মার্কিন দার্শনিক জন রলস্ আধুনিককালের এক বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হিসাবে সুপরিচিত। নয়া-উদারনীতিক রাজনীতিক মতবাদের বিকাশের ক্ষেত্রে জন রলসের সদর্থক ভূমিকা অনস্বীকার্য। এ প্রসঙ্গে তাঁর A Theory of Justice শীর্ষক গ্রন্থটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। উদারনীতিক রাষ্ট্র ও ন্যায় সম্পর্কিত ধারণার ব্যাপারে তাঁর আগ্রহ ও আন্তরিকতা ছিল। এই কারণে প্রায় চার দশক ধরে তিনি ন্যায় সম্পর্কিত মতবাদ গঠন ও পুনর্গঠন করেছেন। ১৯৫৮ সালে রলস্ ‘ন্যায়’ বলতে ‘সততা’ বা ‘সুবিচার’ (Justice as fairness)-কে বুঝিয়েছেন। এই সময় ন্যায় প্রসঙ্গে রলসীয় বক্তব্যের মূল কথাই ছিল এই সুবিচার বা ন্যায্যতা (fairness)। ১৯৬৭ সালে Distributing Justice-এর মাধ্যমে রলসের ন্যায়-ধারণার পুনরীক্ষণমূলক সংশোধিত বক্তব্যের পরিচয় পাওয়া যায়। ১৯৭১ সালে প্রকাশিত A Theory of Justice শীর্ষক গ্রন্থটিতে রলসের ন্যায় সম্পর্কিত মতবাদের বিস্তারিত ও পরিপূর্ণ পরিচয় পাওয়া যায়।
জন রলস্ তাঁর A Theory of Justice শীর্ষক গ্রন্থে সমকালীন পরিস্থিতি পরিমন্ডলের পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত চাহিদা অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন। সমকালীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেশ কিছু আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত হয়। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখযোগ্য হল নাগরিক অধিকার আন্দোলন (Civil Rights Movement), কৃষ্ণাঙ্গ স্বাধীনতা আন্দোলন (Black Liberation Movement), ভিয়েৎনাম যুদ্ধ বিরোধী আন্দোলন, সংখ্যালঘুদের জন্য সমানাধিকার আন্দোলন, দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য বৃহৎ সমাজ কর্মসূচী প্রভৃতি। এই সমস্ত আন্দোলনের মাধ্যমে কতকগুলি বিষয় বা প্রশ্ন স্পষ্টত প্রতিপন্ন হয়। এই সমস্ত বিচার্য বিষয়গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল : ব্যক্তিগত অধিকার ও সংখ্যালঘু অধিকার, নীতি-নির্ধারণ ও তার প্রয়োগের ক্ষেত্রে সামাজিক ন্যায় সম্পর্কিত বিষয়াদি, ন্যায়সঙ্গত যুদ্ধ ও অন্যায় যুদ্ধসমূহ প্রভৃতি। জন রলস তাঁর ন্যায় সম্পর্কিত মতবাদে উদারনীতিকদের স্বাধীন ইচ্ছা সম্পর্কিত (libertarian) মতাদর্শের সঙ্গে আর্থনীতিক সাম্যবাদকে একটি অভিন্ন তাত্ত্বিক কাঠামোর অনুর্ভুক্ত করতে চেয়েছেন।
জন রলস্ তাঁর তাত্ত্বিক উদ্যোগের এই ধারায় রাজনীতিক বিতর্ক ও আলোচনার কেন্দ্রে পুনরায় উদারনীতি বাদকে টেনে এনেছেন। তিনি এলিট শাসনব্যবস্থাকে স্বীকার বা সমর্থন করেননি। তিনি সুযোগ-সুবিধার ন্যায্য সাম্যের সমর্থনে কথা বলেছেন। তিনি সমাজে নৈতিক বিচারে স্বৈরাচারী অসাম্য-বৈষম্যের সংশোধনের স্বার্থে এই পথ ধরেছেন। রলস স্বাধীনতার প্রাথমিক গুরুত্বকে দৃঢ়তার সঙ্গে মেনে নিয়েছেন। কিন্তু তিনি আর্থনীতিক সম্পদ রাজনীতিক ক্ষমতা ও সামাজিক মর্যাদাকে সমপর্যায়ভুক্ত করার ব্যাপারে সচেষ্ট হয়েছেন। তিনি স্বাধীনতা, সাম্য ও সৌভ্রাতৃত্বের মধ্যে সম্পর্ককে পুনরায় ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণকে সংজ্ঞায়িত করেছেন।
জন রলসের অভিমত অনুসারে ভাল বা শুভ সমাজের বৈশিষ্ট্যসূচক কতকগুলি গুণের কথা বলা হয়। ভাল সমাজের উৎকর্ষসমূহের মধ্যে প্রথম হল ‘ন্যায়’। অন্যভাবে বলা যায় যে, ভাল বা সুন্দর সমাজের জন্য ন্যায় প্রয়োজনীয়। এ কথা ঠিক। কিন্তু সুন্দর সমাজের জন্য ন্যায়ই যথেষ্ট নয়। অনেকের অভিমত অনুসারে -সামাজিক উন্নয়ন বা প্রগতির পথে ন্যায়কে প্রতিবন্ধক হিসাবে আসতে দেওয়া উচিত নয়। কিন্তু এর ফলে সমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের কারণ দেখা দেওয়ার ঝুঁকি থাকে।
