প্রশ্নঃ 
নিয়ন্ত্রণ কাকে বলে? নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন দিক আলোচনা কর। 

নিয়ন্ত্রণ (Control): সংগঠনে পরিকল্পনা ও আদেশ নির্দেশ অনুযায়ী সব কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদিত ও পরিচালিত হচ্ছে কি না তা দেখার কাজই হলো নিয়ন্ত্রণ। একজন কার্যনির্বাহী নিম্নোক্ত অবস্থা বিদ্যমান থাকলে তাঁর বিভাগ বা একককে সুষ্ঠুভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেনঃ

১। পরিকল্পনাকে সুনিশ্চিত কর্মসূচি, নীতি এবং কার্যপদ্ধতিতে রূপায়িত;

২। সুষ্ঠু সাংগঠনিক ব্যবস্থা বা কাঠামোর উপস্থিতি এবং অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক সমঝোতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত;

৩। পর্যাপ্ত সংখ্যক কর্মচারী, অর্থ এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধার প্রাপ্যতা;

৪। কর্ম সম্পাদন সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশ।

নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন দিক (Different Sides of control): নিচে নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে আলোকপাত করা হলোঃ

(ক) কর্তৃত্ব হিসেবে নিয়ন্ত্রণঃ প্রায়শ এরূপ উক্তি শোনা যায় যে, “ঐ বিভাগ বা অফিসের উপর জনাব ‘গ’-এর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।” এরূপ ক্ষেত্রে কর্তৃত্বের অবস্থানকেই বুঝায়। কর্তৃত্ব এবং নিয়ন্ত্রণের মধ্যে একটা সাধারণ সম্পর্ক রয়েছে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের কর্তৃত্ব বলতে কাজ করার আদেশ দেয়ার ক্ষমতা এবং কাজ সম্পাদন ও তত্ত্বাবধান করবার ক্ষমতাকেও বুঝায়। এ দিক থেকে প্রতিটি কার্যনির্বাহীর কার্য সম্পাদন নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রয়েছে। এটি তার কাজের একটি অংশ এবং এর জন্য সবসময় লিখিত আদেশের প্রয়োজন হয় না।

(খ) ফলাফল মূল্যায়নের ভূমিকায় নিয়ন্ত্রণঃ অনেক কার্যনির্বাহী সীমিত এবং প্রায়োগিক অর্থে ‘নিয়ন্ত্রণ’ শব্দটি ব্যবহার করেন। যখন তারা নিয়ন্ত্রণের প্রক্রিয়ার কথা বলেন তখন যার মাধ্যমে কাজটি পরিকল্পনা ও সময়সূচি মোতাবেক সম্পাদিত হওয়া সম্পর্কে অবগত হতে পারেন সে ধরনের বিভিন্ন কৌশল ও উপায়ের কথা উল্লেখ করেন। কার্যাদি পরীক্ষা, সম্পাদিত কাজের অগ্রগতির মূল্যায়ন ও ফলাফলের বিশ্লেষণ প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ার মাধমেই সম্পন্ন হয়ে থাকে। আকাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জনের উদ্দেশ্যেই নিয়ন্ত্রণ-ব্যস্থাকে গড়ে তুলতে হবে। কোন একটি কর্ম সম্পাদন প্রক্রিয়ায় কার্যনির্বাহীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে এ কথা তখনই বলা যাবে, যখন তিনি নিশ্চিত হতে পারেন যে কাজটি নির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে যাচ্ছে এবং সম্পাদিত কাজটি উদ্দেশ্য অর্জনে সফল হয়েছে।

(গ) সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় নিয়ন্ত্রণঃ কোন কাজই সহজভাবে সম্পাদিত হয় না। কেবল একটি কার্য সম্পাদন নিয়ে কোন কার্যনির্বাহীর সন্তুষ্ট থাকা উচিত নয়। তিনি কাজটি যেভাবে সম্পাদন করতে চান বা যেভাবে সম্পাদান করলে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাবে বলে মনে করেন তার ঠিক সেভাবেই সম্পাদন করার চেষ্টা করা উচিত। তার কাজে নানা অসুবিধা, প্রতিবন্ধকতা, বিপদ দেখা দিতে পারে। সে জন্য তাকে সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে এবং এগুলো মোকাবিলার জন্য তাঁকে সাহস, প্রত্যয় সঞ্চয় করতে হবে। কার্যকরী ও সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণ যথার্থ এবং সময়োচিত তথ্যের উপর নির্ভর করে। নিম্নোক্ত উপায়ে তথ্য প্রবাহিত হয়ঃ

