হুগলি নদীর উভয় তীরে উত্তরে কল্যাণী-বাঁশবেড়িয়া থেকে দক্ষিণে বজবজ-উলুবেড়িয়ার মধ্যে অধিকাংশ পাটকল অবস্থিত। এত স্বল্প পরিসরে পাট শিল্পের এত ঘন সন্নিবেশ পৃথিবীতে অন্য কোথাও লক্ষ করা যায় না। পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত মােট পাটকলের সংখ্যা 61টি (ভারতে 78টি)। এই রাজ্যে পাট শিল্পের প্রধান কেন্দ্রগুলি হলㅡ

  • [1] টিটাগড় (৩টি), 

  • [2] জগদ্দল (৪টি), 

  • [3] হাওড়া (৪টি), 

  • [4] বজবজ (6টি), 

  • [5] ভদ্রেশ্বর (6টি)।

এ ছাড়া রিষড়া, শ্রীরামপুর, নৈহাটি, কাকিনাড়া, শ্যামনগর, বরানগর, বিড়লাপুর, বালি, বৈদ্যবাটি, বাঁশবেড়িয়া, উলুবেড়িয়া প্রভৃতি।

পশ্চিমবঙ্গে হুগলি নদীর উভয় তীরে পাট শিল্পের একদেশী ভবনের কারণগুলি হল

[1] কাঁচামালের সহজলভ্যতা : দেশের প্রায় 66% পাট পশ্চিমবঙ্গের উর্বর পলিমাটিতে উৎপাদন করা হয়। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা, হুগলি, বর্ধমান, মুরশিদাবাদ, মালদা প্রভৃতি জেলায় প্রচুর পাট চাষ হয়। ফলে এখানকার পাটকলগুলি সুলভে কাঁচা পাট পায়।

[2] জ্বালানির প্রাপ্যতা : পাটকলে ব্যবহারের জন্য প্রয়ােজনীয় কয়লা কলকাতা থেকে 190 কিমি দূরে অবস্থিত রানিগঞ্জ থেকে নিয়ে আসা হয়। এ ছাড়া, দামােদর ও ময়ূরাক্ষী প্রকল্প ও রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদ এবং CESC (Calcutta Electric Supply Corporation) থেকেও বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

[3] কলকাতা বন্দরের সুবিধা : কলকাতা বন্দরের মাধ্যমে পাট শিল্পজাত দ্রব্যের রপ্তানি ও বিদেশ থেকে যন্ত্রপাতি আমদানির সুবিধা আছে। এই বন্দরের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও অসম থেকে জলপথে কাঁচা পাটও নিয়ে আসা হয়।

[4] উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা : পূর্ব রেলপথ, গ্র্যান্ড ট্র্যাঙ্ক রােড (NH-2), কলকাতা-অসম সড়ক পথ, কলকাতা বিমানবন্দর এবং গঙ্গাব্ৰত্মপুত্র নদীপথের মাধ্যমে হুগলি নদীর উভয় তীরে অবস্থিত পাটকলগুলিতে খুব সহজে ও দ্রুত কাঁচামাল সরবরাহ ও উৎপাদিত দ্রব্য বাজারজাত করা যায়।

[5] সুলভ শ্রমিক : পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ওডিশা ও অসম থেকে প্রচুর সুলভ, অভিজ্ঞ ও দক্ষ শ্রমিক পাওয়া যায়

[6] চাহিদা : বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে পাটজাত পণ্যের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। পাটজাত পণ্যের নতুনভাবে সংস্করণ করায় পশ্চিমবঙ্গের পাটজাত পণ্যের চাহিদা বিদেশেও বৃদ্ধি পেয়েছে।

[7] মূলধনের প্রাচুর্য : রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংক, জীবনবিমা নিগম এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে ঋণ পাওয়ার সুবিধা আছে।