রলস্ তাঁর মতবাদকে অবিমিশ্র পদ্ধতিগত ন্যায়ের তত্ত্ব হিসাবে ব্যাখ্যা করেছেন। পদ্ধতিগত ন্যায়ের অর্থ হল ন্যায়ের কতকগুলি নীতি একবার সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হলে, সেগুলির প্রয়োগ সম্ভৃত বণ্টন অপরিহার্যভাবে ন্যায্য হবে। বণ্টন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে এমন কিছু মতবাদ আছে, যেগুলিতে পূর্বনির্ধারিত কোন লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার ব্যাপারে ব্যক্তি মানুষের নৈতিক মূল্যকে অগ্রাহ্য করা হয়। জন রলস্ এই সমস্ত মতবাদের তীব্র বিরূপ সমালোচনা করেছেন। তিনি উপযোগিতাবাদ (utilitarianism)-কে সমর্থন করেননি। উপযোগিতাবাদে ‘সর্বাধিক সংখ্যক ব্যক্তির সর্বাধিক কল্যাণের’ (greatest good of greatest number) কথা বলা হয়। সর্বাধিক সংখ্যক ব্যক্তির সর্বাধিক কল্যাণ পরিমাপের ক্ষেত্রে ব্যক্তিবিশেষের চূড়ান্ত দুঃখকষ্টকে গ্রাহ্য করা হয় না। উদাহরণস্বরূপ এমন একটি অবস্থার কথা বলা যায়, যেখানে সর্বাধিক মূল্যের সৃষ্টি হবে। এবং মুষ্টিমেয় মানুষের দাসত্বের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সর্বাধিক সুখ সর্বাধিক সংখ্যক মানুষের মধ্যে বণ্টন করা যাবে। রলস্ এর তীব্র বিরোধিতা করেছেন। তাঁর মতানুসারে দুঃস্থ-দুর্গত মানুষের দুঃখকষ্টের ক্ষতিপুরণস্বরূপ সম্পন্ন ব্যক্তিবর্গের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের সম্প্রসারণের কথা বলা যায় না।
ন্যায়ের একটি সর্বজন স্বীকৃত পদ্ধতিতে উপনীত হওয়ার জন্য জন রলস্ একটি অভিনব পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। তিনি সামাজিক চুক্তির ঐতিহ্যকে অনুসরণ করেছেন এবং একটি আদি অবস্থান (original position) এর কথা ভেবেছেন। এ ক্ষেত্রে তিনি ব্যক্তিবর্গকে তাদের নির্দিষ্ট আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি থেকে সরিয়ে নিয়ে এসেছেন। এই সমস্ত ব্যক্তিকে একটি ‘অজ্ঞতার আচ্ছাদন’ (Veil of ignorance)-এর আড়ালে অবস্থিত ধরে নেওয়া হয়। এই অবস্থায় তারা যুক্তিবাদী সত্তা হিসাবে আচরণ করে বলে ধরে নেওয়া হয়। তারা তাদের প্রয়োজন, স্বার্থ, সামর্থ্য ও দক্ষতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অনবহিত। তারা এও জানে না যে কি ধরনের অবস্থা বা পরিস্থিতি থেকে সমাজে অসাম্য-বৈষম্য ও বিবাদ-বিসংবাদের সৃষ্টি হয়। কিন্তু তাদের অর্থনীতি ও মনস্তত্ব সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান আছে। তা ছাড়া ন্যায় সম্পর্কে একটা বোধও তাদের আছে। ব্যক্তিমাত্রেই তার সামাজিক কল্যাণকে সর্বাধিক করতে চায়। এ ব্যাপারে ব্যক্তিবর্গের মধ্যে কোন রকম হিংসা দ্বেষ থাকে না। অর্থাৎ তারা আত্ম-স্বার্থের উপর জোর দেয়, কিন্তু তারা অহংবাদী নয়। তেমনি অনিশ্চয়তার মধ্যে তারা যেতে চায় না। গাউবা তাঁর An Introduction to Political Theory শীর্ষক গ্রন্থে এ বিষয়ে বলেছেন: “According to Rawls, in such a state of uncertainty the rational negotiators will choose the least dangerous path….each individual will hypothetically place himself or herself in the last advantaged position’ while recommending the criteria of allocation of the primary goods. Hence each of them will demand greatest benefit for the last advantaged.”