১। প্রতিবেদনঃ প্রধানত পরিকল্পনা এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রতিবেদন অত্যন্ত প্রয়োজন। প্রতিবেদন যাতে যান্ত্রিক এবং এতে ভুল তথ্যের সমাবেশ না ঘটে সেদিকে বিশেষ সর্তকতা অবলম্বন করা উচিত। যে কোন প্রতিবেদন ব্যবস্থায় সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বিলম্বে প্রেরিত প্রতিবেদনের কোন উপযোগিতা নেই । প্রতিবেদন প্রেরণের ফরম সুচিন্তিতভাবে প্রণয়ন করা উচিত যাতে তথ্য প্রাসঙ্গিক ও সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় এবং কোন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বাদ পড়ে না যায়।

২। পরিদর্শনঃ পরিদর্শন সাধারণভাবে দ্বৈতকার্য সম্পাদন করে। একদিকে প্রতিবেদনের যথার্থতা এবং অপরদিকে কার্য সম্পাদনের গুণগত দিক পরীক্ষা করেই পরিদর্শনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য যথেষ্ট সহায়ক এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদঘাটন করা হয়।

৩। নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি হিসেবে বাজেটের ভূমিকাঃ সংসদ অনুমোদিত অর্থ বরাদ্দের মধ্যেই প্রশাসনিক সংস্থাসমূহকে কার্যাদি সম্পাদন করতে হয়। কোন প্রকল্প ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সম্ভাব্য ব্যয়ের অগ্রিম হিসাব দাখিল করতে হয় এবং এরূপ ব্যয় এবং তার ফলাফল পরীক্ষা করেই অর্থ বরাদ্দ করা হয়। এ ছাড়া হিসাব-পদ্ধতি এবং অর্থ অনুমোদন নিয়মাবলির মাধ্যমেও অধিক নিয়ন্ত্রণ আরোপ কার্যকর করা হয়।

(ঘ) কার্যনিয়ন্ত্রণঃ কার্য-প্রক্রিয়া তুলনামূলকভাবে দক্ষতার সাথে অগ্রসর হচ্ছে কি না তা এরূপ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে তত্ত্বাবধান করা হয়। কার্য তত্ত্বাবধানের সময় অযোগ্যতা, অপচয় এবং অন্যান্য ক্ষতি হয়ে থাকলে তা নির্দেশ করা হয় যাতে এগুলো যথাসময়ে সংশোধন করা যায়।

(ঙ) অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণঃ অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে সহজ ও সাধারণ পদ্ধতি হলো উপযুক্ত কাজের নির্ধারিত মান নির্ণয় করা এবং প্রতিটি সম্পাদিত কাজকে নির্ধারিত মানের সাথে তুলনা করে দেখা। এরূপ নির্ধারিত মান অধস্তন কর্মচারীর সহযোগিতায় নির্ণয় করতে হয়। এ নির্ধারিত কার্যমান সংগঠনে স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার ভূমিকা পালন করে এবং যখন কোন কাজ নির্ধারিত মানের পর্যায়ে সম্পাদন করা হয় না তখন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গৃহীত হয়।

(চ) অত্যধিক নিয়ন্ত্রণঃ কোন সংগঠনে বা বিষয়ে অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ (Overcontrol) ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হলে তার ফলাফল খারাপ হয় এবং এতে অনেক সমস্যাও দেখা দেয়। এরূপ নিয়ন্ত্রণ কর্মচারীর উদ্যোগ, কর্মানুরাগকে নিষ্ক্রিয় করে এবং কর্মচারীর মনে চরম হতাশার ভাব জাগ্রত করে। সংগঠনের কার্য সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য অতিমাত্রায় নিয়ন্ত্রণ অবশ্যই পরিহার করা উচিত। তাছাড়া এরূপ নিয়ন্ত্রণ মানুষের সহজাত প্রকৃতির বিরোধী হিসেবে কাজ করে।