মধুকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা ‘নীলধ্বজের প্রতি জনা’ ‘বীরাঙ্গনা কাব্য’ নামক পত্ৰকাব্যের অন্তর্গত একাদশতম কবিতাবিশেষ। পাশ্চাত্য কবি ওভিদের ‘হিরােইডাস’ নামক কাব্যগ্রন্থের অনুকরণে এই কাব্যগ্রন্থটি রচনার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন কবি। হিরােইডাস কাব্যে ১১ জন নায়িকা তাদের প্রিয়জনের উদ্দেশে অভিযােগ পত্র লিখেছিলেন। তারই অনুকরণে মধুসূদন দত্ত বাংলায় ১১ জন পৌরাণিক নারী চরিত্রের প্রিয়জনের উদ্দেশে লেখা অভিযােগ পত্র কল্পনা করেছেন। আধুনিক যুগে বসে, যুক্তিবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে মাইকেল মধুসূদন নারী ব্যক্তিত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাঁর কাব্যে পৌরাণিক নায়িকারা পুরােপুরি আধুনিক মানসিকতা নিয়েই তাদের যুক্তি প্রতিষ্ঠা করেছেন। আসলে পত্রের আকারে লেখা এই রচনাগুলিতে পাশ্চাত্য প্রভাব ছাড়াও বিদ্যাসাগরের নারীকেন্দ্রিক সামাজিক আন্দোলনের প্রভাবও লক্ষ করা যায়।
মধুসূদন দত্ত Blank Verse বা অমিত্রাক্ষর ছন্দে এই ১১টি পত্র রচনা করেছেন। এইগুলিকে পত্ৰকবিতা বলা হয়। পত্রের আকারে পৌরাণিক নারী চরিত্রগুলি তাদের অভিযােগ প্রকাশ করেছেন। বাংলা সাহিত্যে এটি প্রথম পত্রকবিতার মর্যাদা পায়। প্রথমে পত্রের আঙ্গিকে বিষয়বস্তু তুলে ধরা হয়েছে এবং কবিতার ভঙ্গিতে অভিযােগ জাহির করলেও এর ভাষা অনেকটাই স্বচ্ছ ও সাবলীল।
পৌরাণিক ঐতিহ্যের প্রতি মধুসূদন নিজের ভালােবাসার কথা প্রকাশ করেছিলেন তাঁর ব্যক্তিগত চিঠিতে- “I love the grand mythology of my ancestors.” ‘বীরাঙ্গনা কাব্য’-এর নীলধ্বজের প্রতি জনা’ পত্রটিরও কাহিনিসূত্র নেওয়া হয়েছে কাশীরাম দাসের মহাভারত থেকে। কিন্তু মধুসূদনের স্বাতন্ত্র্য হল জনার চরিত্রে উনিশ শতকের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী ঘটানাে। মহাভারতের জনাও স্বামী নারীচেতনার বিকাশ নীলধ্বজের, পুত্রের হত্যাকারী পার্থের সঙ্গে সখ্যকে মানতে না পেরে প্রতিবাদে গর্জন করে উঠেছিলেন। মধুসূদন সেই পুরাণ প্রতিমাকেই তাঁর কবিতার নায়িকা করেছেন। কিন্তু যেভাবে পার্থের চরিত্রকে যুক্তিশৃঙ্খলার সাহায্যে জনা রূপ দিতে চেষ্টা করেছেন তা যথার্থই আধুনিক মানের প্রকাশ। কুন্তী, দ্রৌপদী প্রমুখের চরিত্রকেও একইরকম যুক্তিবিন্যাসে হীনভাবে তুলে ধরেছেন জনা। অর্থাৎ শুধু প্রতিবাদ নয়, নীলধ্বজের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ নয়, তাকে স্বধর্মে ফিরিয়ে আনতে নিজের বুদ্ধিবৃত্তি ও মননকে কাজে লাগিয়েছেন মধুসূদনের জনা। পরিপার্শ্বসচেতন, যুক্তিবাদী, ব্যক্তিত্বসম্পন্না এই জনা একান্তভাবেই মধুসূদনের সৃষ্টি।
মধুসূদনের জনা নারীর অসহায়তার প্রতিমূর্তিও বটে- “কুলনারী আমি নাথ, বিধির বিধানে/পরাধীনা!” যুগ যুগ ধরে অবমানিত নারীত্বের প্রতীক হয়ে ওঠেন মধুসূদনের জনা। মহাভারতের মতাে একমুখী প্রতিবাদী চরিত্র নয়; ক্ষোভে-দুঃখে, অভিমানে, বিলাপে মধুসূদনের জনা এক রক্তমাংসের মানুষ।
পুরাণের কাহিনি এবং চরিত্রসমূহকে অবলম্বন করে মাইকেল মধুসূদন দত্তের নীলধ্বজের প্রতি জনা রচিত হলেও এই কবিতা মধুসূদনের নিজস্ব ব্যক্তিচেতনায় উজ্জ্বল। আর সেই ব্যক্তিচেতনার প্রেক্ষাপটে রয়েছে উনিশ শতকের নবজাগরণের চেতনা।
