যে কাব্যকে বীরাঙ্গনার আদর্শ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, সেই ওভিদের ‘হিরােইডস্ এর নায়িকারা ছিল সমাজনিষিদ্ধ ভাবনার শিকার। কিন্তু মধুসূদনের বীরাঙ্গনাদের বেশিরভাগই নিজস্ব জীবনবােধ এবং নীতি-আদর্শের দ্বারা পরিচালিত। জনাও তার ব্যতিক্রম নয়। পার্থের সঙ্গে বন্ধুত্ব উচিত নয়—তা মাহেশ্বর রাজ নীলধ্বজকে বােঝাতে গিয়ে জনা যেভাবে কুন্তী, দ্রৌপদী এবং পার্থের চরিত্রের বিশ্লেষণ করেছেন কুস্তীকে কুলটা, পাঞ্জালীকে ‘ভ্ৰষ্টা এবং পার্থকে পাপাচারী হিসেবে বর্ণনা করেছেন, পাণ্ডবদের বংশমর্যাদা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, তা জনার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিরই প্রতিফলন। স্বামীর প্রতি ক্ষোভ-হতাশা- অভিমানের মধ্যে দিয়ে জনা তার নিজস্বতাকেই প্রতিষ্ঠা করতেই সক্ষম হয়েছেন। কাব্যের শেষে জনা শােক ও দুঃখের হাত থেকে বাঁচার জন্য আত্মবিসর্জনের কথাও ঘােষণা করেছেন। এর প্রেক্ষাপটে শুধু পুত্রশােক নেই, রয়েছে নীলধ্বজের দ্বারা ক্ষত্রিয়ধর্মের অপমানে গ্লানি, রয়েছে নারীর অসহায়তা থেকে মুক্তির বাসনা। এভাবেই নীলধ্বজের প্রতি জনা বিষয়ভাবনায় অনন্য হয়ে উঠেছে।

অনবদ্য বিষয়কে রূপায়ণ করতে গিয়ে মধুসূদন এই পত্ৰকাব্যে বেছে নিয়েছেন তার প্রিয় অমিত্রাক্ষর ছন্দকেই। এই ছন্দকে মধুসূদন “the noblest measure in the language” বলেছেন। নীলধ্বজের প্রতি জনা পত্ৰকবিতায় কখনও প্রতিবাদের উপযােগী তীক্ষ্ণ ভাষা প্রয়ােগে, কখনও হৃদয়বেদনার উচ্ছসিত প্রকাশে এই অমিত্রাক্ষরই হয়ে উঠেছে কবির অবলম্বন। এভাবেই নীলধ্বজের প্রতি জনা’ পত্ৰকবিতায় মধুকবির প্রতিভার সার্থক বিচ্ছুরণ ঘটেছে।

মাইকেল মধুসূদন দত্তের বীরাঙ্গনা কাব্য থেকে সংকলিত নীলধ্বজের প্রতি জনা পত্ৰকাব্যে জনার দৃষ্টিকোণ থেকে নীলধ্বজের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কিছু আভাস আমরা পেয়ে থাকি।

পাণ্ডবদের অশ্বমেধের ঘােড়া আটকানােয় পাণ্ডবদের সঙ্গে প্রবীরের যুদ্ধ হয় এবং যুদ্ধে প্রবীর পরাজিত ও অর্জুন দ্বারা নিহত হন। যুদ্ধের পরে অগ্নির পরামর্শে কৃয়ভক্ত নীলধ্বজ অর্জুনের সঙ্গে সন্ধিস্থাপন করলে পুত্রশােকাকুলা জনা নীলধ্বজকে তীব্র ভাষায় ভৎসনা করেন।

