প্রশ্নঃ নালিশের সংজ্ঞা দাও। কোন বিষয়ে নালিশ প্রাপ্তির পর ম্যাজিষ্ট্রেট কগনিজেন্স নিয়ে কি কি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন। একজন দায়রা জজ অথবা দায়রা আদালত কখন একটি অপরাধের ‘কগনিজেন্স’ নিতে পারেন?

নালিশ (Complaint): ফৌজদারী কার্যবিধির ৪ (এইচ) ধারায় নালিশ এর সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এই ধারা অনুসারে নালিশ হচ্ছে, কোন জানা বা অজানা ব্যক্তি কোন অপরাধমূলক কার্য করেছে এই মর্মে ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ করা এই উদ্দেশ্যে যে, তিনি এই কার্যবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। পুলিশ কর্তৃক রিপোর্ট এর অন্তর্ভুক্ত নয়। অপরাধমূলক কার্য বলতে প্রচলিত আইন দ্বারা শাস্তিযোগ্য কোন কাজ বা নিবৃত্তি বুঝায় [৮ (৩) ধারা]।

উপাদানঃ এই সংজ্ঞাটি বিশ্লেষণ করলে নালিশের উপাদানসমূহ নিম্নরূপ-

(১) ইহা ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট করা হয়। 

(২) ম্যাজিষ্ট্রেট এই কার্যবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এ উদ্দেশ্যেই এটা করা হয়। 

(৩) এতে বলা হয় যে, কোন ব্যক্তি, সে জ্ঞাত বা অজ্ঞাত হোক, কোন অপরাধমূলক কার্য করেছে। 

(৪) এরূপ নালিশ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি করতে পারে অথবা অপরাধ সম্পর্কে যে অবগত আছে সে নালিশ করতে পারে। 

(৫) এই নালিশ লিখিতভাবে বা মৌখিকভাবে পেশা করা যায়। 

৬. পুলিশের রিপোর্ট এর অন্তর্ভূক্ত নয়।

ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক পদক্ষেপ গ্রহণঃ অপরাধমূলক কার্যের নালিশ প্রাপ্তির পর ১৯০ ধারার বিধান মতে ম্যাজিষ্ট্রেট তা আমলে গ্রহণ করতে পারেন। আমলে নেয়ার পর ম্যাজিষ্ট্রেটকে কি পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে তা ২০০ হতে ২০৫ ধারায় উল্লেখ রয়েছে। এগুলি নিম্নরূপঃ-

১. বাদীর জবানবন্দী গ্রহণ (Examination of the Complainant): নালিশ প্রাপ্তির পর ২০০ ধারার বিধান মতে, বাদীর ও উপস্থিত সাক্ষীগণের শপথ গ্রহণ পূর্বক জবানবন্দী গ্রহণ করবেন এবং তা পরীক্ষা করবেন। জবানবন্দীর সারাংশ লিপিবদ্ধ করে। এতে বাদী ও সাক্ষীর স্বাক্ষর নিবেন এবং ম্যাজিষ্ট্রেট নিজে স্বাক্ষর করবেন। তবে লিখিত নালিশ হলে ১৯২ ধারা মতে অন্য আদালতে স্থানান্তরের পূর্বে উক্ত ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক জবানবন্দী গ্রহণের প্রয়োজন নাই। এছাড়া কোন আদালত বা কোন সরকারী কার্য সম্পাদনের ব্যাপারে কোন সরকারী কর্মচারী কর্তৃক লিখিত নালিশ করা হলে, সেক্ষেত্রে বাদীর জবানবন্দী গ্রহণের প্রয়োজন হয় না।

২.

ম্যাজিষ্ট্রেটের এখতিয়ার বহির্ভূত হলেঃ যে ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট নালিশ করা হয়েছে সেই ম্যাজিষ্ট্রেটের যদি তা বিচার করার এখতিয়ার না থাকে তবে লিখিত নালিশের ক্ষেত্রে যথাযথ মন্তব্য লিপিবদ্ধ করে উপযুক্ত আদালতে পেশ করার নির্দেশ দিয়ে নালিশটি ফেরত দিবেন। মৌখিক নালিশের ক্ষেত্রে ম্যাজিষ্ট্রেট অভিযোগকারীকে সরাসরি যথাযথ আদালতে যাবার জন্য মৌখিক নির্দেশ দিবেন। (২০১ ধারা)।

