নির্বাচনী আচরণ কাকে বলে?
নির্বাচনী আচরণ বিষয়ক আলোচনার মূল উদ্যোক্তা বা প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসাবে আধুনিককালের আচরণবাদী রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের কথা বলা হয়। আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানে নির্বাচনী আচরণ সম্পর্কিত আলোচনা বিশেষ গুরুত্ব অর্জন করেছে এবং জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। নির্বাচকমণ্ডলীর নির্বাচন সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত বা সমর্থনের সঙ্গে সংযুক্ত উপাদানসমূহের ভূমিকা ও পারস্পরিক সম্পর্কই হল নির্বাচনী আচরণ। নির্বাচনী রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কাজকর্ম, সিদ্ধান্ত ও আচরণ নির্বাচনী আচরণের অংশ হিসাবে বিবেচিত হয়। বিদ্যমান রাজনীতিক ব্যবস্থায় সামগ্রিক রাজনীতিক আচরণের একটি অত্যন্ত তাৎপর্য অংশ হল নির্বাচনী আচরণ। নির্বাচনী রাজনীতির সঙ্গে নির্বাচনী আচরণ বা ভোটদাতাদের আচরণ অঙ্গাঙ্গীভাবে সম্পর্কযুক্ত। রাজনীতিক দিক থেকে নির্বাচন হল একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া। ভোটদাতাদের যে সমস্ত সিদ্ধান্ত, কার্যকলাপ ও আচরণ এই প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত তাকে নির্বাচনী আচরণ বলে। নির্বাচনী রাজনীতির সঙ্গে নির্বাচনী আচরণ ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কযুক্ত।
নির্বাচনী আচরণ আলোচনার গুরুত্ব:
নির্বাচনী আচার-আচরণের আলোচনা বর্তমানে রাজনীতিক বিচার-বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসাবে বিবেচিত হয়। অ্যালান বল তাঁর Modern Poli tics and Government শীর্ষক গ্রন্থে এ বিষয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন: “The complex role of elections in the political system is underlined by an examination of the voting behavious of electorates.” যে-কোন রাজনীতিক ব্যবস্থায় রাজনীতিক সংস্কৃতি ও রাজনীতিক আচরণ অনুধাবন করার জন্য নির্বাচনী আচরণ বা ভোটদাতাদের আচরণ সম্পর্কে সম্যকভাবে অবহিত হওয়া আবশ্যক। নির্বাচনী আচরণ সম্পর্কিত পর্যালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যমান রাজনীতিক ব্যবস্থা ও রাজনীতিক জীবন সংক্রান্ত বিষয়ে সাধারণভাবে নাগরিকদের মনোভাব ও মতামতের পরিচয় পাওয়া যায়। বস্তুত বিদ্যমান রাজনীতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে নাগরিকদের দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রতিক্রিয়া অনুধাবনের ক্ষেত্রে নির্বাচনী আচরণ আলোচনার গুরুত্ব ও তাৎপর্য বিরোধ-বিতর্কের ঊর্ধ্বে।
নির্বাচনী আচরণ পর্যালোচনার উদ্দেশ্য:
যে-কোন দেশের রাজনীতিক প্রক্রিয়া পর্যালোচনার ক্ষেত্রে নির্বাচনী আচরণ বা ভোটদাতাদের আচরণ হল একটি অর্থবহ উপায়। নির্বাচকমণ্ডলীর নির্বাচনী আচার আচরণ অনুধাবনের মাধ্যমে কতকগুলি বিষয়ে অবহিত হওয়া যায়। নির্বাচনে কোন রাজনীতিক দল বা প্রার্থীর প্রতি সমর্থন জ্ঞাপনের ক্ষেত্রে নির্বাচকরা কোন কোন উপাদান বা বিষয়ের দ্বারা প্রভাবিত হন তা যথাযথভাবে নির্ধারণ করা যায়। এবং নির্ধারক এই সমস্ত উপাদানের গুরুত্ব এবং পারস্পরিক সম্পর্ক প্রসঙ্গেও অবহিত হওয়া যায়। নির্বাচনী আচরণ বিচার-বিশ্লেষণ করলে নির্বাচকমণ্ডলীর রাজনীতিক সংস্কৃতি অনুধাবন করা যায়। আবার বিদ্যমান রাজনীতিক ব্যবস্থার স্থায়িত্ব বা পরিবর্তন প্রসঙ্গে ভোটদাতাদের অভিমত অনুধাবন ও মূল্যায়নের উদ্দেশ্যেও নির্বাচনী আচরণ পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। এইভাবে বিদ্যমান রাজনীতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে বহু ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রতীয়মান হয়। রাজনীতিক নেতৃবৃন্দ এই সমস্ত তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিক বিষয়ে অপেক্ষাকৃত যুক্তিসঙ্গতভাবে নীতি নির্ধারণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন।
বলের অভিমত অনুসারে নির্বাচনী আচার-আচরণ:
সাবেকী উদারনীতিক গণতান্ত্রিক প্রতিনিধিত্বের মতবাদে নির্বাচকমণ্ডলীর বিচারবিবেচনা ও যুক্তিবোধের উপর অপরিসীম আস্থার কথা বলা হয়ে থাকে। অ্যালান বলের অভিমত অনুসারে এখন এই ধারণা অচল। তিনি বলেছেন: “The classical liberal view of a rational elector choosing between the competing programmes of several candidates and selecting a representative on the basis of his, the elector’s economic self-interest, his appreciation of what he rationally deduces to be the national interest, or what he believes to be his own political values, no longer can be substantiated.” সাম্প্রতিককালের সমীক্ষকদের সিদ্ধান্ত অনুসারে নির্বাচনী আচার-আচরণ সব সময় নীতিগত বিচার-বিবেচনার দ্বারা প্রভাবিত হয় না। পারিবারিক রাজনীতিক আনুগত্য, সামাজিক শ্রেণী ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয়ের দ্বারা নির্বাচনী আচরণ প্রভাবিত হয়ে থাকে। বল বলেছেন: “…that policy issues have little effect on how the elector uses his vote and that voters inherit party loyalties from their families, usually based on such factors as social class.” যে-কোন দেশের বিদ্যমান রাজনীতিক দলগুলির মধ্যে সাবেকী ধারণা অনুসারে কোন্টি বামপন্থী বা কোন্টি দক্ষিণপন্থী এ বিষয়ে নির্বাচক-মণ্ডলীর কোন সুস্পষ্ট ধারণা আছে কিনা সে বিষয়ে বল তার সংশয় ব্যক্ত করেছেন। গ্রেট ব্রিটেনে সম্পাদিত এক সমীক্ষা থেকে জানা গেছে যে সমর্থন নিজ দলের নীতি সম্পর্কে এবং দলকে সমর্থন করার কারণ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণার অভাব আছে। একজন সমীক্ষক দেখিয়েছেন যে নির্বাচকমণ্ডলীর মধ্যে মাত্র দশ শতাংশ নীতিগত বিচার-বিবেচনার ভিত্তিতে নির্বাচনী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। বল বলেছেন: “In fact it has been argued that a considerable minor ity, especially among Labour Party supporters, is more in agreement with the op posing party’s policies than their own.”
Leave a comment