সূচনা: মধ্যযুগের ইউরােপে পােপতন্ত্রের ইতিহাসে এক আলােড়ন সৃষ্টিকারী চরিত্র হলেন প্রথম গ্রেগরি (৫৯০-৬০৪ খ্রি. পর্যন্ত গােপ পদে আসীন ছিলেন)। তিনি গ্রেগরি দ্য গ্রেট নামেও পরিচিত ছিলেন। পােপতন্ত্রের বিকাশে তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য মধ্যযুগের পােপদের মধ্যে তিনি শ্রেষ্ঠ বলে বন্দিত হন।
[1] মানবমুক্তির আদর্শ প্রতিষ্ঠায়: পােপতন্ত্রের ইতিহাসে প্রথম গ্রেগরি একমাত্র পােপ যিনি সর্বপ্রথম মানবমুক্তিকেই জীবনের একমাত্র ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেন। এর দ্বারা তিনি পােপত্ত্রকে সকলের কাছে গ্রহণযােগ্য করে তােলার উদ্যোগ নেন। তিনি মানুষের আধ্যাত্মিক উন্নতির বিধান দেন।
[2] পোপের সার্বিক ক্ষমতা প্রতিষ্ঠায়: পােপ প্রথম গ্রেগরি যাজক বা গৃহী উভয়কে পােপের অনুশাসন মেনে চলার কথা বলেন। এই অনুশাসন বা নির্দেশ অগ্রাহ্য করলে তাদের সমাজচ্যুত হতে হবে বলে তিনি প্রচার করেন। তিনিই প্রথম এই ধারণার জন্ম দেন যে রােমান চার্চ খ্রিস্টান সমাজের কাছে ধর্মগুরু পােপই হলেন লৌকিক ও আধ্যাত্মিক জীবনের একমাত্র অবলম্বন।
[3] চার্চের ক্রমােন্নতিতে: প্রথম গ্রেগরি চার্চের বিভিন্ন পদের শ্রেণিবিভাগ করেন। তিনি যােগ্যতা অনুসারে চার্চের বিভিন্ন পদাধিকারীদের নিয়ােগ ও দায়িত্ব অর্পণ করেন। এভাবে চার্চ সংগঠনে পােপ, আর্চ বিশপ, বিশপ ইত্যাদি স্তরবিভাগ সুপ্রতিষ্ঠিত হয়।
[4] খ্রিস্টান সমাজের ঐক্য গঠনে: প্রথম গ্রেগরি সর্বপ্রথম খ্রিস্টান সমাজকে ‘বিশ্ব খ্রিস্টীয় সমাজ আখ্যায় ভূষিত করেন। তিনি তিনি বলেন যে, একমাত্র পােপই যাজকদের সাহায্যে খ্রিস্টান সমাজকে নিয়ন্ত্রণের অধিকারী। পােপের এই প্রচেষ্টার ফলশ্রুতি হিসেবে সমস্ত খ্রিস্টান সমাজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল।
[5] খ্রিস্টধর্মের প্রতিষ্ঠা ও প্রসারে: প্রথম গ্রেগরির অসামান্য প্রচেষ্টার ফলে ভিসিগথদের চার্চ অ্যারিয়ানধর্মের প্রভাবমুক্ত হয়। তার উদ্যোগেই ইটালির বিধর্মী লােম্বার্ডরা খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করে। এ ছাড়াও তার প্রতিনিধি হিসেবে সেন্ট অগাস্টাইন পেগান ইংল্যান্ডকে খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত করেন।
পােপতন্ত্রের ক্ষমতা বিস্তারে পােপ তৃতীয় ইনােসেন্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। ইনােসেন্ট বিশ্বাস করতেন, কেবলমাত্র রােমান চার্চ মানুষের পবিত্র দায়িত্ব পালনে সক্ষম।
[1] স্বাধীন রাজ্য গঠনের উদ্যোগ: তৃতীয় ইনােসেন্ট মনে করতেন যে, পােপের সর্বময় কর্তৃত্বকে বাস্তবায়িত করতে গেলে তার শাসনাধীন এক স্বাধীন রাজ্য দরকার। তাই তিনি সর্বপ্রথম মধ্য ইটালির ওপর পােপের নিরঙ্কুশ ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার কাজে আত্মনিয়ােগ করেন।
[2] অন্যান্য উদ্যোগ: [i] জার্মানির রাজপদ ও পশ্চিম রােমান সাম্রাজ্যের সম্রাটপদের মনােনয়ন বিষয়ক সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে ইনােসেন্ট তিনটি নীতি নেন। প্রথমত, জার্মান রাজপদের জন্য উত্তরাধিকারের পরিবর্তে নির্বাচনকে অগ্রাধিকার দেন। দ্বিতীয়ত, পােপের নিরাপত্তার স্বার্থে সিসিলিও জার্মানিকে আলাদা রাখার কথা ঘােষণা করেন। তৃতীয়ত, জার্মানির সিংহাসনে আপন অনুগত ব্যক্তিকে বসানাের উদ্যোগ নেন। [ii] ১২০১ খ্রিস্টাব্দে ব্রান্সউইকের ডিউক অটো (চতুর্থ অটো) কর্তৃক প্রদত্ত যাবতীয় সুযােগসুবিধা দ্বিতীয় ফ্রেডারিক পােপ তৃতীয় ইনােসেন্টকে দিতে রাজি হন। বিনিময়ে পােপ ইনােসেন্ট চতুর্থ অটোর পরিবর্তে দ্বিতীয় ফ্রেডারিককে জার্মানির রাজা বলে স্বীকৃতি দেন। [iii] তিনি চতুর্থ কুসেডের আহ্বান জানিয়ে পােপতন্ত্রের মর্যাদা বৃদ্ধির চেষ্টা করেন।
Leave a comment