‘ন্যাশনাল থিয়েটারের’ প্রতিষ্ঠা, অভিনয় অনুষ্ঠান ও অভিনেতৃবৃন্দ প্রভৃতি সম্পর্কে পরিচয় দাও। এই প্রসঙ্গে এই প্রতিষ্ঠানটির উদ্ভবের কারণ এবং ভবিষ্যত নাট্যসাহিত্যে ও নাট্যনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে এর অবদান বুঝিয়ে দাও।
ন্যাশনাল থিয়েটারের উদ্ভব ও ১৮৭২ খ্রীষ্টাব্দব্যাপী এর বিকাশের ইতিবৃত্ত সংক্ষেপে বিবৃত কর।


সাধারণ রঙ্গালয় ন্যাশনাল থিয়েটারের (প্রতিষ্ঠার পর নামকরণ হয়) জন্ম ‘বাগবাজার এমেচার থিয়েটার’ নামে সথের অভিনয়ের দল এবং তাদের নাট্যানুষ্ঠান প্রয়াসের মধ্যে দিয়েই। সথের নাট্যাভিনয়ের দল হলেও এই দলের অবস্থা ও কার্যপ্রণালীর সঙ্গে পূর্ববর্তী নাট্যশালা, নাট্যানুষ্ঠান এবং উদ্যোক্তাদের একটা মৌলিক পার্থক্য ছিল। প্রসন্নকুমার ঠাকুরের ‘হিন্দু থিয়েটার’ থেকে সুরু করে নবীনচন্দ্র বসুর শ্যামবাজার থিয়েটার, আশুতোষ দেবের (সাতুবাবু) বাড়ির থিয়েটার, বিদ্যোৎসাহিনী রঙ্গমঞ্চ, বেলগাছিয়া নাট্যশালা, পাথুরিয়াঘাটা বঙ্গনাট্যালয়, জোড়াসাঁকো নাট্যশালা বা মেট্রোপলিটন থিয়েটার পর্যন্ত বিভিন্ন নাট্যশালাগুলির প্রতিষ্ঠা ঘটেছিল বিভিন্ন অভিজাত ধনীর একান্ত ব্যক্তিগত উৎসাহে ও আর্থিক আনুকূল্যে। প্রকৃতপক্ষে ১৮৩০ সালের পর থেকে প্রায় ১৮৬০-৬৫ সাল পর্যন্ত এই ধরনের নাট্যশালা প্রতিষ্ঠার (ধনীদের নিজ নিজ বাড়িতে) উৎসাহের পশ্চাতে দুটি শক্তিশালী কারণ ছিল। প্রথমত, এঁরা সকলেই ইংরেজী শিক্ষায় শিক্ষিত এবং ইংরেজদের নাট্যশালায় অভিনীত নাট্যানুষ্ঠান দেখেছেন। তার ফলে সমকালে প্রচলিত এদেশীয় যাত্রাগান তাঁদের ভাল লাগত না। তাই ইংরেজদের মত নাট্যশালা স্থাপন করে নাট্যাভিনয়ের ব্যবস্থা করার আগ্রহ জাগে এদের মধ্যে। দ্বিতীয়তঃ ইংরেজদের সঙ্গে সম্ভবতঃ একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতার মনোভাবও ছিল মনে হয়, অর্থাৎ ওদের মত অনুষ্ঠান করে, ওদের নিমন্ত্রণ করে দেখিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা।