জন রলসের অভিমত অনুসারে মানুষের প্রাথমিক প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীসমূহ সমাজে রাষ্ট্র কর্তৃক সমভাবে বণ্টিত হওয়া আবশ্যক। তবে, রলসের মতানুসারে, অসম বণ্টন অনেক সময় সমাজের সকলের সুবিধায় আসতে পারে। তিনি বলেছেন: “Primary goods are to be distributed by the state equally, unless an unequal distribution would be to everyone’s advantage.” রলস্ স্বাধীনতার অসম বণ্টনকে স্বীকার বা সমর্থন করেননি। কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে আর্থনীতিক সম্পদের অসম বণ্টন সমর্থনযোগ্য। কিছু মানুষের বাড়তি প্রাপ্তির সুবাদে অতিরিক্ত উদ্যোগ-আয়োজনের পরিপ্রেক্ষিতে অতিরিক্ত সম্পদের সৃষ্টি ও সম্প্রসারণ সম্ভব। এর ফলে সকলের লাভ হবে।
সমাজই ব্যক্তিবর্গের একটি অংশের হাতে সম্পদ-সঞ্চয় অধিক মাত্রায় হলে সমাজে ঈর্ষার সৃষ্টি হবে। এই ঈর্ষাকে রলস্ ‘যুক্তিপূর্ণ ঈর্ষা’ (reasonable envy) হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। এই ঈর্ষার নঙর্থক প্রতিক্রিয়া হিসাবে ব্যক্তি-মানুষের আত্মমর্যাদা আঘাত পেতে পারে। জন রলসের অভিমত অনুযায়ী ব্যক্তি মানুষের আত্মমর্যাদা সামাজিক বৈষম্যের উপর নিয়ন্ত্রণ হিসাবে কার্যকর হয়।
রলসের মতানুসারে মানুষ চুক্তির মাধ্যমে ন্যায় সম্পর্কিত ধারণাকে কার্যকর করে। কিন্তু রলসের চুক্তিবাদী বক্তব্য হবস্-লক্-রুশোর চুক্তিবাদী মতবাদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। চুক্তির ধারণার মাধ্যমে রলস্ দেখাতে চেয়েছেন যে, কতকগুলি নৈতিক রীতিনীতি মানুষের উপর বাধ্যতামূলকভাবে প্রযুক্ত হয়। কারণ প্রাথমিক বা আদি অবস্থায় (Original position) যুক্তিবাদী জীব হিসাবে মানুষের কাছে সংশ্লিষ্ট নৈতিক বিধি বিধানসমূহ গ্রহণযোগ্য প্রতিপন্ন হয়। রলসের কাছে ন্যায় প্রাকৃতিক বা স্বাভাবিক আইন নয়; অথবা যুক্তির উপর প্রতিষ্ঠিত নয়। ন্যায় হল ন্যায্য পদ্ধতির মাধ্যমে ন্যায্য বণ্টন। অর্থাৎ রলসের কাছে ন্যায় হল সুবিচার বা ন্যায্যতা (Justice as fairness)।
চুক্তিবদ্ধ হওয়ার জন্য প্রস্তুত মানুষের প্রাথমিক বা আদি অবস্থানের কথা বলতে গিয়ে রলস্ ‘অবগুণ্ঠিত অজ্ঞতা’ (Veil of ignorance)-র কথা বলেছেন। এ হল আত্মসচেতনতাহীন ও নিজের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বিযুক্ত এক ধরনের অবস্থান। রলসের মতানুসারে সকল মানুষ সমান নয়—জ্ঞানের বিচারে সমান নয়; সকলে সমান অবস্থায় বসবাস করে না; সকলের সামাজিক ও আর্থনীতিক অবস্থা অভিন্ন নয়। অনেকেই অবগুণ্ঠিত অজ্ঞতার অবস্থায় অবস্থিত। সামাজিক স্তরবিন্যাসগত পরিচয় বা সামাজিক মাত্রাগত আত্মপরিচয় সম্পর্কে অসচেতন। রলসের অভিমত অনুযায়ী সমাজের সব থেকে কম সুবিধাভোগী সদস্যদের প্রতি যথাযথ নজর দিতে হবে। এ হল ন্যায়ের দাবি। সমাজের সকলের মধ্যে সুযোগ-সুবিধা বণ্টন করতে হবে। এই বণ্টন সম্পাদিত কাজের আনুপাতিক হবে এমন নয়; দেখতে হবে যাতে সর্বাধিক দুর্বল ব্যক্তিটিও যথাযথভাবে লাভবান হতে পারে। এ প্রসঙ্গে অরোরা ও আওয়াসথি (N. D. Arora & S.S. Awasthy) তাঁদের Political Theory শীর্ষক গ্রন্থে মন্তব্য করেছেন: “Such a distribution of benefits, Rawls feels, is not only fair, but is also in accordance with the norms of justice.”
