কোনাে দেশে যখন পরিকল্পনা অঞ্চল গড়ে তােলা হয় তখন প্রশাসনের সর্বনিম্ন স্তর থেকে সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত সমগ্র অঞ্চলকে এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সাধারণভাবে তিন ধরনের পরিকল্পনা অঞ্চল চিহ্নিত করা হয়। এগুলি হল- [1] বৃহৎ (Macro), [2] মাঝারি (Meso) এবং [3] ক্ষুদ্র (Micro)।

[1] বৃহৎ পরিকল্পনা অঞ্চল : এটি পরিকল্পনা অঞ্চলের ক্রমবিন্যাসের সর্বোচ্চ স্তর। এই প্রকার পরিকল্পনা অঞ্চল বৃহৎ এলাকা জুড়ে গড়ে তােলা হয়। এই প্রকার পরিকল্পনা জাতীয় স্তরে গড়ে তােলা হয় বলে একে, কেন্দ্রীয় পরিকল্পনাও বলে। ভারতে বৃহৎ পরিকল্পনা তৈরি ও রূপায়ণের জন্য জাতীয় পরিকল্পনা কমিশন গড়ে তােলা হয়েছে। ভারতের একটি বৃহৎ পরিকল্পনা অঞ্চলের উদাহরণ হল -দাক্ষিণাত্য মালভূমি অঞ্চল।

বৈশিষ্ট্য

  • এই প্রকার পরিকল্পনা অল বৃহৎ অঞ্চল জুড়ে গড়ে তােলা হয়।

  • ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থ দপ্তর ও জাতীয় পরিকল্পনা কমিশন এই প্রকার পরিকল্পনা অঞ্চলের ব্যবস্থাপনা করে ও নিয়ন্ত্রণ করে।

  • এই প্রকার পরিকল্পনা দীর্ঘ সময়ের সাপেক্ষে গ্রহণ করা হয়।

  • দীর্ঘমেয়াদি (15 বছরের বেশি সময়ে), মধ্যমেয়াদি (5 থেকে 15 বছরের মধ্যে) এবং স্বল্পমেয়াদি (2 থেকে 15 বছরের মধ্যে) পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।

[2] মাঝারি পরিকল্পনা অঞ্চল : এটি পরিকল্পনা অঞ্চলের ক্রমবিন্যাসের মধ্যবর্তী স্তর। বৃহৎ পরিকল্পনা অঞ্চলের মধ্যে এই ধরনের পরিকল্পনা অঞ্চল গড়ে ওঠে। এর বিস্তৃতি বৃহৎ পরিকল্পনা অঞ্চলের থেকে কম। এটি দুটি বা তার বেশি ক্ষুদ্র অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয়। যেমন—দামােদর ভ্যালি বেসিন।

বৈশিষ্ট্য

  • রাজ্যস্তরে এই প্রকার পরিকল্পনা অঞ্চল গড়ে তােলা হয়।

  • এই প্রকার পরিকল্পনা অঞ্চল রাজ্য পরিকল্পনা কমিশন দ্বারা পরিচালিত হয়।

  • এই প্রকার পরিকল্পনা মধ্য এবং স্বল্পমেয়াদি হয়।

[3] ক্ষুদ্র পরিকল্পনা অঞ্চল : পরিকল্পনা অঞ্চলের ক্রমবিন্যাসের সর্বনিম্ন স্তর। কোনাে একটি নির্দিষ্ট বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে এই প্রকার পরিকল্পনা অঞ্চল গড়ে তােলা হয়। যেমন -জলবিদ্যুৎ শক্তিকে কেন্দ্র করে হিমাচল প্রদেশে ক্ষুদ্র পরিকল্পনা অঞ্চল গড়ে তােলা হয়েছে।

বৈশিষ্ট্য

  • জেলা ব্লক এবং গ্রামস্তরে এই প্রকার পরিকল্পনা গড়ে তােলা হয়।

  • জেলা প্রশাসন, ব্লক প্রশাসন এবং গ্রাম পঞ্চায়েত দ্বারা এই প্রকার পরিকল্পনা অঞ্চল পরিচালিত হয়।

  • নির্দিষ্ট কোনাে একটি বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়।

  • স্থানীয় মানুষের মৌলিক চাহিদা এবং প্রত্যাশা পূরণ করা হয় এই পরিকল্পনার মাধ্যমে।

পরিবেশ ও উন্নয়ন সম্পর্কে বিশ্ব কমিশনের প্রতিবেদনে (Brundtland Report, 1987) স্থিতিশীল বা নিরবচ্ছিন্ন উন্নয়ন সম্পর্কে বলা হয়েছে—স্থিতিশীল উন্নয়ন হল সেই উন্নয়ন যা ভবিষ্যত প্রজন্মের প্রয়ােজন মেটানাের সামর্থ্যের সাথে কোনও আপস না করে বর্তমান প্রজন্মের সব চাহিদা মেটাতে পারে।

সাধারণভাবে স্থিতিশীল বা নিরবচ্ছিন্ন উন্নয়ন হল জনসাধারণের জীবনযাত্রার মানের দীর্ঘকালীন উন্নতি এবং সেই সঙ্গে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা, আবাসন ব্যবস্থা, খাদ্য, নিরাপত্তা প্রভৃতি সুনিশ্চিত করার জন্য প্রয়ােজনীয় দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা বজায় রাখা। এক্ষেত্রে ভবিষ্যতেও সমৃদ্ধির হার অর্জন করা প্রয়ােজন, তা ছাড়া দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের ভাণ্ডার যাতে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য কমে না যায় তা সুনিশ্চিত করা প্রয়ােজন। তবে এই প্রকার ধারণার সাথে পরিবেশের সুরক্ষার বিষয়টিও জড়িত।