পিএন স্কুল – সরকারি প্রমথনাথ বালিকা বিদ্যালয় ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যার অবদানে এই পিএন স্কুল – সরকারি প্রমথনাথ বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অনেকেই তার নাম জানেন না। তাই পিএন স্কুল – সরকারি প্রমথনাথ বালিকা বিদ্যালয় সম্পর্কে যারা জানতে চান আমার পোস্টটি তাদের জন্য।

আমি পিএন স্কুল – সরকারি প্রমথনাথ বালিকা বিদ্যালয় সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।পিএন স্কুল – সরকারি প্রমথনাথ বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় থেকে শেষ পর্যন্ত যথাযথ আলোচনা করেছি।

পোস্ট সূচিপত্রঃ পিএন স্কুল – সরকারি প্রমথনাথ বালিকা বিদ্যালয়

পিএন স্কুল – সরকারি প্রমথনাথ বালিকা বিদ্যালয়

পিএন স্কুল রাজশাহীর প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত অতি প্রাচীন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পিএন স্কুলটি স্থানীয়ভাবে পি এন গার্লস নামেও পরিচিত। প্রমথ নাথ বা পি এন স্কুল রাজশাহীর বিখ্যাত ও প্রাচীন স্কুল। প্রাচীন এই বিদ্যালয়টি রাজশাহীর বিখ্যাত সুফি সাধক রূপোশ রহমাতুল্লাহ এর স্মৃতি বহন করে আছে। রাজশাহীতে যতগুলো প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে  পিএন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি সেগুলোর মধ্যে অন্যতম।

এই বিদ্যালয়টি ১৮৬৮ সালে অর্থাৎ প্রায় দেড়শ শত বছর পূর্বে নাটোরের দীঘা প্রতিয়ার রাজা প্রমথ নাথ এই বিদ্যালয়ের জন্য ৬হাজার রুপি দান করেছিলেন। প্রমথ নাথের অর্থায়নের রামপুর বোয়ালিয়ার কয়েকজন শিক্ষা প্রেমীর সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এই বিদ্যালয়টি।আর প্রমথনাথ এর নাম অনুসারে এই স্কুলের নামকরণ করা হয়, প্রমথ এর পি এবং নাথের এন নিয়ে পি এর নামকরণ করা হয়।

বাংলাদেশের যত বড় এবং প্রাচীন বিদ্যালয় রয়েছে পি এন তাদের মধ্যে অন্যতম। এই পি এন বা প্রমথনাথ বিদ্যালয়ের নামকরণ একটি ভিন্ন আঙ্গিকে করা হয়েছিল। এই বিদ্যালয়ের নামকরণ ব্রিটিশরা করেছিলেন প্রমথনাথ এর নাম থেকেই। এই বিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয় প্রমথ নাথ এর নামের প্রথম অক্ষর পি এবং নাথ এর  এন নিয়ে পি এ্ন নামকরণ করা হয়।১৯২৮ সাল থেকে এই বিদ্যালয়ে কে মাধ্যমিক বিদ্যালয় করা হয়।

কারণ ১৯২৮ সালের আগে এই বিদ্যালয় নিম্ন মাধ্যমিক ছিল। ১৯২৮ সালে মাধ্যমিকে রূপান্তর করা হয়। আর ১৯২৮ সাল থেকে এই বিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয় বিএন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। দীঘা প্রতিয়ার রাজা প্রসন্ন নাথ রায়ের পালকপুত্র ছিলেন এই রাজা প্রমথনাথ। শুধু এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা জন্য ৬০০০ রুপি দান করেছিলেন তা নয় তিনি বিদ্যালয়ের খরচ মেটাতে বাৎসরিক সরকারি “প্রমিসরি নোট” ও দান করেছিলেন।

প্রমথ নাথের পরিচিতি

প্রমথনাথ ছিলেন নাটোরের দীঘা পতিয়ার রাজা প্রসন্ন নাথের দত্তপুত্র। প্রমথ নাথের  আবার এক মেয়ে ও ৪ ছেলে ছিল। তাদের নাম ছিল -রাজকন্যা ইন্দ্রপ্রভা, রাজপুত্র  প্রমদা নাথ, বসন্ত কুমার, শরৎকুমার ও হেমন্তকুমার। প্রমথ নাথের বড় ছেলে প্রমদা নাথ ও এই বিদ্যালয়  প্রতিষ্ঠায় রুপিদান করেছিলেন। এক কথায় নাটোরে দীঘা প্রতিয়ার রাজ পরিবার এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য দান করেছিলেন বিশাল তহবিল। রাজ পরিবারের এই অবদানের জন্য এই বিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয় প্রমথনাথ বালিকা বিদ্যালয়।

যাদের জমিতে এই বিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়

এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হতে  যাদের জমি ছিল তারা হলেন – আশালতা দেবী, প্রয়াত কালিদাস,  শ্রী কালিদাস,  শ্রী গঙ্গা মনি দাস্য, গনেশ রাই সিং, প্রয়াত হরিচরণ রায়, কমলাকান্তের পুত্র শ্রী বৈদ্যনাথ চৌধুরী ও হরিলাল সাহার পুত্র বজেন্দ্র লাল সাহা। তবে এদের কাছ থেকে জমি কিনে নেওয়া হয়েছিল। এইসব ব্যক্তিগণ বিদ্যালয়ের জন্য জমি দান করেননি। যথাযোগ্য মূল্য দিয়ে তাদের কাছ থেকে জমি কিনে নেওয়া হয়েছিল।

মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে রূপান্তর

১৯২৮ সালে পি এন বিদ্যালয়টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিণত হয়। এরপর বিদ্যালয়টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিণত হওয়ার পর এই বিদ্যালয়ের দায়িত্ব প্রদান করা হয় দীঘা প্রতিয়ার রাজার কাছে। আর বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য দিঘাপতিয়া রাজার কাছে বিদ্যালয়ের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়।

পরবর্তীতে প্রমথ নাথের পুত্র বসন্ত কুমার বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য একটি কোম্পানির কাগজ দেন যার মূল্য ছিল ১০২০০। তার দেওয়া এই টাকায় একটি ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে প্রমথ নাথ এর ছোট ভাই হেমন্ত কুমার দশ হাজার রুপী ব্যায়ে একটি অফিস ভবন নির্মাণ করেছিলেন।

দেশ বিভাগের আগে এই পি এন স্কুল নাটোরের দীঘা প্রতিয়ার রাজ পরিবার দ্বারা পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হতো। ১৯৪৭ সালের ৩০ শে মার্চ দেশ বিভাগের পর এই বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য একটি নতুন সম্প্রদায় গঠন করা হয়। এরপর থেকে রাজশাহী জেলার ম্যাজিস্ট্রেট পদমর্যাদা বলে বিদ্যালয়ের দায়িত্ব পান।

১৯৬০ সালে এই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হয়। এই জাতীয়করণের পর থেকে বিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয় সরকারি পি এন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। দেশ বিভাগের পর অর্থাৎ ১৯৪৭  সালের পর স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে যার কারণে সাত ৭ হাজার ৯০ টাকা ব্যয়ে একটি নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়।

১৯৬০ সালে সরকারি করন করার পর পি এন শব্দটির আগে সরকারী শব্দটি যোগ করা হয়। ১৯৯১ সাল থেকে এই বিদ্যালয়ে দুইটি শিফট চালু রাখা হয়। প্রভাতী শাখা ও দিবা শাখা। প্রভাতী শাখা শুরু হয় সকাল সাতটা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত এবং দিবা  শাখা শুরু হয় দুপুর ১২ টা থেকে বিকেল পাঁচ ৫ টা পর্যন্ত। তৃতীয় শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত চারটি শাখায় বিভক্ত করা হয়। যেমন – ক, খ, গ ও ঘ  প্রভাতী শাখা।

এরপর বিদ্যালয়ে একটি ছাত্রী আবাসিক হলের ব্যবস্থা করা হয় যেখানে ৩২ জন ছাত্রী থাকতে পারে। ১৯৬০ সালে সরকারিকরণ করার পর থেকে এ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় যার অবদান সবচেয়ে বেশি তার নাম আড়ালে চলে যায়। যার কারণে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সহ শহরের অধিকাংশ লোক এই বিদ্যালয় এর প্রতিষ্ঠাতার নাম জানতেন না।

২০২২ সালের সরকারি নির্দেশনায় এই বিদ্যালয় এর নাম পিএন থেকে সরকারি প্রমথনাথ বালিকা বিদ্যালয় নামকরণ করা হয়। এর ফলে ১৫৪ বছর পরে প্রতিষ্ঠাতার নাম সামনে এসেছে।২০২২ সালের ৪ এপ্রিল থেকে এই বিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয় সরকারি প্রমদনাথ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। আর এই ২০২২ সালের ৪ এপ্রিল থেকেই স্কুলের সাইনবোর্ড, সিল, প্যাড এমনকি প্রয়োজনীয় সকল কিছুতেই এই নাম যোগ করা হয়।

এই সরকারি প্রমথনাথ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি ২০২২ সালের ২১ শে জুন মঙ্গলবার দেশ সেরা স্কুলের পুরস্কার লাভ করে। ২০২২ সালের ২১/ জুন রাজধানী ঢাকার আন্তর্জাতিক মিলনায়তনে শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের দেশ সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা লাভ করে। বর্তমানে সবার কাছে এই বিদ্যালয়টি সবচেয়ে জনপ্রিয়।

রাজশাহী সেরা ১০টি স্কুল

    • সরকারি পি এন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়

 

    • রাজশাহী গভর্মেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল

 

    • রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল

 

    • রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ

 

    • রাজশাহী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়

 

    • রাজশাহী ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড হাই স্কুল

 

    • হিরোইন সরকারি হাই স্কুল

 

    • সারদা পাইলট গভার্নমেন্ট হাই স্কুল

 

    • রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল

 

  • মোহনপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়

শেষ কথা

রাজশাহী প্রমথনাথ বিদ্যালয়টি সবার জনপ্রিয় একটি বিদ্যালয়। এত বছরের প্রাচীন বিদ্যালয় হলেও এই বিদ্যালয়টি সবার মন কেড়ে নিয়েছে। বর্তমানে সবার প্রাণের বিদ্যালয়ে হলো পি এল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। আমার পোস্টটি যদি তোমাদের উপকারে আসে তাহলে অবশ্যই আমাকে একটি কমেন্ট করে জানাবে এবং বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করবে।