প্রসঙ্গ: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ ছোটগল্পে আমরা দেখি যে, ফুটপাথে অনাহার মৃত্যু দেখার পর অফিসের মাইনের দিন মৃত্যুঞ্জয় সব টাকা নিখিলের হাতে দেয় ত্রাণ তহবিলে দান করার জন্য। বিস্মিত নিখিলের প্রশ্নের উত্তরে সে জানায় যে তারা সস্ত্রীক একবেলার ভাত না খেয়ে নিরন্ন মানুষদের দান করে দিচ্ছে। টুনুর মা অসুস্থ বলে মৃত্যুঞ্জয় তাকে খেতে বললেও পতিব্রতা স্ত্রী তা শােনে না। এই প্রসঙ্গেই নিখিল এমনটা ভাবছিল।

নিখিলের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য : মৃত্যুঞ্জয়ের সহকর্মী নিখিলও একজন হৃদয়বান, সামাজিক মানুষ। কিন্তু অনাহার-মৃত্যু দেখে ভেঙেপড়া মৃত্যুঞ্জয়কে লক্ষ করে তার মনে হয়েছে যে, সব মানুষের সব সহানুভূতি অনাহারীদের খিদের আগুনে ঢাললেও তা নিভবে না, উলটে তা ইন্ধনই পাবে। তার মতে ভিক্ষাদানের মতাে পাপকর্ম সাধারণ মানুষের কাছে সৎকর্ম হিসেবে বিবেচিত হয় বলেই মানুষের অন্নের দাবি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। ত্রাণের ফলে কিছু লােক খেতে পেলেও আড়ালে থাকা আরও অনেক মানুষ না খেতে পেয়েই মারা যায়। তার মতে, এই অবস্থায় আহার বিলাসিতা অন্যায় হলেও উপােস করে মারা যাওয়াটাও একান্তই অনুচিত। কারণ, নীতি ধর্ম নয়, সমাজ ধর্মের দিক থেকেই নিখিল মনে করে, দশজনকে খুন করার থেকে বড় অপরাধ হল নিজে না খেয়ে মরা। মৃত্যুঞ্জয়ের ভাববাদী আদর্শের বিপরীতে এই ভাবনার মাধ্যমে নিখিলের চরিত্রের বাস্তববাদী বৈশিষ্ট্যই প্রকাশিত হয়েছে।