জনা প্রত্যাশা করেছিলেন পুত্রের মৃত্যুর পরে রাজা নীলধ্বজ তার ক্ষত্রিয়ধর্ম অবশ্যই রক্ষা করবেন। কিন্তু পরিবর্তে অর্জুনের মনােরঞ্জনের জন্য অবধারিতভাবেই রাজা নীলধ্বজের নির্দেশে সভায় নর্তকীকে নাচতে দেখা যায়, গায়ককে গান করতে শােনা যায়, আর ভেসে আসে বীণাধ্বনি। অর্থাৎ, প্রতিশােধ গ্রহণের বদলে নীলধ্বজকে দেখা যায় যত্নের সঙ্গে পুত্র- হত্যাকারীকে সেবা করতে। নীলধ্বজের এই কাপুরুষ আচরণে ক্ষত্রিয়ধর্ম লাঞ্ছিত হয়েছে এবং দেশ-দেশান্তরে অগৌরবের বার্তা বহন করে নিয়ে যেতে পারে বলেও জনা মনে করেন।

জনার দৃষ্টিতে নীলধ্বজ কিন্তু এক শ্রদ্ধার আসনেই উপবিষ্ট ছিলেন। জনা কিছুতেই তার বর্তমান আচরণকে মেনে নিতে পারছেন না। তাই স্ত্রী জনার কাছ থেকে ক্ষোভ ও অভিমানের প্রকাশ আর ব্যঙ্গই এই কাব্যাংশে নীলধ্বজের একমাত্র পাওনা।

বীরাঙ্গনা কাব্য’-এর একাদশ পত্র নীলধ্বজের প্রতি জনা’তে পত্রকার জনাই হল মুখ্য চরিত্র। তাঁর চরিত্রের যেসব বৈশিষ্ট্য উজ্জ্বলভাবে প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলি হল :-

প্রতিশােধস্পৃহা: অর্জুনের হাতে প্রবীরের মৃত্যুর পরে পুত্রশােকের আকুলতা সত্ত্বেও জনা তার চোখের জলকে রূপান্তরিত করেছেন ক্রোধের আগুনে—‘ভুলিব এ জ্বালা, এ বিষম জ্বালা, দেব, ভুলিব সত্বরে।’

ক্ষত্রধর্ম: জনা যেহেতু ক্ষত্রিয়কুলবধূ এবং ক্ষত্রিয়কুলবালা, তাই তিনি স্বামীকে বারবার উদ্বুদ্ধ করতে চেয়েছেন পুত্রহন্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের আয়ােজন করার জন্য।

প্রেমিকা সত্তা: জনার আহত প্রেমই তাকে অভিমানী করে তুলেছে- ‘তুমি পতি, ভাগ্যদোষে বাম মম প্রতি।’

বেদ-পুরাণশাস্ত্রে জ্ঞান: জনার আর-একটি গুণ শাস্ত্র বেদ-পুরাণ-ইতিহাস সংক্রান্ত বিষয়ে তাঁর গভীর জ্ঞান। অর্জুনের বংশগরিমার অসারতা প্রমাণ করার জন্য এবং মহাভারত রচয়িতা ব্যাসদেবের চারিত্রিক হীনতা প্রমাণ করার জন্য পাণ্ডব-কৌরব বংশের ইতিহাসকে এবং সত্যবতী পুত্র ব্যাসদেবের নিলজ্জতাকে অনায়াস দক্ষতায় বিবৃত করেন তিনি।

মাতৃসত্তা: প্রতিবাদী চেতনা সত্ত্বেও জনা মূলত জননী। পুত্রের হত্যাকারীর সঙ্গে স্বামী যখন সখ্য স্থাপন করেছেন, তখন অসহায় জনা আর কোনাে পথ খুঁজে না পেয়ে নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়ে বলেছেন—‘ছাড়িব এ পােড়া প্রাণ জাহ্নবীর জলে।’ প্রতিবাদ ও বীরধর্মের অনন্য মিশেলে জনার মাতৃসত্তা এই পত্ৰকাব্যে এক মহাকাব্যিক রূপ পেয়েছে।

বীরাঙ্গনা কাব্য গ্রন্থ থেকে নেওয়া নীলধ্বজের প্রতি জনা শীর্ষক একাদশ পত্রে পুত্রহন্তা পার্থের সঙ্গে সখ্য স্থাপন করায় রাজা নীলধ্বজের প্রতি মহিষী জনার তীব্র ক্ষোভ ও অভিমানকে কবি মধুসূদন এই পত্রকাব্যে প্রকাশ করেছেন।

