পর্যটন বলতে বিনােদন, অবসর সময়ে অথবা ব্যাবসায়ের উদ্দেশ্যে এক স্থান থেকে অন্য স্থান কিংবা এক দেশ থেকে অন্য দেশে ভ্রমণ করাকে বােঝায়। বর্তমানে বিভিন্ন দেশে পর্যটন একটি অর্থনৈতিক কার্যাবলি বা শিল্পরূপে স্বীকৃতি পেয়েছে। আবার যিনি আমােদপ্রমােদ বা বিনােদনের উদ্দেশ্যে অন্যত্র ভ্রমণ করেন তিনি হলেন পর্যটক। পর্যটনের সাথে জড়িত পরিসেবা ক্ষেত্রগুলি হল-ট্যুরিস্ট গাইড, পর্যটন সংস্থা, হােটেল ও রেস্টুরেন্ট প্রভৃতি।

দেশের বাইরে বা দেশের সীমা পেরিয়ে অন্যদেশে যাওয়া অথবা দেশের সীমার মধ্যে বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণের ওপর নির্ভর করে পর্যটনকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়一

[1] আন্তর্জাতিক পর্যটন

[2] দেশীয় পর্যটন।

  • স্থানীয় ভ্রমণ

  • আঞ্চলিক ভ্রমণ

  • জাতীয় স্তরের ভ্রমণ

এ ছাড়া পর্যটনের স্থান, উদ্দেশ্য, প্রকৃতি প্রভৃতি অনুসারে এর আরও কিছু প্রকারভেদ লক্ষ করা যায়। যেমন—[1] সুস্থিতি পর্যটন (Sustainable Tourism), [2] বাস্তু পর্যটন (Ecotourism), [3] শিক্ষাগত পর্যটন (Educational Tourism), [4] চিকিৎসাগত পর্যটন (Medical Tourism), [5] সৃজনশীল পর্যটন (Creative Tourism), [6] খেলাভিত্তিক পর্যটন (Sports Tourism), [7] বাণিজ্যভিত্তিক পর্যটন (Business Tourism) ইত্যাদি।

বিভিন্ন প্রাকৃতিক এবং আর্থসামাজিক বিষয়গুলি কোনাে একটি অঞ্চলের পর্যটনশিল্প গড়ে ওঠার অন্যতম কারণ।

(১) প্রাকৃতিক কারণ : যেসব প্রাকৃতিক কারণগুলি পর্যটনশিল্প গড়ে তুলতে সাহায্য করে সেগুলি হল一

  • আবহাওয়া ও জলবায়ুগত বৈচিত্র্য : আবহাওয়া ও জলবায়ুগত বৈচিত্র্য পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলতে সাহায্য করে। মনােরম জলবায়ুযুক্ত অঞ্চলে ভ্রমণের জন্য অধিক মানুষের সমাগম ঘটে। যেমনসুইটজারল্যান্ড তার মনােরম জলাবায়ুর জন্য পর্যটন শিল্পে উন্নত।

  • ভূমিরূপগত বৈচিত্র্য : ভূমিরূপগত বৈচিত্র্যও কোনাে জায়গায় পর্যটনশিল্প গড়ে তুলতে সাহায্য করে। ভারতের হিমালয় পর্বত অঞ্চলের বেশিরভাগ স্থানে ভূমিরূপের বিভিন্ন বৈচিত্র্যতার কারণে পর্যটনশিল্প গড়ে উঠেছে।

  • সমুদ্র, নদী ও হ্রদ তীরবর্তী অঞ্চল : সমুদ্র, নদী এবং হ্রদ তীরবর্তী অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটনশিল্প গড়ে ওঠার অন্যতম কারণ। ভারতের গােয়াতে একারণেই পর্যটনশিল্প বিকাশলাভ করেছে।

(২) আর্থসামাজিক কারণ : আর্থসামাজিক কারণগুলি হল一

  • ঐতিহাসিক কেন্দ্র : পৃথিবীর বহু স্থানের (যেমন- ভারতের আগ্রা) ঐতিহাসিক গুরুত্ব থাকায় সেখানে পর্যটনশিল্প বিকাশলাভ করেছে।

  • ধর্মীয় কারণ : পৃথিবীর বহু স্থান আছে যা ধর্মীয় কারণে অধিক গুরুত্বপূর্ণ (যেমন- ভারতের হরিদ্বার), সেইসব স্থানে ধর্মীয় কারণে পর্যটনশিল্প গড়ে উঠেছে।

  • শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কারণ : শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে উন্নত পীঠস্থানগুলি (যেমন—পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতন) পর্যটনশিল্প বিকাশ লাভ করেছে।

ওপরে উল্লিখিত কারণগুলি পর্যটনশিল্প গড়ে তােলার পটভূমিকা তৈরি করলেও 

  • উন্নত পরিবহণ ও যােগাযােগ ব্যবস্থা, 

  • সরকারি সহযােগিতা, 

  • জল, বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন পরিকাঠামাের উন্নতি এবং 

  • স্থানীয় মানুষের অংশগ্রহণ পর্যটনশিল্প গড়ে তুলতে সাহায্য করে।