এই নাট্যশালাগুলির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ধনীদের নিজ নিজ বাড়িতে। এগুলিতে অনুষ্ঠিত নাট্যাভিনয়ে জনসাধারণের প্রবেশাধিকার ছিল না, বেকলমাত্র সম্ভ্রান্ত ধনী অভিজাত ব্যক্তিগণই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হতেন। তাছাড়া অভিনয় অনুষ্ঠানগুলি প্রতিষ্ঠাতাদের খেয়াল-হুজুগের ফলেই হত। স্বভাবতই এই জাতীয় অনুষ্ঠানগুলির কোন ধারাবাহিকতা ছিল না, দীর্ঘকাল পর পর নেহাতই মাঝে মাঝে অনুষ্ঠান হত। প্রতিষ্ঠাতা ব্যক্তির মৃত্যু উৎসাহে হ্রাস ঘটলে এগুলি বন্ধ হয়ে যেত এবং পরবর্তী অপর কোন উৎসহী ধনী ব্যক্তির আনুকূল্যের প্রতীক্ষা করতে হত। তাই নবীনচন্দ্র বসু কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত নাট্যশালায় ‘শকুন্তলা’ অভিনয় থেকে শুরু করে জোড়াসাঁকো নাট্যশালায় অভিনীত ‘একেই কি বলে সভ্যতা’ বা ‘নবনাটকের’ অভিনয় পর্যন্ত বহু নাটকের অভিনয় যতই ভাল ও সার্থক হোক না কেন, ঐ সব অনুষ্ঠানের সঙ্গে জনসাধারণের কোন যোগ না থাকার সমকালীন পত্র-পত্রিকায় সাধারণ মানুষের নাট্যরসপিপাসার তৃপ্তির জন্য একটি সাধারণ রঙ্গালয়ের অভাবের কথা প্রকাশিত হত।

এই অভাব ও ব্যাকুলতা দূরীকরণ সম্ভব করেছিল ‘বাগবাজার এমেচার থিয়েটারে’র সখের দল। অবশ্য এদের পূর্বে ১৮৬০ সালের প্রথমদিকে আহিরীটোলার রাধামাধব হালদার এবং যোগীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় ‘দি ক্যালকাটা পাবলিক থিয়েটার’ নামে জনসাধারণের জন্য একটি সাধারণ রঙ্গালয় স্থাপনের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাদের সেই চেষ্টা সফল হয়নি। বাগবাজারের এই সখের দলই ‘ন্যাশনাল থিয়েটার’ নাম দিয়ে কলকাতায় প্রথম পেশাদারী সাধারণ রঙ্গালয় স্থাপন করে। দলের সদস্যগণ ঘরের মানুষ, তাই এদের দলের আর্থিক সঙ্গতি কম ছিল। সেজন্য এঁরা ঠিক করেছিলেন যে টিকিট বিক্রয়ের দ্বারা সংগৃহীত অর্থ দিয়েই পরবর্তী নাট্যানুষ্ঠানের ব্যয়নির্বাহ করবেন। অভিনেতা ও কলাকুশলীদের ব্যক্তিগত উপার্জন বা অভিনয়কে পেশারূপে গ্রহণ তখনও দলের সদস্যদের মাথায় আসেনি। কিন্তু ‘লীলাবতী’ অভিনয়ের আশাতীত সাফল্যে এবং টিকিট বিক্রয়লব্ধ সংগৃহিত অর্থ আশাতীত হওয়ায় এদের প্রধান উদ্যোক্তা নগেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মনে পেশাদারী রঙ্গমঞ্চ স্থাপনের পরিকল্পনা জাগে, সেখানে অভিনয় অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতা থাকবে অর্থাৎ নিয়মিত অভিনয় হবে; আর টিকিট বিক্রয়লব্ধ অর্থ থেকে অভিনয় অনুষ্ঠানের ব্যয়নির্বাহ এবং নিজেদেরও অর্থ উপার্জন হবে। এই পরিকল্পনাই পরিশেষে পেশাদারী সাধারণ রঙ্গালয় তথা ‘ন্যাশনাল থিয়েটার’ এর জন্ম দিয়েছিল ১৮৭২ সালের ৭ই ডিসেম্বর তারিখে আপার চিৎপুর রোজে মধুসূদন সান্যালের বাড়ীতে দীনবন্ধু মিত্রের ‘নীলদর্পণ’ নাটকের অভিনয় দিয়ে।

এই সাধারণ রঙ্গালয় বা ন্যাশনাল থিয়েটারের তাৎপর্য অত্যত গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলি এই—

