর্য দেবতার মন্দির হিসাবে এই পিরামিডটি পরিচিত। চিচেন ইৎজা প্রতীক হিসাবে এই মন্দিরটিকে ধরা হয়। এই পিরামিডের চারদিকে সিঁড়ি ধাপ রয়েছে প্রায় ৯১ টা করে। সব মিলিয়ে মোট সিঁড়ি ধাপ রয়েছে ৩৬৫ টি। এই চিচেন ইৎজার  রক্ষণাবেক্ষণ করেন দেশটির ইতিহাস ও নৃতত্ত্ব ইনস্টিটিউট।

আর পড়ুনঃ  দুবাই যেতে কত টাকা লাগে – দুবাই ভিসার দাম কত 2023

এই প্রত্নতান্ত্রিক স্থানটি মেক্সিকোর ইউ ক্যান রাজ্যের তিনুম মিউনিসিটির অন্তর্ভুক্ত। এই চিচেন ইৎজার যে নিদর্শন গুলো পাওয়া যায় তা হল ম্যাক্সিকোর ইউ কাটান উপদ্বীপের মায়ান সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ। কৃতদাসদের নমুনা, লবণ যা ৮০০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দের পূর্বে এবং তাদের জীবন যাত্রার নমুনা যেমন মধু পোশাক ইত্যাদি।

এর বিভিন্ন স্থাপত্য নির্মাণ স্থাপত্য গুলি হল গৃহসভা। এগুলো পরিচয় বহন করছে এইসব মহান কীর্তির। এটি সবচেয়ে পুরাতন মন্দির। এখান থেকেই আমদানি ও রপ্তানি করা হতো মূল্যবান দ্রব্যসনাসহ বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী এমনকি আমেরিকা সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এগুলো আমদানির রপ্তানি করা হতো।চিচেন ইৎজা গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পরিণত হয় ১৮০০ সালে। পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য – জিনিস সম্পর্কে জেনে নিন।

এটি বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে গৃহীত হয় ১৯৮৮ সালে। ২০০৭ সালে এটি অন্তর্ভুক্ত হয় পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য – হিসেবে। প্রতি বছর প্রায় বিশ লাখ পর্যটক এখানে ঘুরতে আসে। এটাই পৃথিবীর ধ্বংসাবশেষ মন্দির। এখানে রয়েছে সুপ্রিয় জলের কুপ। আর এই সুপ্রিয় জলের জন্য মেক্সিকানরা এখানে স্থাপন করেছেন তাদের বসতি। চিচেন ইৎজা যার সঠিক অর্থ হল  ইৎজার কুয়োর মুখে।  ১৯৮৮ সালে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ ঘোষণা করেন।

চীনের প্রাচীর

বিশ্বের দীর্ঘতম প্রাচীর হলো চীনের প্রাচীর। খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতকে এই প্রাচীরটি তৈরি করা হয়েছিল চীনের উত্তর সীমান্ত মোঘলদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য। এই প্রাচীরটি নির্মাণে অনেক রাজবংশ অংশ অংশগ্রহণ করেছিল। এই প্রাচীর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে অনেকগুলো বিভাগ, দূরবর্তী পাহাড় এবং মরুভূমি। এই প্রাচীর বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন নামে পরিচিতি লাভ করেছে। 

চীনের প্রথম প্রাচীরটি নির্মিত হয়েছিল চীনের প্রথম সম্রাট কিনসি হুয়াভের অধীনে। ২০১২ সালে চীনের রাষ্ট্রীয় সংস্কৃতি অধিদপ্তর দ্বারা ঘোষিত এই প্রাচীর। চীনের মহাপ্রাচীরের দৈর্ঘ্য ২১. ১৯৬ কিলোমিটার। এই প্রাচীর বেইজংয়ের এর প্রায় ৫২৬ কিলোমিটার।  রাজবংশের গ্রেট ওয়ালে দৈর্ঘ্য ৮ হাজার ১৮৫১ কিলোমিটার এই প্রাচীরের প্রস্থ নয় ৯ মিটার বা ৩২ ফুট এবং উচ্চতা ৪ মিটার থেকে ৯ মিটার।