জন রলসের মতানুসারে প্রাথমিক বিষয়াদির (Primary goods) ন্যায্য বণ্টনকে সুনিশ্চিত করার মধ্যেই ন্যায়ের সমস্যার বর্তমান। প্রাথমিক সুবিধাসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল অধিকার ও স্বাধীনতাসমূহ, বিভিন্ন ক্ষমতা ও সুযোগ, আয় ও সম্পদ, আত্মসম্মানের উপায়সমূহ প্রভৃতি। সুবিচার বা ন্যায্যতা হিসাবে ন্যায়ের কথা (‘justice as fairness’) বলতে গিয়ে রলস্ বলেছেন: “All social values – liberty and oppor-tunity, income and wealth and the bases of self-respect-are to be distributed equally unless an unequal distribution of any, or all, of those values is to everyone’s advantage.”
জন রলস্ স্বীকার করেছেন যে, ন্যায় সম্পর্কিত সাধারণ ধারণা অত্যন্ত অস্পষ্ট। এর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ দরকার। রলস্ সুবিচার বা ন্যায্যতা (justice as fairness)-কেই ন্যায় সম্পর্কিত সাধারণ ধারণা হিসাবে প্রতিপন্ন করেছেন। একে ন্যায়ের সম্পূর্ণ মতবাদ বলা যায় না। কারণ বিভিন্ন প্রাথমিক সুবিধাসমূহ যে সমস্ত নিয়ম-নীতি অনুসারে বণ্টিত হয় তার মধ্যেই পারস্পরিক সংঘাত থাকতে পারে। উদাহরণ হিসাবে বলা হয়েছে যে, কিছু ব্যক্তির আয় বৃদ্ধির কারণে অন্যান্যদের স্বাধীনতার হানি ঘটতে পারে। অথবা অসম আয় প্রত্যেকের সুবিধা সৃষ্টি করতে পারে, কিন্তু সুযোগ-সুবিধার অসাম্য সৃষ্টি করতে পারে। এবং তার ফলে অল্প আয়ের ব্যক্তিবর্গের অসুবিধা হতে পারে।
উপরিউক্ত সমস্যার সমাধানের ব্যাপারে জন রলস্ পরামর্শ প্রদান করেছেন। রলস্ সমাধান সূত্র হিসাবে ন্যায়ের দুটি নীতি এবং অগ্রাধিকারের দুটি নিয়ম নির্ধারণ করেছেন। অশোক মুখোপাধ্যায় তাঁর John Rawls’s Theory of Justice শীর্ষক এক রচনায় মন্তব্য করেছেন: “He (Rawis) argues that the conception of ‘justice as fairness’, that is, finally accepted by the contracting parties (i.e., people in the initial situation) consists of two principles and two priority rules.”
ন্যায় সম্পর্কিত রলস-এর মতবাদের প্রথম নীতি
জন রলসের ন্যায় সম্পর্কিত প্রথম নীতিটি হল সকলের জন্য সমান মৌল স্বাধীনতা সম্পর্কিত। রলসের মতানুসারে প্রত্যেক ব্যক্তির সর্বাধিক প্রসারিত মৌল স্বাধীনতার ব্যাপারে সমানাধিকার থাকবে। মৌল স্বাধীনতার ব্যাপারে ব্যক্তি মানুষের এই অধিকার অন্যান্য সকলের অনুরূপ স্বাধীনতার অধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া দরকার। রলস বলেছেন: “Each person is to have an equal right to the most extensive basic liberty compatible with a similar liberty for others.” প্রথম নীতিটি হল রলসের মতবাদের উদারনীতিক মর্মস্থলী নাগরিকদের মৌল স্বাধীনতা হিসাবে রলস্ কতকগুলি স্বাধীনতার কথা বলেছেন। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল রাজনীতিক স্বাধীনতা— ভোটাধিকার ও সরকারী পদে নিযুক্তির অধিকার; বাক্য ও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সমবেত হওয়ার অধিকার; বিবেকের স্বাধীনতা; চিন্তার স্বাধীনতা; ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার; স্বৈরাচারী গ্রেপ্তার ও আটকের হাত থেকে মুক্তির অধিকার অর্থাৎ আইনের অনুশাসন প্রভৃতি। জন রলসের মতানুসারে ন্যায়কে বুঝতে হবে ব্যক্তি-মানুষের স্বাধীনতার দিক থেকে; এবং ব্যক্তি মানুষের স্বাধীনতাকে বুঝতে হবে সাধারণের বা সকলের কল্যাণের দিক থেকে। এ প্রসঙ্গে অশোক মুখোপাধ্যায় মন্তব্য করেছেন: “On this point, there seems to be a touch of Rousseavist concept of common good combined with Kantian concept of autonomy of the individual.”