  • এই থিয়েটারে যে কোন সাধারণ মানুষ টিকিট ক্রয় করে অভিনয় দেখার সুযোগ পেল। টিকিটের মূল্যও ইংরেজদের নাট্যশালাগুলির অনেক কম ছিল। 
  • এদেশীয় ধনীদের বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত নাট্যশালার অভিনয় দেখার সুযোগ সাধারণ মানুষের ছিল না।
  • এই ন্যাশনাল থিয়েটারে সম্পূর্ণভাবে বাঙ্গালীদের দ্বারা পরিচালিত, বাঙ্গালীদের দ্বারা অভিনীত বাংলা নাটকেরই অভিনয় হত।
  • যে ধনীর বাড়ীতে এটি স্থাপিত হয়েছিল, সেটি ভাড়া নেওয়া হয়েছিল দলের পক্ষ থেকে, কোন একজনের ব্যক্তিগত খেয়াল খুশির ব্যাপারে নয়।
  • অভিনয় অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতা ছিল অর্থাৎ নিয়মিত হত। প্রথমদিকে প্রতি শনিবার এবং পরে প্রতি বুধবার ও শনিবার অভিনয় হত।
  • যাঁরা অভিনয় করতেন, তারাও কিছু কিছু অর্থ পেতেন একে পেশাদারী রঙ্গমঞ্চ বলা যায়। অভিনয়কে এঁরা পেশা বা জীবিকারূপে গ্রহণ করেছিলেন।

‘নীলদর্পণ নাটকের অভিনয় প্রথম হয়েছিল বলে সমাকালীন পত্র-পত্রিকায় একে জাতীয় সাধারণ নাট্যশালা বলে অভিহিত করা হয়েছিল। নবগোপাল মিত্র সম্পাদিত National Paper-এ (১৮৭২ সালের ১১ই ডিসেম্বর) এই নাট্যশালা স্থাপন সম্পর্কে বলা হয়েছিল : “The National Theatre is first public undertaking of its character… The doors of the National Theater are open to the public, Whoever shall pay for admission to it, will be permitted to go in it.” প্রথম পর্যায়ে নাট্যশালাটি স্থায়ী না হলেও পরবর্তীকালে এদেরই প্রেরণায় একাধিক স্থায়ী নাট্যশালা গড়ে উঠেছেন। ‘ন্যাশনাল থিয়েটারে’ প্রথম অভিনয় দীনবন্ধুর ‘নীলদর্পণ’ (১৮৭২ সালের ৭ই ডিসেম্বর) আলোড়নকারী সাফল্যলাভ করেছিল।

‘ন্যাশনাল থিয়েটার’-এর প্রতিষ্ঠা একটি স্মরণীয় ঘটনা হলেও এর জন্মলগ্নে উদ্যোক্তাগণের মতান্তর ও মনান্তর ঘটেছিল। অবশ্য এই মতান্তর ও মনান্তর একজন সদস্যের, তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা গিরিশচন্দ্র ঘোষ। মতভেদ ঘটেছিল ‘ন্যাশনাল থিয়েটার’ নামকরণ নিয়ে। গিরিশবাবু এই নামকরণের বিরোধী ছিলেন। তাঁর মতে, “ন্যাশনাল থিয়েটার নাম দিয়া, ন্যাশনাল থিয়েটারের উপযুক্ত সাজসরঞ্জাম ব্যতীত, সাধারণের সম্মুখে টিকিট বিক্রয় করিয়া অভিনয় করা আমার অমত ছিল। একেই তো তখন বাঙ্গালীর নাম শুনিয়া ভিন্ন জাতি মুখ বাঁকাইয়া যায়, এরূপ দৈন্য অবস্থা ন্যাশনাল থিয়েটারে দেখিলে কি না বলিবে—এই আমার আপত্তি।* গিরিশচন্দ্র ছাড়া অন্য সকলে ‘ন্যাশনাল থিয়েটার’ নামকরণে একমত, তাই গিরিশিচন্দ্র দল ছেড়ে চলে গেলেন। এদের উৎসাহদতাদের মধ্যে ছিলেন ‘অমৃতবাজার পত্রিকা’র সম্পাদক শিশির কুমার ঘোষ, ‘মধ্যস্থ পত্রিকার সম্পাদক মনোমোহন বসু এবং ‘ন্যাশনাল পেপার’-এর সম্পাদক নবগোপাল মিত্র প্রভৃতি। রঙ্গমঞ্চ স্থাপনের জন্য মধুসূদন সান্যালের বাড়ির প্রাঙ্গণ ভাড়া নেওয়া হয়েছিল মাসিক ৪০ টাকায়। ধর্মদাস সুর মহাশয়ের কর্তৃত্বে রঙ্গমঞ্চ নির্মিত হয়েছিল। অভিনয় শিক্ষক ছিলেন অর্ধেন্দুশেখর মুস্তাফি। ১৮৭২ সালে ১০ই নভেম্বর ‘সুলভ সমাচারে’ প্রকাশিত বিজ্ঞাপনের নাম ছিল ‘কলিকাতা ন্যাশনাল থিয়েট্রিক্যাল সোসাইটি’ এবং এর উদ্দেশ্য ঘোষিত হয়েছিল : ‘বঙ্গ ভূমির ও বঙ্গভাষার অঙ্গপুষ্টি।’ ‘The Englishman’ পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপনে হয়েছিল : “A few native gentlemen residents of Baghbazar have established a theatrical society, named ” The Calcutta National Theatrical Society, their object being to improve the stage, as also to encourge native youths in the composition of new Bengali dramas from the proceeds of sale of tickets.”