একমাত্র পুত্র প্রবীরের পরাজয় ও মৃত্যুর পরে অগ্নির পরামর্শে কৃয়ভক্ত নীলধ্বজ অর্জুনের সঙ্গে সন্ধি করেন। জনার কাছে স্বামীর এই আচরণ ছিল একেবারে অপ্রত্যাশিত। প্রাথমিকভাবে রণবাদ্যের শব্দ, হাতি-ঘােড়ার আওয়াজ, রাজপতাকার উড়তে থাকা ইত্যাদি দেখে তিনি বিভ্রান্ত হয়েছিলেন। তার মনে হয়েছিল যে এ হয়তাে মাহেশ্বরীরাজের যুদ্ধের প্রস্তুতি। কিন্তু অচিরেই তিনি বুঝতে পারলেন যে পার্থের আগমনকে স্বাগত জানানাের জন্যই রাজসভায় নর্তকীরা নাচছে, গায়কেরা গান করছে আর বীণাধ্বনি উথলে পড়ছে। জনা এই ঘটনায় লজ্জিত এবং হতবাক হয়ে যান। ব্যথিত জনা নীলধ্বজের আচরণকে তার বুদ্ধিভ্রমের প্রকাশ বলেই মনে করেন।

চরম শত্রুর সঙ্গে নীলধ্বজের বন্ধুত্ব জনার মনে বিস্ময় ও প্রশ্নের জন্ম দেয়। নীলধ্বজের কাপুরুষতার কাহিনি যে জগৎজুড়ে প্রচারিত হবে, সে কথাও স্বামীকে জানাতে ভােলেননি ক্ষুদ্ধ ও বিস্মিত জনা।

‘গুরুজন তুমি’—নীলধ্বজকে এই সন্ত্রম দেখিয়ে কখনও যুক্তি দিয়ে, কখনও আহত চিত্তের বিক্ষোভে আপন বক্তব্যকে জানাতে দ্বিধা করেননি তিনি। মধুসূদন তার এই কাব্যে জনার মধ্য দিয়ে যেন উনবিংশ শতাব্দীর জেগে ওঠা নারীসত্তার প্রতিবাদী রূপকেই ফুটিয়ে তুলেছেন।

প্রথম যৌবনে স্বদেশে থাকাকালীন সংসার চালানাের জন্য কীভাবে লড়াই করতে হয়েছিল গালিলিও-কে, তা গালিলিও প্রবন্ধ অবলম্বনে লেখাে।

‘গালিলিও’ প্রবন্ধ অবলম্বনে ভেনিস রাষ্ট্র এবং পাড়ুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গালিলিও-র আঠারাে বছরের কর্মজীবনের বিবরণ দাও।

দূরবিনের আবিষ্কার ভেনিসনিবাসী গালিলিওর জীবনকে কীভাবে প্রভাবিত করেছিল?

“এখানেই শুরু হল তাঁর প্রকৃত বিজ্ঞানীর জীবন।” -প্রকৃত বিজ্ঞানীর’ সেই জীবন বর্ণনা করাে।

‘গালিলিও’ প্রবন্ধ অবলম্বনে পাড়ুয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গালিলিওর স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের ইতিবৃত্ত বর্ণনা করাে।

স্বদেশে ফেরার পর দেশের ধার্মিক ও শিক্ষিত মানুষদের সঙ্গে কীভাবে গালিলিও সংঘাতে জড়িয়ে পড়লেন, তা গালিলিও প্রবন্ধ অবলম্বনে লেখাে।

“আর এক কারণে তাঁর সব আবিষ্কার ও মতামত শুধু পণ্ডিত মহলে আবদ্ধ রইল না।” -কারণটি বিস্তৃতভাবে পর্যালােচনা করাে।

গালিলিওর শেষ ন’বছরের জীবনকথা গালিলিও’ প্রবন্ধ অবলম্বনে লেখাে।

“তখনকার দিনে ধার্মিক পণ্ডিতেরা এসব বিশ্বাস করতে চাইলেন না।” -ধার্মিক পণ্ডিতরা কী বিশ্বাস করতে চাইলেন না এবং কেন?

