সূচনা: মধ্যযুগের ইউরোপের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হল ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ।প্রায় দুশাে বছর ধরে মূলত আটটি ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ হয়েছিল। যেগুলির মধ্যে প্রথম চারটি ক্রুসেড ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ঐতিহাসিক হিট্টি বলেছেন, “ক্রুসেড ছিল মুসলিম প্রাচ্যের বিরুদ্ধে খ্রিস্টান প্রতীচ্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া ও ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ।”

[1] পঞ্চম ক্রুসেড (১২১৭-১২২১ খ্রি): ল্যাটেরানের চতুর্থ সম্মেলনে (১২১৫ খ্রি.) পােপ তৃতীয় ইনােসেন্টের নেতৃত্বে পঞ্চম ক্রুসেডের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। খ্রিস্টানদের পবিত্র ভূমি জেরুজালেম অধিকারের লক্ষ্যে যা জার্মানি, অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি সহ ইউরােপের দেশগুলি মিশরের আইয়ােবিদ রাজ্যে আক্রমণ চালায়। কিন্তু মিশরের সুলতান আলকামিল-এর বাহিনীর কাছে তারা পর্যুদস্ত হয়। শেষে মিশরের সুলতানের সঙ্গে ক্রুসেডারদের আট বছরের শান্তি চুক্তি স্থাপিত হয়।

[2] ষষ্ঠ ক্রুসেড (১২২৮-১২২৯ খ্রি.); ১২২৮ খ্রিস্টাব্দে রােমান সম্রাট দ্বিতীয় ফ্রেডারিখের উদ্যোগে সূচনা ঘটে ষষ্ঠ ক্রুসেডের। পােপ এই ক্রুসেড থেকে দূরে সরে থাকে। ক্রুসেডাররা জেরুজালেম, নাজারিখ এবং বেথলেহেম অঞ্চল দখল করে নেয়। তৃতীয় ফ্রেডারিখ নিজেকে জেরুজালেমের সম্রাট হিসেবে ঘােষণা করেন। কিন্তু মুসলিমরা পুনরায় জেরুজালেমের দখল নেয় (১২৪৪ খ্রিস্টাব্দে)।

[3] সপ্তম ক্রুসেড (১২৪৮-১২৫৪ খ্রি); ফরাসিরাজ নবম লুই-এর উদ্যোগে সপ্তম ক্রুসেডের সূচনা ঘটে। বাহরি, মামলুক, বাইবার, কুতুজ, আইবাক-সহ একাধিক মুসলিম গােষ্ঠী এই ক্রুসেডে মিশরের পক্ষে লড়াই করে। ফলে ইউরােপীয় ক্রুসেডাররা সহজেই পরাজিত হয়। ফরাসিরাজ নবম লুই মুসলিম সেনাদের হাতে পরাজিত ও বন্দি হন। শেষে ৫০ হাজার স্বর্ণমুদ্রার বিনিময়ে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।

[4] অষ্টম ক্রুসেড় (১৯৭০ খ্রি.); ফরাসি সম্রাট নবম লুই পুনরায় অষ্টম ক্রুসেডের জন্য উদ্যোগ নেন। তিনি আরবের টিউনিস এবং উত্তর আফ্রিকায় আক্রমণ চালান। কিন্তু প্রতিকূল পরিবেশে তার বাহিনী ধ্বংস হয়। নবম লুই নিজেও টিউনিসিয়াতে মারা যান। এই ক্রুসেডে হেরে যাওয়ার পর সিরিয়াতে খ্রিস্টান শাসনের অবসান ঘটে।