প্রথম অভিনয় ‘নীলদর্পণ’ অভূতপূর্ব সাফল্য লাভ করেছিল এবং দেশে আলোড়নের সৃষ্টি করেছিল। অভিনয় সম্পর্কে ‘অমৃতবাজার পত্রিকায় প্রশংসা ও সমালোচনামূলক দুই প্রকার মন্তব্যই প্রকাশিত হয় : “অভিনয় সুচারু হইয়াছিল। আমরা পরিতৃপ্ত হইয়াছি।… কিন্তু সঙ্গীতভাগে কেহই তৃপ্ত হন নাই।” সমকালীন পত্রিকা ‘এডুকেশন গেজেটে’ (১৩ই ডিসেম্বর, ১৮৭২) ‘একতান বাদ্যটি’ বঙ্গীয় না হওয়ার আক্ষেপ করা হয়েছিল— এতে যে ‘ন্যাশনাল থিয়েটার’ নামের গৌরব, ‘নাম ও সম্ভ্রমে’র হ্রাস হয়েছে, তাও বলা হয়েছিল। প্রথম অভিনয়ে দুই শত টাকার টিকিট বিক্রয় হয়েছিল। নীলদর্পণ’ নাটকের ইংরেজ-বিরোধী মনোভাব ইংরেজদের মোটেই ভাল লাগেনি এবং ‘ইংলিশম্যান’ পত্রিকায় এই অভিনয় বন্ধ করে দেওয়ার কথা প্রকাশিত হয়। তদনুযায়ী নাট্যশালার সম্পাদক এই জানিয়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন যে এই নাটকের মানহানিকর অংশ বর্জন করা হয়েছে।

ন্যাশনাল থিয়েটারের দ্বিতীয় নাটকও দীনবন্ধুর ‘জামাই বারিক, অভিনয় হয়েছিল ১৮৭২ সালের ১৪ই ডিসেম্বর। এই অভিনয়ের বিবরণ প্রকাশিত হয় ‘ন্যাশনাল পেপার’-এ (১৮ই ডিসেম্বের : “এখানকার অভিনেতৃগণ এক একটি রত্নবিশেষ। সকলের বিশেষতঃ পদ্মলোচন, বগলা ও বিন্দুর অংশ বড় অপূর্ব হইয়াছিল।” তাছাড়া বিলাতি বাদ্যের বদলে লক্ষ্ণৌ-এর বাদকদের দেশী বাজনার ব্যবস্থা হয়েছিল। সম্ভবত পূর্ববর্তী ‘এডুকেশন গেজেটের সমালোচনার ফলেই এই পরিবর্তন করা হয়েছিল। টিকিট বিক্রয় হয়েছিল আড়াইশো টাকার।