ন্যায় সম্পর্কিত রলস-এর মতবাদের দ্বিতীয় নীতি
ন্যায় সংক্রান্ত রলসের দ্বিতীয় নীতি হল সকলের জন্য সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রে ন্যায্য সাম্য সম্পর্কিত। এই দ্বিতীয় নীতিটির দুটি অংশ বর্তমান। প্রথম অংশটি ‘বিভেদ নীতি’ (difference principle) হিসাবে পরিচিতি। রলসের মতানুসারে সামাজিক ও আর্থনীতিক বৈষম্যসমূহকে এমনভাবে বিন্যস্ত করা দরকার যাতে তারা যুক্তিসঙ্গতভাবে সকলের সুবিধায় আছে, এবং বিশেষত সমাজের সর্বাধিক অনগ্রসর ব্যক্তিবর্গের সুবিধায় আসে। রলস্ বলেছেন: “Social and economic inequalities are to be arranged so that they are reasonably expected to be to everyone’s advantages and, in particular, to the advantage of the least well-off persons.”
ন্যায়ের এই দ্বিতীয় নীতিটিকে ‘সর্বাধিক নীতি’ (maximin principle) বলা হয়। রলস্ ‘maximin’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। ‘বিভেদ নীতি’ (difference principle) টিকে সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করার জন্য জন রলস্ ‘maximim’ শব্দটি প্রয়োগ করেছেন। এই নীতিটির মূল কথা হল ন্যূনতম বা সর্বনিম্ন সুবিধাভোগীদের জন্য সর্বাধিক কল্যাণ। রলসের মতানুসারে ন্যায়ের নীতিসমূহের দাবি অনুযায়ী ন্যূনতম সামাজিক মান প্রতিষ্ঠিত হওয়া প্রয়োজন। ন্যূনতম সুবিধাভোগী গোষ্ঠীর বিভিন্ন আয় ও সুযোগ-সুবিধাসমূহকে সর্বাধিক করাই এই নীতির মূল কথা। এই নীতির মাধ্যমে সব সময়ই ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হবে। কারণ ন্যূনতম সুবিধাভোগী গোষ্ঠীর স্বার্থে যে কোন ছোটখাটো লাভের জন্য সম্পন্ন গোষ্ঠীর উপর যতবড় ক্ষতিই চাপান হোক না কেন, তা সব সময়ই ন্যায়সঙ্গত। সমাজের বুনিয়াদি প্রতিষ্ঠানসমূহ কিভাবে স্বাধীনতা ও সাম্যের মূল্যবোধসমূহকে অনুধাবন করবে এ বিষয়ে ন্যায়ের উল্লিখিত নীতি দুটি পথনির্দেশ করে। জন রলসের অভিমত অনুযায়ী ন্যায়ের এই নীতিগুলি উপলব্ধি করার জন্য আবশ্যক হল সমাজকে সহযোগিতার একটি ন্যায্য ব্যবস্থা হিসাবে বিবেচনা করা।
ন্যায় সম্পর্কিত রলসের দ্বিতীয় নীতির একটি দ্বিতীয় অংশ আছে। এই দ্বিতীয় অংশের বক্তব্য অনুযায়ী সামাজিক ও আর্থনীতিক বৈষম্যসমূহকে এমনভাবে বিন্যস্ত করতে হবে যাতে, সুযোগ-সুবিধার ন্যায্য সাম্যের অবস্থায়, তারা সকলের জন্য উন্মুক্ত বিভিন্ন পদ ও অবস্থানের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে (“attached to positions and offices open to all.”)। অভিন্ন সামর্থ্য ও দক্ষতাযুক্ত ব্যক্তিবর্গের জীবনের সুযোগ-সুবিধা অভিন্ন হওয়া দরকার। ব্যক্তি মানুষ কি রকম আয়সম্পন্ন পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছেন, তা বিচার্য বিষয় হওয়া উচিত নয়। সাম্য সম্পর্কিত রলসের দ্বিতীয় অংশটি রলসের মতবাদের সমাজতান্ত্রিক প্রকৃতির মৌল দ্যোতক। অশোক মুখোপাধ্যায় মন্তব্য করেছেন: “Thus Rawlsian liberalism goes far beyond the classical liberal ideal of concerns open to talents.”
