ভারতীয়দের ক্ষোভ প্রশমনের উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সরকার সাংবিধানিক সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। এর অঙ্গ হিসেবে সরকার সাইমন কমিশন গঠন করে। এই কমিশন ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতে আসে। সাইমন কমিশনের বিরােধিতা করে ভারতের জাতীয়তাবাদী নেতা মতিলাল নেহরুর নেতৃত্বে নেহরু রিপাের্ট (১৯২৮ খ্রি.) রচিত হয়।

ভারতীয়দের ক্ষোভ: ভারতের সংবিধান রচনা করার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সরকার যে সাইমন কমিশন গঠন করে তাতে কোনাে ভারতীয় সদস্য স্থান পাননি। তা ছাড়া এই কমিশন গঠনকালে ভারত সচিব বার্কেনহেড (১৯২৪-২৮ খ্রি.) সংবিধান রচনার বিষয়ে ভারতীয়দের যােগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তােলেন। এসব ঘটনায় ভারতীয়রা অত্যন্ত অপমানিত ও ক্ষুধ হয়ে যােগ্য জবাব দেওয়ার উদ্যোগ নেয়।

সর্বদলীয় সম্মেলন: মুসলিম নেতা এম. এ. আনসারির নেতৃত্বে দিল্লিতে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত একটি সর্বদলীয় সম্মেলনে মতিলাল নেহরুর নেতৃত্বে গঠিত একটি কমিটির ওপর ভারতের ভবিষ্যৎ সংবিধান রচনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। মতিলাল নেহরু আগস্ট মাসে সর্বদলীয় সম্মেলনের লক্ষৌ অধিবেশনে ভারতে স্বায়ত্তশাসন প্রবর্তনের প্রস্তাব দিয়ে সংবিধানের একটি খসড়া পেশ করেন। এটি নেহরু রিপোের্ট নামে পরিচিত।

মহম্মদ আলি জিন্নার সভাপতিত্বে ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে (২৮ মার্চ) দিল্লিতে মুসলিম লিগের অধিবেশন বসে। এই অধিবেশনে জিন্না ভারতের মুসলিমদের স্বার্থে তাঁর বিখ্যাত ‘চোদ্দো দফা দাবি’ (Fourteen Points) পেশ করেন।

চোদ্দো দফা দাবি-সমূহ: মহম্মদ আলি জিন্নার চোদ্দো দফা দাবিগুলি ছিল一

  • ভারতে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার প্রবর্তন।

  • প্রদেশগুলিতে স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন।

  • আইন সভাগুলিতে মুসলিমদের যথেষ্ট সংখ্যক প্রতিনিধি নির্বাচনের সুযােগ দান।

  • মুসলিমদের জন্য কেন্দ্রীয় আইনসভায় ১/৩ অংশ আসন সংরক্ষণ।

  • মুসলিমদের জন্য পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।

  • বাংলা, পাঞ্জাব ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা বজায় রেখে ভারতের প্রদেশগুলির পুনর্গঠন।

  • সকল ধর্মীয় সম্প্রদায়কে ধর্মীয় স্বাধীনতা দান।

  • কোনাে আইনসভার কোনাে সম্প্রদায়ের ৩/৪ অংশ সদস্য কোনাে বিলের বিরােধিতা করলে তা প্রত্যাহার।

  • প্রাদেশিক আইনসভার অনুমতি ছাড়া সংবিধান পরিবর্তন না করা।

  • কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মন্ত্রীসভায় ১/৩ অংশ মুসলিম সদস্য গ্রহণ করা।

  • রাজ্য ও স্থানীয় সংস্থাগুলিতে মুসলিমদের জন্য পদ সংরক্ষণ করা।

  • সিন্ধু প্রদেশকে বােম্বাই প্রদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে নতুন প্রদেশ গঠন করা।

  • বেলুচিস্তান ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে সাংবিধানিক সংস্কার প্রবর্তন।

  • মুসলিম শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির সংরক্ষণ।

সমালােচনা: জিন্নার চোদ্দো দফা দাবিগুলি ছিল নেহরু রিপাের্টের প্রস্তাবগুলির সম্পূর্ণ বিপরীত ধরনের। চোদ্দো দফা দাবির অধিকাংশই গণতান্ত্রিক আদর্শের পরিপন্থী ছিল। কিন্তু মুসলিম সম্প্রদায় দাবিগুলি সমর্থন করে এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক উত্তাপ বৃদ্ধি পায়। মুসলিম ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যে রাজনৈতিক সুসম্পর্ক বিনষ্ট হয়।