শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার মূল্যায়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শিক্ষার্থী কতখানি শিক্ষা লাভ করলো তার পরিমাপ মূল্যায়ন বা পরীক্ষার মাধ্যমেই করা যায়। বর্তমান পরীক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা শিক্ষার্থীর বিকাশে এমন বহু দিক আছে, যার পরিমাপ ঠিক লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে করা সম্ভব হয় না। তাই পরীক্ষা ব্যবস্থা সংস্কারে কোঠারি কমিশন কিছু সুপারিশ করেছে-
(১) নিম্ন প্রাথমিক স্তরে মূল্যায়নের উদ্দেশ্য শিশুদের সাধারণ দক্ষতা, সঠিক অভ্যাস এবং সঠিক আগ্রহ গড়ে উঠছে কি না, বা কতখানি তা পরীক্ষা করা। মূল্যায়ন হবে অভ্যন্তরীণ। ধীর ধী-গতিসম্পন্ন ছাত্র ও দ্রুত ধী-গতিসম্পন্ন ছাত্রের জন্য পৃথক মূল্যায়ন ব্যবস্থা থাকবে।
(২) উচ্চ প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের লিখিত এবং মৌখিক উভয় পরীক্ষা থাকবে। এগুলো হবে অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা। এক্ষেত্রে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা নিজেরা প্রশ্নপত্র বানাবেন।
(৩) প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলির মধ্যে তুলনামূলক পদ্ধতি হিসেবে পারদর্শিতার অভীক্ষা থাকতে পারে, তবে তা বাধ্যতামূলক হবে না।
(৪) মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, দশম শ্রেণির পর প্রথম বহিঃপরীক্ষা গ্রহণ করতে হবে এবং দ্বাদশ শ্রেণি পাঠ শেষে দ্বিতীয় বহিঃপরীক্ষা গ্রহণ করতে হবে।
(৫) কয়েকটি নির্বাচিত বিদ্যালয়কে তাদের নিজেদের ছাত্রদের মূল্যায়নের দায়িত্ব এবং দশম শ্রেণির পর চূড়ান্ত পরীক্ষা গ্রহণের অধিকার দেওয়া উচিত। এর মান হবে স্টেট বোর্ড অব স্কুল এডুকেশন সমান।
(৬) কমিশন বহিঃপরীক্ষাকে উন্নত করার জন্য, প্রশ্ন প্রস্তুতকরণের দক্ষতা বৃদ্ধি, নম্বর দেওয়ার পদ্ধতিকে বিজ্ঞানভিত্তিক করা প্রভৃতির উপর জোর দিয়েছে।
(৭) সর্বস্তরে শিক্ষকদের আধুনিক ও উন্নত মূল্যায়ন ব্যবস্থা সম্বন্ধে ধারণা দেওয়ার জন্য সেমিনার, আলোচনা, ওয়ার্কশপের ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে।
(৮) পরীক্ষার খাতা দেখার জন্য কোনাে অর্থ দেওয়া উচিত নয়।
(৯) নম্বরের পরিবর্তে গ্রেড প্রথা চালু করা উচিত।
(১০) প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলির মধ্যে পারস্পরিক তুলনা করতে জেলায় জেলার স্কুলগুলিতে পারদর্শিতা অভীক্ষা বা Standardised Test নিতে হবে।
(১১) সারাবছর শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা কেমন আয়ত্ত করেছে তার মূল্যায়নের জন্য শিক্ষার্থীদের রাজ্য মূল্যায়ন সংস্থার তৈরি প্রশ্নপত্রের দ্বারা অভীক্ষা নেওয়া যাবে।
(১২) শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের জন্য রাজ্য স্তরে স্টেট বাের্ড অব সেকেন্ডারি এডুকেশন এবং কেন্দ্র স্তরে ন্যাশনাল বোর্ড অব সেকেন্ডারি এডুকেশন বহিঃপরীক্ষা গ্রহণ করবে।
(১৩) বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের মূল্যায়নের জন্য সেন্ট্রাল এগজামিনেশন রিফর্ম ইউনিট থাকবে।
(১৪) UGC, Central Examination Reform Unit নামে একটি বিভাগ খুলবে, যেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে মূল্যায়নের ব্যাপারে সংযোগ রক্ষা করবে।
Leave a comment