ন্যায় সম্পর্কিত রলস-এর মতবাদের প্রথম অগ্রাধিকারের বিধান
জন রলসের সাম্য সম্পর্কিত উপরিউক্ত দুটি নীতির সঙ্গে অগ্রাধিকারের দুটি বিধান সংযুক্ত। অগ্রাধিকারের প্রথম বিধানে সুযোগ-সুবিধার সাম্যের উপরে স্বাধীনতার অগ্রাধিকারকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। জন রলসের অভিমত অনুযায়ী ন্যায়ের ধারণার প্রথম নীতিটি দ্বিতীয় নীতিটির তুলনায় অগ্রাধিকার লাভ করবে। অর্থাৎ স্বাধীনতার অধিকারের ধারণাটি সামাজিক ও আর্থনীতিক সম্পদের বণ্টনের থেকে অগ্রাধিকার লাভের যোগ্য। কেবলমাত্র স্বাধীনতার জন্যই স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রিত হতে পারে। সামাজিক আর্থনীতিক সম্পদসমূহের স্বাধীনতা ভোগের সমান সুযোগের ব্যবস্থা করা দরকার। জন রলস কোন নাগরিকের মৌল স্বাধীনতার বিনিময়ে সমানীকরণের কথাকে বাতিল করে দিয়েছেন। অশোক মুখোপাধ্যায় এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন: “…the first principle, according to Ralws, has lexical priority over the Second principle”.”
ন্যায় সম্পর্কিত রলস-এর মতবাদের দ্বিতীয় অগ্রাধিকারের বিধান
দ্বিতীয় অগ্রাধিকারের বিধান সর্বাধিক করণের নীতির জন্য দক্ষ বণ্টনের থেকে সুযোগ-সুবিধার ন্যায্য সাম্যের উপর অগ্রাধিকার আরোপ করে। অর্থাৎ সুযোগ-সুবিধার ন্যায্য সাম্যের নীতি অগ্রাধিকার পাবে দক্ষ বণ্টন ও কল্যাণের নীতি এবং সুযোগ সুবিধার সর্বাধিকীকরণের উর্ধ্বে।
ন্যায় সম্পর্কিত রলস-এর মতবাদের মূল বক্তব্যসমূহ
জন রলসের ন্যায় সম্পর্কিত মতবাদ পর্যালোচনা করলে কতকগুলি বিষয় স্পষ্টত প্রতিপন্ন হয়। এই বিষয়গুলি উল্লেখ করলে ন্যায় সম্পর্কে রলসের ধারণার সম্যক পরিচয় পাওয়া যাবে।
[1] রলসের অভিমত অনুযায়ী ন্যায় বলতে সুবিচার বা ন্যায্যতাকে বোঝায়।
[2] ন্যায়ের দাবি অনুযায়ী সকল প্রাথমিক দ্রব্যসামগ্রী সমানভাবে বণ্টন করতে হবে, যদি না এই সমস্ত দ্রব্যসামগ্রীর কোন একটির বা সব কটির অসম বণ্টন সর্বনিম্ন সুবিধাভোগীর সুবিধা লাভ হয়। বিদ্যমান অসাম্যের কাঠামোর মধ্যে সর্বনিম্ন সুবিধা ভোগীর সর্বাধিক লাভের মধ্যেই ন্যায় বর্তমান।
[3] স্বাধীনতা ও সাম্যের উপলব্ধির উদ্দেশ্যে উপযুক্ত নীতি নির্ধারণই হল ন্যায়ের উদ্দেশ্য।
[4] স্বাধীনতা ও সাম্যের সহায়ক যথাযথ নীতিসমূহের সৃষ্টি হয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্যে চুক্তির সুবাদে। পারস্পরিক সুবিধার পরিপ্রেক্ষিতে এই চুক্তি সম্পাদিত হয়।
[5] একটি বিশেষ ধরনের সমাজের কথা বলা হয়। এই সমাজে স্বাধীন ও সমান ব্যক্তিবর্গের মধ্যে সহযোগিতার ন্যায্য ব্যবস্থা বর্তমান থাকে।
[6] জনসাধারণ নিজেদের স্বাধীন ও সমান মনে করে। স্বভাবতই তারা অনুধাবন করতে পারে যে, নিজেদের কল্যাণ সাধনের জন্য সমান প্রাথমিক দ্রব্যসামগ্রীর প্রয়োজন আছে।
[7] এই সমস্ত প্রাথমিক দ্রব্যসামগ্রীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বিভিন্ন মৌল অধিকার, স্বাধীনতা, সুযোগ সুবিধা, আত্মসম্মান, আয়, সম্পদ প্রভৃতি।
ন্যায় সম্পর্কিত রলস-এর মতবাদের সমালোচনা
জন রলসের ন্যায় সম্পর্কিত মতবাদ বিরূপ সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। বিরুদ্ধবাদীরা মতবাদটির বিরূপ সমালোচনা প্রসঙ্গে বিভিন্ন যুক্তির অবতারণা করেন। রলসের মতবাদের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কিত বক্তব্যগুলি উল্লেখ করা আবশ্যক।
[1] সমালোচকদের অভিযোগ অনুযায়ী রলস্ তাঁর মতবাদের মাধ্যমে পুঁজিবাদকে সমর্থন করেছেন। পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে অব্যাহত রাখার ব্যাপারে রলস্ এক নূতন তাত্ত্বিক যুক্তির অবতারণা করেছেন। এ প্রসঙ্গে গাউবা তাঁর An Introduction to Political Theory শীর্ষক গ্রন্থ বলেছেন: “Rawls’s critics argue that he has discovered a justifiable ground for the continuance of the capitalist system on some speicified conditions.”
