আধুনিক সভ্যতার এক অপরিহার্য অঙ্গ হল পরিবহণ ব্যবস্থা। স্থানান্তরযােগ্য দ্রব্যসামগ্রী এবং যাত্রীকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বহন করে নিয়ে যাওয়াকে পরিবহণ বলে। এর সাথে যুক্ত পথ, যানবাহন ও সংশ্লিষ্ট নিয়মকানুনকে একত্রে পরিবহণ ব্যবস্থা বলে। অধ্যাপক মার্শালের মতে, পরিবহণ কেবলমাত্র পণ্যসামগ্রী ও মানুষের স্থানান্তরেরই সাহায্য করে না, বরং মানুষের উন্নত সভ্যতার প্রতিটি পদেক্ষেপে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও দায়িত্ব পালন করে।
যানবাহনের প্রকৃতি ও পরিবহণ পথের অবস্থান অনুযায়ী পরিবহণ ব্যবস্থাকে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায় যথা [1] স্থলপথ, [2] জলপথ, [3] আকাশপথ। এই তিনটি প্রধান ভাগ ছাড়াও আরও দুপ্রকার পরিবহণ ব্যবস্থা বর্তমান, যেমন—[4] নলপথ ও [5] রজ্জুপথ।
[1] স্থলপথ : স্থলভাগে যে পরিবহণ পথ গড়ে ওঠে তাকে স্থলপথ বলে। পথের গঠন অনুযায়ী স্থলপথকে আবার দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন—সড়কপথ ও রেলপথ। সড়কপথে চলে বিভিন্ন ধরনের বাস, লরি, মােটর গাড়ি, রিক্সা, ভ্যান, মােটর সাইকেল, সাইকেল, গােরুর গাড়ি প্রভৃতি। সড়কপথ আবার কয়েকটি ভাগে বিভক্ত যেমন—জাতীয়, রাজ্য, জেলা, গ্রাম্য ও সীমান্ত। যেমন ভূপৃষ্ঠের ওপর দিয়ে চলে রেলগাড়ি। আবার তেমনি ভূপৃষ্ঠের ঠিক নীচে সুড়ঙ্গ পথে চলে পাতাল রেল।
[2] জলপথ : জলরাশির ওপর যে নির্দিষ্ট পথে নৌকো, লঞ্চ, স্টিমার ও জাহাজ চলাচল করে সেই পথকে জলপথ বলে। অবস্থান অনুযায়ী জলপথকে আবার দুটি ভাগে ভাগ করা যায়-
নদী ও খালপথ হল অভ্যন্তরীণ জলপথের অন্তর্গত এবং সমুদ্রপথ হল আন্তর্জাতিক জলপথের অন্তর্গত। নদী ও খালপথে পরিবহণের মাধ্যম হল নৌকা, লঞ্চ ও স্টিমার, বিভিন্ন ধরনের মাঝারি জাহাজ এবং সমুদ্রপথে পরিবহণের মাধ্যম হল মাঝারি ও বড়াে আকৃতির জাহাজ।
[3] আকাশপথ : বায়ুমণ্ডলে যে পথে যানবাহন চলাচল করে সেই পথকে আকাশপথ বলে। আকাশপথ বা বায়ুপথের প্রধান যানবাহনগুলি হল—বিমান, হেলিকপ্টার ও রকেট। আন্তর্জাতিক আকাশপথ দেশের সীমানার বাইরে বিস্তৃত আকাশপথ এবং অভ্যন্তরীণ আকাশপথ হল দেশের সীমানার মধ্যে বিস্তৃত আকাশপথ।
[4] নলপথ : প্রাকৃতিক গ্যাস, খনিজ তেল, জল প্রভৃতি দূরবর্তী স্থান নলপথে পরিবহণ করা হয়। দূরবর্তী দেশে বা স্থানে খনিজ তেল সরবরাহে নলপথের গুরুত্ব অপরিসীম।
[5] রজ্জুপথ : পার্বত্য অঞ্চলে স্বল্প পরিসরের গভীর উপত্যকা পারাপারের জন্য এবং বন্ধুর মালভূমি অঞ্চলে স্বল্প দূরত্বে খনিজ দ্রব্য পরিবহণের জন্য রজ্জুপথ নির্মাণ করা হয়।
Leave a comment