স্কিনারের মত অনুযায়ী, পরিগমন হল এক ধরনের বিকাশ যা পরিবেশগত অবস্থার ব্যাপক তারতম্য থাকলেও মােটামুটিভাবে একইভাবে সংঘটিত হয়। মনােবিদ গেসেলের মতে, স্বকীয় ও অন্তর্জাত বৃদ্ধিই হল পরিণমন।
পরিণমন হল এমন প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে জন্মগত প্রবণতার স্বাভাবিক বিকাশের মধ্য দিয়ে ব্যক্তির আচরণের গুণগত ও পরিমাণগত উভয় ধরনের পরিবর্তন হয়। নীচে পরিণমনের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করা হল一
(১) বিকাশের প্রক্রিয়া: পরিণমন হল একটি বিকাশমূলক প্রক্রিয়া যার দ্বারা ব্যক্তির বৃদ্ধি ঘটে।
(২) সহজাত প্রবণতার ওপর নির্ভরশীল প্রক্রিয়া: পরিণমন প্রক্রিয়া শিশুর সহজাত প্রবণতার ওপর নির্ভরশীল। জন্মসূত্রে প্রাপ্ত সন্তাবনাগুলির বিকাশের ওপর পরিণমন নির্ভর করে।
(৩) স্বাভাবিক প্রক্রিয়া: পরিণমন প্রক্রিয়া শিশুর মধ্যে স্বাভাবিকভাবে ঘটে। এই প্রক্রিয়া শর্তাধীন নয়।
(৪) প্রশিক্ষণনির্ভর নয়: পরিণমন ঘাটার জন্য কোনাে প্রশিক্ষণের প্রয়ােজন নেই। এই প্রক্রিয়া ব্যক্তি বা সমাজের চাহিদা, ইচ্ছা, অবস্থা, পরিস্থিতি কোনাে কিছুর ওপর নির্ভরশীল নয়।
(৫) চাহিদানির্ভর নয়: পরিণমন প্রক্রিয়াটি শিশুর চাহিদার ওপর নির্ভর করে না। এটি সমাজের প্রয়ােজনের সঙ্গে সংগতি রেখেও ঘটে না।
(৬) শারীরিক ক্ষমতা অর্জনে সহায়ক: পরিণমন ব্যক্তির শারীরিক ক্ষমতা অর্জনে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
(৭) সক্রিয়তাভিত্তিক নয়: পরিণমন প্রক্রিয়া সংঘটিত হওয়ার জন্য ব্যক্তির আত্মসক্রিয়তার খুব একটা প্রয়ােজন হয় না।
(৮) জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া নয়: পরিণমন জীবনের একটি বিশেষ পর্যায়ে শুরু হয় এবং একটি বিশেষ পর্যায়ে শেষ হয়।
(৯) জৈবিক বিকাশের প্রক্রিয়া: পরিণমন নির্ভর করে ব্যক্তির দেহের জৈবিক কেন্দ্রগুলির স্বাভাবিক বিকাশের ওপর৷ বাস্তবে দেখা গেছে, ব্যক্তির দেহের জৈবিক কেন্দ্রের বিকাশে কোনাে ব্যাঘাত ঘটলে ব্যক্তির পরিণমন ব্যাহত হয়।
(১০) সর্বজনীন প্রক্রিয়া: দেশ, কালভেদে পরিণমনের পরিবর্তন ঘটে না। বিশ্বের সব শিশুরাই প্রথমে হামাগুড়ি দেয়, পরে দাঁড়াতে শেখে, সবশেষে হাঁটতে শেখে।
ওপরের বৈশিষ্ট্যগুলির পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, পরিপমন হল ব্যক্তির জীবনবিকাশের একটি স্বতন্ত্র প্রক্রিয়া যা তার আচরণের পরিবর্তন ঘটায়। এটি একটি স্বাধীন ও সর্বজনীন প্রক্রিয়া।
Leave a comment