পুত্রহস্তা পার্থের সঙ্গে স্বামী নীলধ্বজের সখ্য রানি জনা কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি। “ক্ষত্রধক্ম্ম, ক্ষত্রকর্ম্ম সাধ ভুজবলে” -জনার এই আহ্বানে ব্যক্তিগত আদর্শের প্রতি যে দায়বদ্ধতা, তা নবজাগরণই আমাদের শিখিয়েছিল।
পার্থ-কুন্তী এবং দ্রৌপদীর চরিত্রের নীচতা এবং হীনতা প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে জনা যেভাবে যুক্তির সাহায্য নিয়েছেন, পরিপার্শ্ব এবং ঘটনাপ্রবাহকে বিশ্লেষণ করেছেন তা একান্তভাবেই নবজাগরণের মানসিক গঠনের পরিণতি। পাঙালী লােকমাতা রমা কিংবা পার্থ ‘রথীকুল পুর এই সব ধারণাকে ভ্রান্ত প্রমাণ করতেই সচেষ্ট হয়েছেন তিনি। অদৃষ্টের পরিহাসের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানাের চেষ্টাও জনার মধ্যেই দেখা যায়। শেষপর্যন্ত আত্মবিসর্জনের মাধ্যমে নিজের আদর্শকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা যেভাবে জনা করেছেন তা নতুন যুগচেতনাজাত মানসিকতারই ফসল। এভাবেই নবজাগরণ নীলধ্বজের প্রতি জনা কবিতায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রভাববিস্তারকারী বিষয় হয়ে উঠেছে।
পত্রকাব্য হল কবিতার এক বিশেষ ধরন যেখানে চিঠির আঙ্গিকে কবিতা লেখা হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পত্রকাব্যের ইংরেজি প্রতিশব্দ epistles’-এর উৎস হল লাতিন শব্দ epistula’, যার অর্থ letter। চিঠির মতােই এখানে সরাসরি সম্বােধনে কবিতা লেখা হয়। পত্রকাব্য রচিত হতে পারে কথ্যভাষায় কিংবা বিধিবদ্ধ রীতিতে। এর বিষয় হতে পারে দার্শনিক অনুসন্ধান থেকে ব্যক্তিগত প্রেম। রীতি হতে পারে অন্ত্যমিল যুক্ত কিংবা গদ্যকবিতা—যে-কোনাে কিছুই। ওভিদ তার ‘হিরােইডস্-এর মাধ্যমেই প্রথম সার্থক পত্রকাব্যের সূচনা করেন। মধুসূদন মূলত এর দ্বারাই প্রভাবিত হয়েছিলেন।
নীলধ্বজের প্রতি জনা কবিতার মূলগ্রন্থ বীরাঙ্গনা কাব্য’-কে বন্ধু রাজনারায়ণ বসুর প্রতি এক চিঠিতে মধুসূদন বর্ণনা করেছিলেন এইভাবে—’Heroic Epistles from the most noted Puranic women to their lovers or lords’ ( পুরাণের সব থেকে উল্লেখযােগ্য নারীচরিত্রদের তাদের প্রিয়তম বা ঈশ্বরের উদ্দেশে বীরত্বপূর্ণ পত্রসমূহ)। মাহেশ্বরী পুরীর যুবরাজ প্রবীর পাণ্ডবদের অশ্বমেধ যজ্ঞের ঘােড়া ধরলে পার্থ তাকে যুদ্ধে বধ করেন। এই অবস্থায় রাজা নীলধ্বজ পুত্রহত্যার প্রতিশােধ গ্রহণে সচেষ্ট হওয়ার বদলে অগ্নির পরামর্শে পার্থের সঙ্গে সন্ধি করেন। এতে হতাশ এবং মানসিকভাবে বিধ্বস্ত রাজমাতা জনা নীলধ্বজকে উদ্দেশ করে যে পত্ৰকবিতা লেখেন, তারই নাম নীলধ্বজের প্রতি জনা।
‘গালিলিও’ প্রবন্ধ অবলম্বন করে গালিলিও-র চরিত্রের প্রতিবাদী সত্তার পরিচয় দাও।
গ্যালিলিও প্রবন্ধে বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু গালিলিওর আপসকামী মনােভাবের যে পরিচয় দিয়েছেন তা নিজের ভাষায় লেখাে।
‘গালিলিও’ প্রবন্ধ অবলম্বন করে গালিলিওর জন্মস্থান পিসায় অতিবাহিত হওয়া তার ছেলেবেলার পরিচয় দাও।
“গণিতের অধ্যয়নবাসনাই প্রবল হয়ে উঠল।” -প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলাে কীভাবে গালিলিওর গণিতের অধ্যয়ন- বাসনা প্রবল হয়ে উঠেছিল?
