‘পয়োমুখম্’ গল্পটির নামকরণ একটি সংস্কৃত বাক্যের অংশ। বাক্যটি ‘বিষকুম্ভং পয়োমুখম্’, অর্থাৎ কলস বিষে পূর্ণ কিন্তু তার মুখে ক্ষীর। যেসব মানুষ অন্তরে বিষপূর্ণ কিন্তু যাদের মুখের বাক্য মধুক্ষরা তাদের প্রতিই এই সংস্কৃত বাক্যটি প্রযুক্ত হয়।

আলোচ্য গল্পের প্রধান চরিত্র কৃষ্ণকান্ত, পেশায় কবিরাজ ও সংসারী মানুষ দুই পুত্র ও স্ত্রীকে নিয়ে তার সংসার। বড়ো ছেলে ভূতনাথকে কবিরাজী শিক্ষা দিয়েছে তার বিবাহ দিয়ে তার প্রতি স্নেহবর্ষণ করে কৃষ্ণকান্ত বাইরে থেকে আর পাঁচজন সংসারী মানুষের মতো স্বাভাবিক আচরণ করে। সে এমন একটা ভান করে যেন পুত্রের একাধিকবার বিবাহ দিয়ে সংসারী করা তার দায়িত্ব ও কর্তব্য। সন্তানের প্রতি সেই দায়িত্বই যেন সে পালন করছে, এই তার ভান।

কিন্তু কৃষ্ণকান্তের বাইরের ব্যবহারটা মুখোস মাত্র, অন্তরে সে অর্থলোলুপ নির্মম এক শয়তান, সামান্য টাকার লোভে শিশু বা কিশোরীর প্রাণহরণ করতে সে বিন্দুমাত্র বিচলিত হয় না। চিকিৎসক হিসাবে মানুষের রোগ দূর করার প্রচেষ্টাই যেখানে তার ব্রত হওয়া উচিত, সেখানে সে অবলীলাক্রমে নির্দ্বিধায় বিষাক্ত ওষুধ প্রয়োগ করেই তার দুই পুত্রবধূকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে। ‘পয়োমুখম্’ গল্পটিতে জগদীশ গুপ্ত নিরাসক্ত মনোভাব নিয়ে উন্মোচিত করেছেন স্নেহের ছদ্মবেশে কৃষ্ণকান্তের বিষপূর্ণ হৃদয়কে।

আলোচ্য গল্পটির সমাপ্তি ঘটেছে ভূতনাথের মন্তব্য, “এ বোঁটার পরমায়ু আছে তাই কলেরায় মরল না, বাবা। পারেন তো নিজেই খেয়ে ফেলুন।” কথাগুলি বলে ওষুধের খলটি পিতার সামনে নামিয়ে রাখল। কৃষ্ণকান্তের সামনে ধরা খল এবং ভূতনাথের তীক্ষ্ণ ব্যঙ্গ কৃষ্ণনান্তের বাইরের ভদ্র নম্র মানবিক বহিরাবরণটুকু নিঃশেষে ছিন্ন করে তার গরলপূর্ণ অন্তরটি প্রকাশ করে দিয়েছে। সেইজন্যই স্বীকার করতে হয় ‘পয়োমুখম্’ নামটি বাস্তবিকই সার্থক একটি ব্যঞ্জনাধর্মী নাম। এই নামটির মধ্য দিয়ে গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র কৃষ্ণকান্তের স্বভাবটি যেমন ফুটেছে তেমনি ভূতনাথের জীবনের মূল ঘটনাকে সার্থকভাবে আভাসিত করেছে।