“প্রথমে Inquisition রায় দিলেন যে,” -কী রায় দিয়েছিলেন তা প্রসঙ্গ উল্লেখ করে লেখাে।

‘গালিলিও’ প্রবন্ধ অবলম্বন করে কার্ডিনাল বেলারিমিনের পরিচয় দাও।

গালিলিওর পিতৃ-পরিচয় লিপিবদ্ধ করে শিক্ষার্থী গালিলিওর তার্কিক মনােভাবের পরিচয় দাও।

দূরবিন আবিষ্কার করার ফলে ভেনিস কর্তৃপক্ষের নিকট কীভাবে গালিলিওর কদর বেড়ে গিয়েছিল?

স্বদেশে ফিরে এসে দূরবিনে চোখ রেখে গালিলিও কী কী আবিষ্কার করেছিলেন?

“এই সময় ফ্লোরেন্সের এক বন্ধুকে লেখা চিঠির থেকে কয়েক লাইনের সারাংশ উদ্ধৃত হলাে”—চিঠিটি লেখার কারণ বর্ণনা করে চিঠিটির সারাংশ নিজের ভাষায় লেখাে।

“১৬০৯ সালে ঘটল এক নতুন ব্যাপার” -১৬০৯ সালে ঘটা নতুন ব্যাপারটি উল্লেখ করে এই সূত্রে কোন্ ঘটনা গালিলিওকে আমােদ’ দিয়েছিল তা লেখাে।

“১৬১২ সালের মে মাসে তিনি চিঠিতে লিখলেন”—চিঠি লেখার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে চিঠিটির বক্তব্য নিজের ভাষায় লেখাে।

“এই স্বভাবই শেষ জীবনে তার অশেষ দুঃখের কারণ হলাে” -কার কোন্ স্বভাবের কথা বলা হয়েছে? সেই স্বভাব তার শেষ জীবনে অশেষ দুঃখের কারণ হলাে কীভাবে?

গালিলিও-র ছাত্রজীবন সম্পর্কে যা জান লেখাে।

গালিলিও’ প্রবন্ধটির নামকরণের সার্থকতা বিচার করাে।

‘গালিলিও’ প্রবন্ধ অনুসরণে গালিলিওর বিজ্ঞানসাধনার পরিচয় দাও।

“নিজের দূরবিন নিয়ে গালিলিও অনেক নতুন আবিষ্কার করলেন।”—দূরবিনের সাহায্যে গালিলিও কী কী আবিষ্কার করলেন? সনাতনীরা তার বিরুদ্ধতা করেছিলেন কেন?

সত্যেন্দ্রনাথ বসুর ‘গালিলিও’ প্রবন্ধ অবলম্বনে প্রখ্যাত বিজ্ঞানী গালিলিওর পরিবারের পরিচয় দাও। পারিবারিক দায়িত্ব পালনে গালিলিওর ভূমিকা আলােচনা করাে।

“গালিলিও রাজি হলেন,”—কোন্ ব্যাপারে রাজি হয়েছিলেন গালিলিও? গালিলিওর জীবনের শেষ পাঁচ বছরের পরিচয় দাও।

নীলধ্বজের প্রতি জনা কী ধরনের রচনা তার ব্যাখ্যা করাে।

পৌরাণিক চরিত্র নিয়ে ‘নীলধ্বজের প্রতি জনা রচিত হলেও সেখানে কবি মধুসূদনের যে স্বাতন্ত্রের পরিচয় পাওয়া যায় তা লেখাে।

রেনেসাঁর লক্ষণগুলি কীভাবে ‘নীলধ্বজের প্রতি জনা’ পত্রকাব্যে প্রতিফলিত হয়েছে লেখাে।

পত্ৰকাব্যের সংজ্ঞা দাও। কোন্ পত্রকাব্য দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মধুসূদন তাঁর নীলধ্বজের প্রতি জনা লিখেছিলেন?