প্রথম যৌবনে স্বদেশে থাকাকালীন সংসার চালানাের জন্য কীভাবে লড়াই করতে হয়েছিল গালিলিও-কে, তা গালিলিও প্রবন্ধ অবলম্বনে লেখাে।
‘গালিলিও’ প্রবন্ধ অবলম্বনে ভেনিস রাষ্ট্র এবং পাড়ুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গালিলিও-র আঠারাে বছরের কর্মজীবনের বিবরণ দাও।
দূরবিনের আবিষ্কার ভেনিসনিবাসী গালিলিওর জীবনকে কীভাবে প্রভাবিত করেছিল?
“এখানেই শুরু হল তাঁর প্রকৃত বিজ্ঞানীর জীবন।” -প্রকৃত বিজ্ঞানীর’ সেই জীবন বর্ণনা করাে।
‘গালিলিও’ প্রবন্ধ অবলম্বনে পাড়ুয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গালিলিওর স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের ইতিবৃত্ত বর্ণনা করাে।
স্বদেশে ফেরার পর দেশের ধার্মিক ও শিক্ষিত মানুষদের সঙ্গে কীভাবে গালিলিও সংঘাতে জড়িয়ে পড়লেন, তা গালিলিও প্রবন্ধ অবলম্বনে লেখাে।
“আর এক কারণে তাঁর সব আবিষ্কার ও মতামত শুধু পণ্ডিত মহলে আবদ্ধ রইল না।” -কারণটি বিস্তৃতভাবে পর্যালােচনা করাে।
গালিলিওর শেষ ন’বছরের জীবনকথা গালিলিও’ প্রবন্ধ অবলম্বনে লেখাে।
“তখনকার দিনে ধার্মিক পণ্ডিতেরা এসব বিশ্বাস করতে চাইলেন না।” -ধার্মিক পণ্ডিতরা কী বিশ্বাস করতে চাইলেন না এবং কেন?
“প্রথমে Inquisition রায় দিলেন যে,” -কী রায় দিয়েছিলেন তা প্রসঙ্গ উল্লেখ করে লেখাে।
‘গালিলিও’ প্রবন্ধ অবলম্বন করে কার্ডিনাল বেলারিমিনের পরিচয় দাও।
গালিলিওর পিতৃ-পরিচয় লিপিবদ্ধ করে শিক্ষার্থী গালিলিওর তার্কিক মনােভাবের পরিচয় দাও।
দূরবিন আবিষ্কার করার ফলে ভেনিস কর্তৃপক্ষের নিকট কীভাবে গালিলিওর কদর বেড়ে গিয়েছিল?
স্বদেশে ফিরে এসে দূরবিনে চোখ রেখে গালিলিও কী কী আবিষ্কার করেছিলেন?
“এই সময় ফ্লোরেন্সের এক বন্ধুকে লেখা চিঠির থেকে কয়েক লাইনের সারাংশ উদ্ধৃত হলাে”—চিঠিটি লেখার কারণ বর্ণনা করে চিঠিটির সারাংশ নিজের ভাষায় লেখাে।
“১৬০৯ সালে ঘটল এক নতুন ব্যাপার” -১৬০৯ সালে ঘটা নতুন ব্যাপারটি উল্লেখ করে এই সূত্রে কোন্ ঘটনা গালিলিওকে আমােদ’ দিয়েছিল তা লেখাে।
“১৬১২ সালের মে মাসে তিনি চিঠিতে লিখলেন”—চিঠি লেখার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে চিঠিটির বক্তব্য নিজের ভাষায় লেখাে।
“এই স্বভাবই শেষ জীবনে তার অশেষ দুঃখের কারণ হলাে” -কার কোন্ স্বভাবের কথা বলা হয়েছে? সেই স্বভাব তার শেষ জীবনে অশেষ দুঃখের কারণ হলাে কীভাবে?
গালিলিও-র ছাত্রজীবন সম্পর্কে যা জান লেখাে।
গালিলিও’ প্রবন্ধটির নামকরণের সার্থকতা বিচার করাে।
‘গালিলিও’ প্রবন্ধ অনুসরণে গালিলিওর বিজ্ঞানসাধনার পরিচয় দাও।
“নিজের দূরবিন নিয়ে গালিলিও অনেক নতুন আবিষ্কার করলেন।”—দূরবিনের সাহায্যে গালিলিও কী কী আবিষ্কার করলেন? সনাতনীরা তার বিরুদ্ধতা করেছিলেন কেন?
সত্যেন্দ্রনাথ বসুর ‘গালিলিও’ প্রবন্ধ অবলম্বনে প্রখ্যাত বিজ্ঞানী গালিলিওর পরিবারের পরিচয় দাও। পারিবারিক দায়িত্ব পালনে গালিলিওর ভূমিকা আলােচনা করাে।
“গালিলিও রাজি হলেন,”—কোন্ ব্যাপারে রাজি হয়েছিলেন গালিলিও? গালিলিওর জীবনের শেষ পাঁচ বছরের পরিচয় দাও।
Leave a comment