ব্রেখট তাঁর কবিতায় শ্রমিক তথা কর্মী মানুষের দাবির ভিত্তিতে সরাসরি কবিতাটির নাম দিয়েছিলেন- ‘Questions from a Worker Who Reads’I কবি শঙ্খ ঘােষ কবিতাটির ভাষান্তরের ক্ষেত্রে এর নামকরণ করেছেন ‘পড়তে জানে এমন এক মজুরের প্রশ্ন’। প্রাচীন কাল থেকে শ্রমজীবী মানুষদের কথা বলার অধিকার দেওয়া হত না। মার্কসীয় ভাবনায় উজ্জীবিত কবি শ্রমজীবী শ্রেণির শােষিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সভ্যতার অগ্রগতির অন্যতম কারিগর হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। কবিতাটির নামকরণের ক্ষেত্রে কবি তার বক্তব্যের বিষয়কেই প্রাধান্য দিয়েছেন। কোনােরকম ইঙ্গিত বা ব্যঞ্জনা দিয়ে তিনি বক্তব্যের বিষয়কে আড়াল করতে চাননি। অল্প শিক্ষিত একজন মজুর প্রশ্ন রেখেছে, তাদের আড়ালে রেখেই তাদের শ্রমের কৃতিত্ব নিয়েছে বিভিন্ন রাজা, সম্রাটরা। সাত দরজাওয়ালা থিবস কিংবা ব্যাবিলনের পুনর্নির্মাণ সম্ভব হয়েছে শ্রমজীবী মানুষের জন্যই, কিন্তু প্রচলিত ইতিহাসে এদের কোনাে স্থান নেই। রােমকে গড়ে তােলা কিংবা সিজারের জয়ের পিছনে হাজার হাজার কর্মী মানুষের অবদানকে ইতিহাসের পাতায় কেউ লিখে রাখে না। শ্রমজীবী মানুষকে অবদমিত করে রাখা হত বলেই এতদিন তাদের কেউ এই প্রশ্ন তােলেনি। অথচ পড়তে জানা একটি মজুর আজ নিশ্চিতরূপে জেনেছে আটলান্টিসে ক্রীতদাসদের পরিণতি। আলেকজান্ডারের ভারত বিজয় সৈন্যরা ছাড়া তার একার পক্ষে কখনােই সম্ভব ছিল না। আর্মাডা ডুবে যাওয়ায় স্পেনের সাধারণ মানুষও দুঃখ পেয়েছিল। দ্বিতীয় ফ্রেডারিকের সাত বছরের অবিরাম সংগ্রাম এবং শেষে জয়লাভ সাধারণ মানুষের জন্যই সম্ভব হয়েছে। এরকম কত কৃতিত্ব সারা পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে আছে এবং সেইসব কৃতিত্বস্থাপনের পিছনে আছে শ্রমজীবী মানুষেরা। এই প্রশ্ন অবশ্য সেই মজুরই করতে পারে যে শিক্ষা লাভ করেছে। তাই কবিতাটির নামকরণ সরাসরি বক্তব্যের বিষয়কে প্রতিফলিত করায় যথাযথ হয়েছে।
Home/
Bangla (H.S. 12)/‘পড়তে জানে এমন এক মজুরের প্রশ্ন’ কবিতাটির নামকরণের সার্থকতা বিশ্লেষণ করাে।
Leave a comment