[2] ন্যায় সম্পর্কিত রলসের মতবাদ বহুলাংশে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী। রলসের মতবাদ অনুযায়ী ব্যক্তি মানুষ তার স্বাধীন ইচ্ছাবশেই যাবতীয় কষ্ট সহ্য করে। এই বক্তব্য সর্বাংশে সত্য নয়। রলসের মতবাদ নিতান্তই সীমাবদ্ধ অর্থে সামাজিক। সামাজিক এই অর্থে ন্যায়-নীতির ধারণায় রলস্ সমাজের দুর্বল শ্রেণীকে বাদ দেননি।
[3] ন্যায় সম্পর্কিত রলসের প্রথম নীতি ও দ্বিতীয় নীতির মধ্যে বিরোধ বর্তমান। প্রথম নীতিতে সমানাধিকার এবং সকলের জন্য অধিকারের কথা বলা হয়েছে। দ্বিতীয় নীতিতে অসাম্যকে সমর্থন করা হয়েছে। এই অসাম্য হল সর্বাধিক সুবিধাভোগী পক্ষ ও সর্বাধিক অসুবিধাভোগী পক্ষের মধ্যে।
[4] রলস্ অসাম্যমূলক ব্যবস্থার মধ্যেই সকলের জন্য স্বাধীনতার কথা বলেছেন। কিন্তু এই বক্তব্য বিভ্রান্তি জনক। অসম অবস্থায় অবস্থিত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে স্বাধীনতা হল অধিকতর বলবানদের স্বাধীনতা। এ হল দুর্বলকে দাবিয়ে রাখার জন্য শক্তিশালীদের স্বাধীনতা।
[5] রলস্ তাঁর মতবাদে স্বাধীনতার নীতিকেই অধিকতর সমর্থন করেছেন। সাম্য সম্পর্কেও রলসের উচ্চাশাযুক্ত বক্তব্য আছে, এ কথা ঠিক, কিন্তু স্বাধীনতার প্রতি তাঁর অধিক আগ্রহ অপ্রকাশিত থাকেনি। সাম্য সম্পর্কিত প্রথম নীতিতেই স্বাধীনতার অনুরাগী রলসের পরিচয় পাওয়া যায়। রলসের স্বাধীনতা প্রথম, বাকি সব তার অনুগামী।
[6] সমালোচকরা রলসের ‘বিভেদ নীতি’ বা ‘পার্থক্য নীতি’ (difference principle) -র সীমাবদ্ধতার কথা বলেছেন। রলস্ অসাম্য ও অন্যবিধ বিভেদ বা পার্থক্যের কথা স্বীকার করেছেন। অসাম্য-বৈষম্যের অস্তিত্বের কথা স্বীকার করেও তিনি বলেছেন যে জনসাধারণের মধ্যে সংযত ও সমঝোতার সৃষ্টি হবে। কিন্তু সমালোচকদের প্রশ্ন হল বিত্তবানরা সহজতর অংশীদার হবে বা সহযোগিতা করবে?
[7] রলসের মতানুসারে প্রাথমিক বা আদি অবস্থায় (Original position) ব্যক্তি-মানুষ আয়, সম্পদ ও ক্ষমতার বণ্টনের থেকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পছন্দ করবে মৌলিক স্বাধীনতাসমূহ (basic liberties)। কারণ এইভাবে মানুষ প্রাথমিক দ্রব্যসামগ্রী (primary goods) পাওয়ার ব্যাপারে উন্নততর সুযোগ-সুবিধা পাবে। সমালোচকরা প্রশ্ন তুলেছেন, তা যদি হয়, তাহলে মৌল স্বাধীনতাসমূহের মধ্যে সংঘাত দেখা দিলে কি হবে? রলসের মতবাদের এ প্রশ্নের কোন সন্তোষজনক জবাব পাওয়া যায় না। রলস্ শুধুমাত্র আশা পোষণ করেছেন যে, তাদের মধ্যে সহযোগিতার অবস্থার সৃষ্টি হবে।
[8] সমালোচকদের অভিযোগ অনুসারে আদি বা প্রাথমিক অবস্থা (original position) সম্পর্কিত রলসের বক্তব্য অস্পষ্টতা দোষে দুষ্ট। বিরুদ্ধবাদীদের প্রশ্ন হল যারা আদি অবস্থায় অবস্থিত নয়, তারা যারা আদি অবস্থায় অবস্থিত ছিল তাদের পছন্দ করা নীতিসমূহ কেন গ্রহণ করবে? প্রাথমিক অবস্থা সম্পর্কিত এবং পছন্দ করা নীতিসমূহ সম্পর্কে এই পক্ষপাতিত্ব ন্যায্যতা বা সুবিচারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এ প্রসঙ্গে সমাজবিজ্ঞানী স্যানডেল (M. Sandel) তাঁর Liberatism and the limits of Justice শীর্ষক গ্রন্থে মন্তব্য করেছেন: “(Original position) contains a strong individualistic bias…. The original position seems to pre-suppose not just a neutral theory of the good, but a liberal individualistic conception-….”