আরো পড়ুনঃ কানাডায় স্কলারশিপ- কানাডায় পড়াশোনার খরচ 2023

মিং রাজবংশের সময় এই প্রাচীরের নির্মাণ কাজ চলেছে প্রায় ২০০ বছর। এই প্রাচীরটি নির্মাণে লোক লেগেছিল প্রায় ১০ লক্ষ। এছাড়া সাধারণ মানুষ, শ্রমিক এবং সৈন্যরাও অংশগ্রহণ করেছিল এর নির্মাণ কাজে। এই প্রাচীরটি নির্মাণে উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল ইট, বালি, পাথর, মাটি ও কাঠ। এই প্রাচীরে  টাওয়ার রয়েছে অনেকগুলো। এর মধ্যে ৭০৬২ লুকানো টাওয়ার ৩৩ ৫৭ টি ওয়াল প্লট প্ল্যাটফর্ম এবং ৭২৩ টি বিকোন টাওয়ার রয়েছে।

যেখান থেকে চীনের সোনারা শত্রু পক্ষের সৈন্যদের ওপর নজরদারি করত। এটি মানুষের দ্বারা নির্মিত সবচেয়ে বড় কীর্তি যা মহাকাশ থেকেও দেখা যায়। মানব নির্মিত যতগুলো পুরা তাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে তার মধ্যে এটি সবচেয়ে বৃহৎ। এই প্রাচীর বেইজিং শহরকে ঘিরে রেখেছে যা পর্যটকদের কাছে বেশি প্রিয়।

দ্য গ্রেট ওয়াল অফ চায়না ঘুরে দেখতে প্রতিদিন প্রায় পঞ্চাশ ৫0 হাজার পর্যটক আসে। ১৯৮৭ সালে এই স্থাপনাকে ইউনেস্কো ঘোষণা করে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসাবে। ২০০৭ সালে এই প্রাচীর বিশ্বের নতুন তালিকায় পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য-হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়।পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য – জিনিস সম্পর্কে জেনে নিন।

ক্রাইস্ট দ্যা রিডিমার মুর্তি

ব্রাজিলের দক্ষিণ পূর্ব শহরে রিও ডিজেনরিও তে যিশুখ্রিস্টে যে বিশাল মূর্তি রয়েছে তাকে বলা হয় ক্রাইস্ট দ্যা রিডিমার। এই মূর্তি পাহাড়ের চূড়ায় দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে আছে। এটি ১৩০ ফুট উঁচু যীশু খ্রীষ্টের বিখ্যাত মূর্তি। যীশুর মূর্তিটি পাহাড়ে রয়েছে তার উচ্চতা প্রায় ২৩ হাজার ৪০ ফুট বা ৭১৩ মিটার। ১৯২১ সালে এই মূর্তিতে নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ১৯৩১ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়।

ভাস্কর পোল ল্যান্ডোস্কি  এই মূর্তিটির প্রধান নির্মাতা। এই মূর্তিটি তৈরি করা হয়েছে গ্রানাইট দিয়ে। মূর্তিটির উচ্চতা ১00 ফুট বা ৩0 মিটার এর মোট ওজন ৬৩৫ মেট্রিক টন। এই মূর্তিটির বিভিন্ন অংশ শ্বেত পাথর ও কংক্রিট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এবং পাহাড়ের চুড়াই নিয়ে জোড়া দেওয়া হয়েছে যার কারণে দাঁড়িয়ে আছে এই বিশাল মূর্তি।  এর এক হাতে দৈর্ঘ্য ৯২ ফুট বা ২৮ মিটার।

আরো পড়ুনঃ আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস সম্পর্কে জেনে নিন

ফ্রান্সেরপোল ল্যান্ডোস্কি এই ভাস্কর তৈরি করেছেন। ৯ বছর ধরে এর নির্মাণ কাজ চলে। এর নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৩১ সালের ১১ অক্টোবর এবং এই দিন এর উদ্বোধন করা হয়। এই মূর্তি নির্মাণে ব্যয় হয় ২ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার এবং এই অর্থ জোগাড় করা হয়েছিল ডোনেশনের মাধ্যমে। এই মূর্তিটি পাহাড়ের চূড়ায় এবং রিও ডিজেনারে ওতে তিজুকান্যাশনাল পার্কে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

ব্রাজিলের ঐতিহাসিক জাতীয় ঐতিহ্য হলো ক্রাইস্ট দা রিডিমার। এই মূর্তি উপর থেকে দেখতে হলে ২২০ তলা পর্যন্ত লিফটে উঠে দেখতে হয়। যীশু খ্রীষ্টের এই মূর্তি দেখতে প্রায় ২০ লাখ পর্যটক ব্রাজিলে যায়। ব্রাজিল পর্তুগালের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে এবং এই স্বাধীনতা লাভের ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০০৭ সালের ৭ জুলাই এটিকে পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য-র তালিকা অন্তর্ভুক্ত করে। পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য – জিনিস সম্পর্কে জেনে নিন।

