প্রশ্নঃ পুলিশী তদন্ত কি? সাম্প্রতিক সংশোধনী থাকলে তা উল্লেখপূর্বক বিচার পর্যন্ত পুলিশী তদন্তের বিভিন্ন স্তরগুলি সংক্ষেপে বর্ণনা কর।

অথবা, “ফৌজদারী মামলা তদন্তের ব্যাপারে পুলিশকে অসীম ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে।” আলোচনা কর। 

পুলিশী তদন্ত (Police Investigation): ফৌজদারী কার্যবিধির ৪ (এল) ধারায় তদন্তের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে যে, সাক্ষ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে এই কার্যবিধির আওতায় পুলিশ অফিসার কিংবা ম্যাজিষ্ট্রেট ব্যতীত অন্য কোন ব্যক্তি কর্তৃক (যে ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক ক্ষমতা প্রদত্ত হয়) কার্যক্রম গ্রহণ করাকে তদন্ত বলে। কাজেই কোন অপরাধ সংঘটন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের জন্য পুলিশ কর্তৃক গৃহীত কার্যক্রমকে পুলিশী তদন্ত বলে৷

পুলিশী তদন্তের বিভিন্ন স্তর:

১. প্রাথমিক সংবাদঃ আদালত গ্রাহ্য বা আমলযোগ্য অপরাধ সংঘটন সম্পর্কে থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসারের নিকট মৌখিক সংবাদ দেয়া হলে তিনি তা লিপিবদ্ধ করবেন এবং সংবাদদাতাকে পড়ে শোনানোর পর তার স্বাক্ষর নিবেন। এর সারমর্ম একটি নির্ধারিত ফরমে লিপিবদ্ধ করবেন। লিখিত সংবাদও যথারীতি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করবেন। একে ১৫৪ ধারা অনুযায়ী এজাহার বা প্রাথমিক তথ্য বিবরণী বলা হয়।

২. তদন্তঃ আমলযোগ্য অপরাধের (Cognizable offence) সংবাদ পাবার পর পুলিশ কর্মকর্তা ম্যাজিষ্ট্রেটের নির্দেশ ছাড়াই তদন্ত করতে পারেন। গুরুতর অপরাধের খবর পেলে এজাহার ব্যতীতই পুলিশ কর্মকর্তা তদন্তকার্য শুরু করতে পারেন। (১৫৬ ধারা)

আমল অযোগ্য অপরাধের (Non cognizable offence) ক্ষেত্রে প্রাথমিক সংবাদ পাবার পর ম্যাজিষ্ট্রেটের নির্দেশ ব্যতীত পুলিশ কর্মকর্তা তদন্ত কার্য শুরু করতে পারেন না। সেজন্য এ ধরনের অপরাধের সংবাদ সাধারণ ডায়েরীতে লিপিবদ্ধ করে সংশ্লিষ্ট সংবাদদাতাকে ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট যাবার জন্য পুলিশ কর্মকর্তা পরামর্শ দিবেন। (১৫৫ ধারা)

৩. সন্দেহঃ সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তার নিকট যদি প্রতীয়মান হয় যে, প্রাথমিক সংবাদের ভিত্তিতে তদন্ত করার মত পর্যাপ্ত কারণ নেই, তবে তিনি তদন্ত নাও করতে পারেন (১৫৭ বি ধারা) তবে এ সম্পর্কে কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট রিপোর্ট দিবেন।

৪. স্বাক্ষী তলবঃ তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তার নিকট যদি প্রতীয়মান হয় যে, কোন বিশেষ ব্যক্তির উপস্থিতি প্রয়োজন, তাহলে তিনি লিখিতভাবে তাকে নিজ থানায় বা পার্শ্ববর্তী থানায় হাজির হতে বলবেন। (১৬০ ধারা)

৫. সাক্ষ্য গ্রহণঃ অপরাধ সংঘটন সম্পর্কে অবগত আছেন এরূপ যে কোন ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহণ করার ক্ষমতা তদন্তকারী অফিসারের রয়েছে। তদন্তকারী অফিসারের সকল প্রশ্নের জবাব দিতে এরূপ ব্যক্তি বাধ্য থাকলেও তাকে কোন ফৌজদারী অপরাধ বা সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের ব্যাপারে জড়িত করতে পারে সেরূপ প্রশ্নের জবাব দিতে সে ব্যক্তি বাধ্য থাকে না। (১৬১ ধারা) পুলিশের নিকট প্রদত্ত জবানবন্দীতে সাক্ষীর স্বাক্ষরদানের প্রয়োজন নেই।

৬. তল্লাশীঃ অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট কোন বস্তু উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনবোধে যেকোন স্থানে তল্লাশী করা যায়। তবে এর কারণ যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ করতে হবে। (১৬৫ ধারা) নিজ থানার এলাকার বাইরে তল্লাশীর প্রয়োজন হলে তদন্তকারী অফিসার সেই থানার পুলিশ অফিসারকে তল্লাশীর জন্য অনুরোধ করতে পারেন। তবে পরিস্থিতি জরুরী মনে হলে এক থানার পুলিশ অফিসার অন্য থানার এলাকায়ও তল্লাশী করতে পারেন। (১৬৬ ধারা)

৭. রিপোর্টঃ ২৪ ঘন্টার মধ্যে তদন্ত শেষ করা না হলে গ্রেফতারকৃত আসামীকে ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট প্রেরণ করতে হবে এবং যথাসম্ভব শীঘ্র তদন্তকার্য সম্পন্ন করতে হবে। তদন্তে অপরাধ প্রমাণিত না হলে এবং সাক্ষ্য প্রমাণ না পাওয়া গেলে তদন্তকারী অফিসার চূড়ান্ত রিপোর্ট (Final Report) দাখিল করবেন। তদন্তে অপরাধ প্রমাণিত হলে অভিযোগপত্র (Charge sheet) দাখিল করবেন। এর ভিত্তিতে ম্যাজিষ্ট্রেট বিচার কার্য এবং সাক্ষ্য শুরু করবেন।

কাজেই দেখা যায় যে, ফৌজদারী বিচারের পূর্ব পর্যন্ত সকল কিছুই পুলিশী তদন্তের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে এবং পুলিশ রিপোর্ট এর ভিত্তিতে আদালত বিচার কার্য করে থাকেন।