সমাজ দ্বারা স্থাপিত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সচেতনভাবে এবং উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে নির্দিষ্ট পাঠক্রম অনুসারে নির্দিষ্ট এবং যােগ্য ব্যক্তি (শিক্ষক) দ্বারা শিক্ষার্থীদের যে বিশেষ শিক্ষাদান করা হয়, তাই হল প্রথাবদ্ধ বা বিধিবদ্ধ বা নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা।

(১) নির্দিষ্ট লক্ষ্য অনুযায়ী পরিকল্পিত: নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা পরিকল্পিত হয় নির্দিষ্ট লক্ষ্যের প্রেক্ষিতে। রাষ্ট্রের দর্শন, মনােবিদ্যা, ব্যক্তিগত ও সামাজিক প্রত্যাশা প্রভৃতিকে ভিত্তি করে শিক্ষার লক্ষ্য স্থির করা হয়।

(২) নির্দিষ্ট সূচিদ্বারা সীমাবদ্ধ: নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার একটি নির্দিষ্ট সূচি থাকে। একাধিক নিয়মনীতির ওপর ভিত্তি করে এই সূচি প্রস্তুত করা হয়।

(৩) নির্দিষ্ট পাঠক্রম: নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার ব্যক্তির চাহিদা, সমাজের প্রত্যাশা, বিষয়ের প্রকৃতি, শিখনের মনস্তত্ত্ব ইত্যাদির পরিপ্রেক্ষিতে ওই পাঠক্রম নির্ধারণ করা হয়।

(৪) যোগ্য শিক্ষক দ্বারা পরিচালিত: নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল, এই শিক্ষা যােগ্য এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের দ্বারা পরিচালিত হয়।

(৫) কঠোর শৃঙ্খলা: নিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় কঠোর শৃঙ্খলা দেখা যায়। শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক উভয়কেই এই শৃঙ্খলা মেনে চলতে হয়। শৃঙ্খলার অভাব দেখা দিলে নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার কার্যক্রম বিপর্যস্ত হয়।

(৬) নির্দিষ্ট বয়সের শিক্ষার্থী: নিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের বয়স আগে থেকেই নির্দিষ্ট করা থাকে।

(৭) নির্দিষ্ট স্থান: নিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী প্রত্যেককেই একটি নির্দিষ্ট স্থানে উপস্থিত হতে হয়।

(৮) নিয়মিত উপস্থিতি: নিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় ছুটির দিনগুলি ছাড়া প্রতিদিনই নির্দিষ্ট সময়ে শিক্ষার্থীকে শিক্ষালয়ে উপস্থিত হতে হয় এবং নির্দিষ্ট সময়ের জন্য শিক্ষালয়ে থাকতে হয়।

(৯) শিক্ষক-শিক্ষার্থীর প্রত্যক্ষ সম্পর্ক: নিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক পরস্পর মুখােমুখি আলােচনায় অংশ নেয়।

(১০) নিয়মিত পরীক্ষা: নিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় শিক্ষার্থী পাঠ্য বিষয়গুলির ওপর কতখানি জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করেছে তা জানার জন্য নিয়মিত পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। পরীক্ষায় পারদর্শিতার প্রেক্ষিতেই শংসাপত্র বা উচ্চতর শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়।

(১১) রাষ্ট্রের ভূমিকা: অধিকাংশক্ষেত্রেই নিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় আর্থিক দায়দায়িত্ব এবং পরিচালনার ভার রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে থাকে।

নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার উপরােক্ত বৈশিষ্ট্যগুলি পর্যালােচনা করলে দেখা যায় যে, এই শিক্ষা সুপরিকল্পিত এবং পূর্বনির্ধারিত। শিক্ষার পাঠক্রম, ভরতির সময়সীমা, পরীক্ষাব্যবস্থা সবই নির্দিষ্ট। এই শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়কেই নির্দিষ্ট রীতিনীতি ও শৃঙ্খলা মেনে চলতে হয়। উভয়ের মধ্যে শ্রদ্ধা ও ভালােবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে।