জার্মানির হামবুর্গ শহরে ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দের ১৪-১৮ জুলাই পঞ্চম আন্তর্জাতিক বয়স্কশিক্ষা কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। এই কনফারেন্সের মূল উদ্দেশ্য হল ‘Adult Learning a key for the 21st Century’ এর ভূমিকায় বলা হয় যে, জীবনব্যাপী শিক্ষা মৌলিক শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ নীতি হিসেবে গৃহীত হবে। এখানে বয়স্ক শিক্ষার ১০টি উদ্দেশ্যের কথা বলা হয়েছিল। সেগুলি হল— 

(১) গণতন্ত্র এবং বয়স্ক শিক্ষা: দেশের গণতন্ত্রকে সফল করতে হলে বয়স্ক শিক্ষা আবশ্যিক। দেশের জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হলে, নেতৃত্বদানের ক্ষমতা গড়ে তুলতে হলে শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা আছে।

(২) বয়স্ক শিক্ষার গুণগত মান বজায় রাখা : বয়স্ক শিক্ষার গুণগত মান বজায় রাখতে হবে। তার জন্য আর্থিক নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে।

(৩) শিক্ষার সর্বজনীন এবং মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা : সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সাম্যতা বজায় রাখার জন্য শিক্ষার সর্বজনীন এবং মৌলিক অধিকার আরও বেশি করে নিশ্চিত করতে হবে।

(৪) শিক্ষা ক্ষেত্রে নারীদের সমানাধিকারের নিশ্চিত করা : সমাজে নারী-পুরুষ উভয়েরই সমান গুরুত্ব আছে। নারীরা যাতে সমাজে সর্বোত্তম অবদান রাখতে সক্ষম হয়, তার জন্য নারীদের শিক্ষার অধিকারকে সুনিশ্চিত করতে হবে।

(৫) পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে অভিযোজন করে চলা : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতির ফলে বিশ্বের জ্ঞানভাণ্ডার ও কর্মজগতের ব্যাপক পরিবর্তন হচ্ছে। এই পরিবর্তনশীল কর্মজগতের সঙ্গে অভিযোজন করে চলার জন্য প্রয়োজন শিক্ষার।

(৬) পরিবেশ, স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতার বিকাশ : বয়স্কশিক্ষার আর-একটি উদ্দেশ্য হল প্রতিটি জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্য, পরিবেশ, পুষ্টি, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি সম্পর্কে সচেতনতা বোধ গড়ে তোলা।

(৭) সংস্কৃতি ও নতুন নতুন তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞানের বিকাশ ঘটানো : নতুন নতুন তথ্য প্রযুক্তি, সংস্কৃতি ও যোগাযোগের মাধ্যম সম্পর্কে আমাদের অবহিত করানোর ও সেগুলোর ব্যবহার সম্পর্কে সচেতনতা করে তোলা।

(৮) সামাজিক মূল্যবোধের বিকাশে : প্রতিটি জনগোষ্ঠীর নিজস্ব রীতিনীতি ও সামাজিক মূল্যবোধ আছে। শিক্ষার উদ্দেশ্য হল— সামাজিক এইসকল মূল্যবোধগুলো বিকাশ ঘটানো।

(৯) অর্থের জোগান সুনিশ্চিত করা : বয়স্ক শিক্ষার উদ্দেশ্য পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান সুনিশ্চিত করতে হবে।

(১০) আন্তর্জাতিক সহযােগিতা ও সহানুভূতির বিকাশ : বয়স্ক শিক্ষা আর-একটি বিশেষ উদ্দেশ্য হল আন্তর্জাতিক সহযােগিতা ও সহানুভূতির বিকাশ ঘটানাে। এই কর্মসূচিতে ‘Education for all’ কে একটি গণ আন্দোলনে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।