সূচনা: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ভারতবর্ষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীন পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। পাকিস্তানের জাতির জনক মহম্মদ আলি জিন্নার নেতৃত্বে স্বাধীন পাকিস্তানের রাজনৈতিক কাঠামাে গড়ে ওঠে।

[1] কেন্দ্রীয় আইনসভা: স্বাধীন পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় আইনসভায় দুটি কক্ষ রয়েছে- একটি উচ্চকক্ষ এবং অন্যটি নিম্নকক্ষ।

  • [i] উচ্চকক্ষের নাম হল সিনেট। সিনেটের আসনসংখ্যা ১০০। এর মধ্যে ৮৮ জন চারটি প্রদেশ থেকে এবং অবশিষ্ট ১২ জন ইসলামাবাদ ও উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চল থেকে নির্বাচিত হন। সিনেটে ২০ শতাংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হয়।

  • [ii] নিম্নকক্ষের নাম হল জাতীয় সভা। জাতীয় সভার আসনসংখ্যা ৩৪২। এর মধ্যে মহিলারা অন্তত ৬০টি আসনে এবং অমুসলিমরা ১০টি আসনে নির্বাচিত হতে পারে।

[2] রাষ্ট্রপতি: রাষ্ট্রপতি হলেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রপ্রধান।

  • [ii] রাষ্ট্রপতি হলেন পাকিস্তানের নিয়মতান্ত্রিক শাসক। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে তিনি কার্য পরিচালনা করেন। তবে তিনি এককভাবে জাতীয় সভাকে স্থগিত করতে পারেন।

[3] প্রধানমন্ত্রী: পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধান হলেন প্রধানমন্ত্রী। তার কাজে সহায়তা করে বিভিন্ন মন্ত্রীদের নিয়ে গঠিত একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় মন্ত্রী পরিষদ। প্রধানমন্ত্রীই হলেন পাকিস্তানের প্রকৃত শাসক। তবে জিয়া-উল-হক পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি থাকাকালে ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে সংবিধান সংশােধনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির হাতে চরম ক্ষমতা দেওয়া হয়। এর দ্বারা বিশেষ পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীকে পদচ্যুত করার ক্ষমতা পান।

[4] সামরিক আধিপত্য: পাকিস্তানের রাজনৈতিক কাঠামােয় সেখানকার সামরিক বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পাকিস্তানের বিভিন্ন সেনাপ্রধান পরবর্তীকালে সেখানকার রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন। সাম্প্রতিককালে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান পারভেজ মুশারফ কোনাে নির্বাচনে জয়লাভ না করেও ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন এবং তিনি দীর্ঘদিন সরকার এবং সামরিক বাহিনীর প্রধান হিসেবে দেশ শাসন করেছেন।

[5] মিত্ৰতাপূর্ণ বিদেশনীতি: মহম্মদ আলি জিন্না পাকিস্তানের বিদেশনীতির ক্ষেত্রে মিত্ৰতাপূর্ণ নীতি গ্রহণ করেন। তাঁর নীতির ভিত্তিতে পরবর্তীকালে পাকিস্তান সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ বৈদেশিক সম্পর্কের কথা ঘােষণা করেছে। এই উদ্দেশ্যে পাকিস্তান শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচটি নীতি অনুসরণ করে। বিশ্বে মৈত্রী ও সহযােগিতার প্রসার ঘটাতে পাকিস্তান সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ, অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কনফারেন্স, সার্ক, অর্থনৈতিক সহযােগিতা সংস্থা (ECO) প্রভৃতি সংস্থার সদস্যপদ গ্রহণ করেছে।

[6] আন্তর্জাতিক সম্পর্ক: অর্থনীতি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, শিক্ষা প্রভৃতি বিষয়ে উন্নতি ঘটানাের উদ্দেশ্যে আমেরিকা, চিন, রাশিয়া, জাপান প্রভৃতি দেশের সঙ্গে পাকিস্তান সুসম্পর্ক রক্ষা করে চলে। এ ছাড়া পাকিস্তান ‘ভ্রাতৃপ্রতিম ইসলামি রাষ্ট্র’ তুরস্ক, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি প্রভৃতি দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষা করে চলে।

[7] ইসলামি শাসন: পাকিস্তানের রাষ্ট্রধর্ম হল ইসলাম। সংবিধানের প্রস্তাবনায় আল্লার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা হয়েছে। সংবিধানে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি অবশ্যই মুসলিম হবেন। পাকিস্তানের জাতীয় পতাকায় অঙ্কিত আংশিক চাদ এবং একটি তারকা হল ইসলামের প্রতীক। এই প্রতীক ব্যবহারের মাধ্যমে ইসলাম ধর্মের প্রতি পাকিস্তান গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছে। এভাবে পাকিস্তান একটি ইসলামি প্রজাতন্ত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।

উপসংহার: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই পাকিস্তানে গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য বারবার ব্যাহত হয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, গুপ্তহত্যা, সামরিক অভ্যুত্থান প্রভৃতি ঘটনা পাকিস্তানের রাজনীতিতে নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়।