ন্যায় সম্পর্কিত রলস-এর মতবাদের মূল্যায়ন
সমালোচকদের বহু বিরূপ সমালোচনা আছে। ন্যায় সম্পর্কিত রলসের মতবাদের কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে। এ সব একেবারে অস্বীকার করা যাবে না। এতদ্সত্ত্বেও রলসের মতবাদের গুরুত্ব ও কালগত তাৎপর্য অনস্বীকার্য। ন্যায় সম্পর্কিত রলসের মতবাদের মূল্যায়নের জন্য কতকগুলি বিষয় উল্লেখ করা দরকার।
(ক) রলসের মতবাদের মধ্যে এমন কিছু শর্ত আছে যা পুঁজিবাদের সহায়ক। এ অভিযোগ বিরুদ্ধবাদী সমালোচকদের। কিন্তু এ কথা অস্বীকার করা যাবে না যে, সংশ্লিষ্ট শর্তসমূহ বাস্তবে রূপায়িত হলে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার নতুন একটি মানবিক চেহারা লাভ করবে। গাউবা তাঁর An Introduction to Political Theory শীর্ষক গ্রন্থে এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন: “In fact, Rawls has discovered a method for making procedural justice an instrument of meeting the requirements of social justice.”
(খ) জন রলসের ন্যায় সম্পর্কিত মতবাদ হল সময়োপযোগী একটি মতবাদ। বিংশ শতাব্দীর একটি পর্যায়ে উদারনীতিবাদ বিবিধ বিরূপ সমালোচনার কোপে পড়ে এবং হীনবল হয়ে যায়। রলসের মাতৃভূমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিদ্যমান ও প্রাধান্যকারী মূল্যবোধসমূহ এবং রাজনীতিক প্রতিষ্ঠানসমূহ প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। সমকালীন প্রতিষ্ঠান বিরোধী বিভিন্ন আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিকূল পরিস্থিতি-পরিমণ্ডলের সৃষ্টি হয়। বিরুদ্ধবাদীদের সমকালীন বিবিধ প্রশ্নের সম্যক সমাধান পাওয়া গেছে রলসের মতবাদে। সমাজবিজ্ঞানী সরঙ্গী (Sarangi) এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন: “There were questions about proper use of political power and just distribution of liberties and other social goods. Perhaps Rawls was responding to these historical developments and trying to represent a persuasive theoretical alternative to utilitarianism.”
(গ) জন রলসের ন্যায় সম্পর্কিত মতবাদ রাজনীতিক উদারনীতিবাদের সমর্থনের ভিত্তিকে অধিকতর সুদৃঢ় করেছে। রলসের মতবাদ আর্থনীতিক উদারনীতিবাদের থেকে স্বতন্ত্রভাবে রাজনীতিক উদারনীতিবাদের স্বাধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
(ঘ) জন রলস্ উদারনীতিবাদকে নতুন একটি সুদৃঢ় ভিত্তি প্রদানের সঙ্গে সঙ্গে উদারনীতিবাদের মধ্যে নতুন উৎসাহ ও জীবনীশক্তি সঞ্চারিত করেছেন। উদারনীতিবাদের মধ্যে নৈতিক গভীরতার অভাব ছিল; রলস্ এই অভাব পূরণ করেছেন। সমাজবিজ্ঞানী পারেখ (Bhiku Parekh) তাঁর Rethinking Multiculturalism Cultural Diversity and Political Theory শীর্ষক গ্রন্থে লিখেছেন: “He (Rawls) shows that men are not only materially but also morally and ontologically interdependent, that they grow together and complete one another and that the full development of each is inseparable from the full development of all within a just society. In taking this view, Rawls is able to relate liberty, equality and justice and to elucidate the radical dimension of liberalism.”
Leave a comment