প্রশ্নঃ বীমা চুক্তি কি? নৌ বীমা চুক্তিতে ‘জেনারেল এভারেজ’ ও ‘পার্টিকুলার এভারেজ’ কাকে বলে?

ভূমিকাঃ পৃথিবীর সকল দেশে বীমা প্রচলিত আছে। আমাদের দেশও তার ব্যতিক্রম নয়। অর্থাৎ আমাদের দেশেও অনেকগুলি বীমা কোম্পানি কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে ইসলামিক বীমা কোম্পানির ও প্রচলন হয়েছে। কিছু কিছু কাজে বাধ্যতামূলক বীমা করতে হয়। যেমনঃ গাড়ী ক্রয় করলে বাধ্যতামূলকভাবে তার বীমা করতে হয়।

বীমা চুক্তি (Insurance) কাকে বলেঃ বীমা সম্পর্কে বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন সংজ্ঞা দিয়েছে। এটি মূলতঃ এক প্রকার চুক্তি।

এ.এন. আগরওয়ালা এর মতে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে নির্দিষ্ট পরিমাণ ঝুঁকি বন্টনে সক্ষম এমন যৌথ ব্যবস্থাকে বীমা বলে।

অধ্যাপক মর্গানের মতে, বিশেষ জনগোষ্ঠীর সকলের কল্যাণ সাধনকে বীমা বলে।

সুতরাং বলা যায়, বীমা হলো একাধিক পক্ষের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি। এর মধ্যে কমপক্ষে দু’টি পক্ষ থাকবে। একপক্ষকে বলে বীমাকারী অন্য পক্ষকে বলে বীমাগ্রহীতা। একপক্ষ অর্থ প্রদান করবে অন্যপক্ষ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জীবন ও সম্পদের ক্ষতি হলে তার ক্ষতিপূরণের নিশ্চয়তা দিবে।

নৌ বীমা চুক্তিতে ‘জেনারেল এভারেজ’ কাকে বলে: সাধারণ গড়পড়তা ক্ষতিকে নৌ-বীমা চুক্তিতে জেনারেল এভারেজ বলে। সাধারণ গড়পড়তা ক্ষতি নিরূপনের জন্য নিম্নের উপাদান থাকা আবশ্যক-

(১) বিপদ মোকাবেলা : জাহাজ যখন সমুদ্রে যাত্রা করে তখন কোন দুর্ঘটনা বা অন্য কোন বিপদ, ঝড় ইত্যাদির সম্মুখীন হতে হবে।

(২) পণ্য সমুদ্রে নিক্ষেপ : বিপদের মধ্যে পড়লে কিছু পণ্য সমুদ্রে নিক্ষেপ করতে হবে। 

(৩) বিশেষ ব্যক্তির ক্ষতি হতে হবে : সমুদ্রের মধ্যে পণ্য নিক্ষেপের ফলে কোন বিশেষ ব্যক্তির ক্ষতি হতে হবে।

(৪) সকলের ক্ষতি বহন : এই ধরনের ক্ষতি সকল পক্ষকে বহন করতে হবে।

(৫) ইচ্ছাকৃত ক্ষতি : উল্লেখিত ক্ষতি ইচ্ছাকৃত হতে হবে।

(৬) আনুপাতিক হারে ক্ষতিপূরণ প্রদান : ক্ষতিগ্রস্ত পণ্যের মালিককে জাহাজের অবশিষ্ট পণ্যের মালিকগণ আনুপাতিক হারে ক্ষতিপূরণ প্রদান করবেন।

(৭) বীমা থেকে ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তী : পণ্যের মালিকগণ আনুপাতিকহারে বীমা থেকে ক্ষতিপূরণ পাবেন।

নৌ বীমা চুক্তিতে ‘পার্টিকুলার এভারেজ’ কাকে বলেঃ নৌ-বীমা চুক্তিতে যে ক্ষতি সাধারণ গড়পড়তার অন্তর্ভুক্ত নয় তাকে পার্টিকুলার এভারেজ বলে। নৌ-বীমা চুক্তি অনুযায়ী সমুদ্রে কোন দুর্ঘটনা ফলে জাহাজের ক্ষতি হলে বা কোন পণ্যের আংশিক ক্ষতি হলে ঐ পণ্যের মালিককেই ক্ষতি বহন করতে হয়। অবশ্য পরবর্তীতে এই ক্ষতি বীমাকারীর নিকট থেকে আদায় করা যায়। এটিকেই পার্টিকুলার এভারেজ বা বিশেষ গড়পড়ত ক্ষতি বলে।

যেমনঃ সমুদ্র যাত্রার সময় কোন জাহাজের মাস্তুল ভেঙ্গে গেল। উক্ত আংশিক ক্ষতি জাহাজের মালিককে বহন করতে হবে। সমুদ্র বক্ষে কোন জাহাজ নিরাপদ রাখার জন্য কোন পণ্য বিপজ্জনক মনে হলে উক্ত পণ্য সমুদ্রে নিক্ষেপ করতে হয়। এরূপ ক্ষেত্রে পণ্যের মালিককে ক্ষতির দায়-দায়িত্ব বহন করতে হয়। পরবর্তীতে উক্ত পণ্যের মালিক বীমাকারীর নিকট থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে পারবে।

উপসংহারঃ জীবন ও সম্পদের ভবিষ্যত ক্ষতির আশংকা মুক্ত রাখার জন্য বীমা কোম্পানি পরিচালিত হয়। বীমা কোম্পানিগুলি শর্ত সাপেক্ষে এই নিশ্চয়তা প্রদান করে।