১৮৭২ সালের ২১ ডিসেম্বর এখানে ‘নীলদর্পণের’ দ্বিতীয়বার অভিনয় হয়। এত দর্শক সমাবেশ হয়েছিল যে অনেকেই টিকিট না পেয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হয়। ৪৫০ টাকার টিকিট বিক্রয় হয়েছিল। এই অভিনয় সম্পর্কে ‘মধ্যস্থ’ পত্রিকার মন্তব্য: “ এই নাটকের অভিনয় দর্শন করিয়া আমরা মহাসন্তুষ্ট হইয়াছি।”

এরপর ‘সধবার একাদশী’ নাটক (২৮শে ডিসেম্বর), ‘নবীন তপস্বিনী’ (১৮৭৩ সালের ৪ঠা জানুয়ারী) এবং ‘লীলাবতী’ (১১ই জানুয়ারী) পর পর তিনটি শনিবার অভিনীত হয়। ন্যাশনাল থিয়েটারে দীনবন্ধু মিত্রের অধিকাংশ নাটকই অভিনীত হত, কারণ এগুলির সামাজিক মূল্য, বাস্তবধর্মিতা, অভিনয়ের সুবিধা, সাজপোষাক প্রভৃতি ব্যয়ও বেশ কম ছিল। সমকালীন ‘অমৃতবাজার পত্রিকায়’ উক্ত তিনটি অভিনয়েরই প্রশংসা করা হয়েছিল। অবশ্য ‘মধ্যস্থ’ পত্রিকায় (১২৭৯ বঙ্গাব্দের ২৯শে পৌষ) অভিনয়গুলির কিছু ত্রুটির প্রতিও দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছিল। পত্রিকাটির মতে এই নাট্যশালাটির নামের ‘জাতীয়’ বিশেষণটি সম্পর্কে অধিকতর সচেতন হওয়া উচিত। তাছাড়া ‘পটক্ষেপণ ও পটোত্তলন’ কার্যে আরও তৎপরতা প্রয়োজন। গানের কথা যেন আরও স্পষ্ট হয়, ঐকতান বাদন আরও উন্নত হওয়া উচিত।

‘নবীন তপস্বিনী’ নাটকের জলধরের ভূমিকায় অর্ধেন্দুশেখর মুস্তাফির অভিনয় হয়েছিল অপূর্ব। এ সম্পর্কে নাট্যাচার্য গিরিশচন্দ্র ঘোষের মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য: “প্রতি গ্রন্থে অর্ধেন্দু প্রধান ও অতুলনীয়। তন্মধ্যে ‘নবীন তপস্বিনী’র জলধরের অভিনয় অতুলনীয়র মধ্যে অতুলনীয়।”

ন্যাশনাল থিয়েটারের অভিনয়কে কেন্দ্র করেই ‘প্রশ্টার’ (অভিনয়কালে অভিনেতাদের সংলাপ স্মরণ করিয়ে দেয়) রাখার ব্যবস্থা হয়, এর আগে এই ব্যবস্থা ছিল না। ন্যাশনাল থিয়েটারে প্রতি সপ্তাহে নূতন নূতন নাটকের অভিনয় হত, কিন্তু এত অল্প সময়ের মধ্যে নাটকের সংলাপ সম্পূর্ণ মুখস্থ করা সম্ভব হত না। তাই এই ‘প্রশ্টার’ রাখার ব্যবস্থা প্রথম চালু হয় ‘ন্যাশনাল থিয়েটারে।

বস্তুতঃ ‘ন্যাশনাল থিয়েটারে’র প্রচেষ্টাতেই এদেশে স্থায়ী সাধারণ রঙ্গালয় এবং ধারাবাহিক বা নিয়মিত অভিনয়ের (সপ্তাহে দু’দিন) ধারা প্রবর্তিত হয়েছিল। তাই বাংলা নাট্যশালা, নাট্যাভিনয় এবং নূতন নূতন নাটক রচনায় উৎসাহী করে তোলার ব্যাপারে ন্যাশনাল থিয়েটারের নামটি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।