মাচু পিচু 

পেরুর সবচাইতে দর্শনীয় স্থান হল মাচু পিচু। মাচু পিচু বলতে বোঝায় পুরনো পাহাড়। সম্রাট পাকা সুটেক পঞ্চদশ শতকে পাহাড়ে মেঘের মধ্যে যে শহর নির্মাণ করেন তার নাম মাচু পিচু। ১৯১১ সালের আগ পর্যন্ত এটি বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত ছিল না। এই মাচু পিচু  কস্কো থেকে ৭০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে পাহাড়ে চূড়ায় অবস্থিত। এবং এর উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২৪০০ মিটার।

দুই পাহাড়ে সংযোগস্থলে এই স্থাপনাটি অবস্থিত। মার্কিন প্রত্নতত্ত্ববিদ হীরাম বিং-হাম এই মাচু পিচু র ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেন। এটি বর্তমানে পেরুর ইনকা শহরে এবং তিনি এটি আবিষ্কার করেন এর নাম দেন ইনকাদের হারানো শহর। পেরু সবচেয়ে দর্শনীয় স্থান এটি এবং এটি দক্ষিণ আমেরিকার অন্যতম প্রধান  প্রত্নতাত্ত্বিক কেন্দ্র। ১৪৫০ সালের দিকে এই শহরটি নির্মাণ করা হয় কিন্তু এই শহরটি নির্মাণের ১০০ বছরের মধ্যেই পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে।

আরো পড়ুনঃ আন্তর্জাতিক-মা দিবস  -বিশ্ব মা দিবস সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

এটি মূলত ধ্বংস হয়েছিল ইনকার সভ্যতা স্পেন দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ফলে। তারপর এই শহর কয়েকশো বছর অজ্ঞাত অবস্থায় ছিল। মার্কিন ঐতিহাসিক এই শহরটি খোঁজ করেন এবং ১৯১১ সালে এটিকে বিশ্বের নজরে তুলে ধরেন আর এই ১৯১১ সাল থেকে এই মাচু পিচু  পর্যটকদের কাছে দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য – জিনিস সম্পর্কে জেনে নিন।

১৯৮১ সালে পেরুর সংরক্ষিত ৩২৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা ঐতিহাসিক এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এটি অবস্থিত হয়েছে পেরুর উরু বাম্বা উপত্যকার ওপর। এই শহরটিতে আরো রয়েছে ধ্বংসাবশেষ ছাড়াও জীববৈচিত্র এবং প্রাকৃতিক উদ্ভিদ। ১৪৫০ সাল ছিল ইনকা সভ্যতার স্বর্ণযুগ। আর এই স্বর্ণযুগে এই মাচু পিচু  নির্মিত হয়। ইনকা সম্রাট পাচা কুতিকের অবকাশ যাপন কেন্দ্র হিসেবে ভূ প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের এই স্থান প্রসিদ্ধ ছিল।

একসময় এই শহরের অধিবাসী বসন্ত হয়ে মারা যায় আর এই কারণেই মাচু পিচু  পরিতক্ত হয়ে পড়ে।এই মাচু পিচুর উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৭ হাজার ৮৭৫ ফুট। মাচু পিচুর উপর দিয়ে উড়োজাহাজ চালানো নিষেধ। ইনকা সভ্যতার অন্যান্য স্বাক্ষর হল ধ্রুপদী, বাস্তু কলার নিদর্শন। ইউনেস্কো ১৯৮৩ সালে এই মাচু পিচু কে তালিকাভুক্ত করে বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে এবং ২০০৭ সালে এটি অন্তর্ভুক্ত হয় পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য- হিসাবে।

শেষ বক্তব্য

পৃথিবীতে এমন অনেক জিনিস আছে যেগুলো আমরা জানি না জানার চেষ্টাও হয়তো করি না। কিন্তু অনেক জিনিস আছে যেগুলো আমাদের জানার আগ্রহ জন্মে এবং এগুলো জানা আমাদের উচিত। এ রকমই পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য – জনক জিনিস পৃথিবীতে রয়েছে যে আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আমি আশা করি আমার এই আলোচনা আপনাদের অনেক ভালো লাগবে। আর যদি ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই একটি কমেন্ট করে আমাকে জানাবেন। পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য – জিনিস সম্পর্কে জেনে নিন।