৩. কার্যধারা স্থগিত রাখাঃ নালিশকৃত অপরাধের বিচার করা যদি ম্যাজিষ্ট্রেটের থাকে কিংবা যে অপরাধের বিচার সম্পন্ন করার জন্য ১৯২ ধারা অনুসারে তাঁর নিকট স্থানান্তর করা হয়েছে সে সম্পর্কে, যদি তিনি প্রয়োজন মনে করেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তলব না করে নালিশের সত্যতা নিরূপণের জন্য অনুসন্ধান বা তদন্ত করাতে পারেন। তিনি নিজে বা অন্য কোন ম্যাজিষ্ট্রেটকে দিয়ে অনুসন্ধান করাতে পারেন কিংবা কোন পুলিশ অফিসার বা অন্য কোন ব্যক্তি দ্বারা তদন্ত করাতে পারেন।

অবশ্য কোন আদালত কর্তৃক এরূপ নালিশ দায়ের করা হলে এবং সে আদালত কর্তৃক ২০০ ধারা মতে বাদী ও সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়ে থাকলে এরূপ অনুসন্ধান বা তদন্তের প্রয়োজন হয় না। যে ক্ষেত্রে ম্যাজিষ্ট্রেট মনে করেন যে, নালিশকৃত অভিযোগটির বিচার একমাত্র দায়রা আদালতে হবার যোগ্য তাহলে তিনি আসামীকে তলব না করে অভিযোগের সত্যতা যাচাই এর জন্য নিজে বা অন্য ম্যাজিষ্ট্রেট দ্বারা অনুসন্ধান করাবেন বা কোন পুলিশ অফিসার দ্বারা তদন্ত করাবেন। (২০২ ধারা)।

৪. নালিশ খারিজ করাঃ ২০৩ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, ২০২ ধারা মোতাবেক অনুসন্ধান বা তদন্তের পর যদি কার্যক্রম গ্রহণ করার মত পর্যাপ্ত কারণ নেই, তবে সেক্ষেত্রে তিনি উক্ত মামলাটি খারিজ করতে পারবেন এবং এর প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা তিনি লিপিবদ্ধ করবেন।

৫. সমন বা ওয়ারেন্ট জারিঃ ফৌজদারী কার্যবিধির ২০৪ ধারায় বলা হয়েছে যে, ম্যাজিষ্ট্রেট যদি মনে করেন যে, কার্যক্রম গ্রহণ করার মত পর্যাপ্ত কারণ রয়েছে, তবে তিনি অপরাধের গুরুত্ব অনুসারে আসামীর প্রতি সমন বা ওয়ারেন্ট ইস্যু করতে পারেন। নিজের এখতিয়ার না থাকলে অন্য আদালতে হাজির হবার জন্য আসামীকে নির্দেশ দিতে পারেন। এই ধারায় আরো বলা হয়েছে যে, বাদীপক্ষ সাক্ষীর তালিকা দাখিল না করলে এরূপ সমন বা ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হবে না। এছাড়া প্রত্যেক সমন বা ওয়ারেন্টের সাথে লিখিত নালিশের এক অনুলিপি দিতে হবে। এছাড়া আইনে নির্ধারিত ফিস জমা না দেয়া পর্যন্ত এ প্রক্রিয়া শুরু করা হবে না।

৬. ব্যক্তিগত হাজিরা অব্যাহতিঃ ২০৫ ধারায় বলা হয়েছে যে, ম্যাজিষ্ট্রেট যুক্তিসংগত মনে করলে কোন আদালতে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ব্যক্তিগতভাবে আদালতে হাজির হওয়া হতে অব্যাহতি দিয়ে তার আইনজীবীর মাধ্যমে হাজিরা দিবার অনুমতি দিতে পারেন। তবে অনুসন্ধানকারী বা বিচারকারী ম্যাজিষ্ট্রেট যথাযথ মনে করলে মামলার যে কোন পর্যায়ে আসামীকে ব্যক্তিগতভাবে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিতে পারেন এবং আদালতে হাজির হতে বাধ্য করতে পারেন।

২০৫ (সি) ধারায় বলা হয়েছে যে, আসামী হাজির হলে বা হাজির করা হলে ম্যাজিষ্ট্রেট যদি বুঝতে পারেন যে, সংশ্লিষ্ট অপরাধটি একমাত্র দায়রা আদালতে বিচার্য, তবে তিনি সংশ্লিষ্ট নথিপত্রসহ মামলাটি দায়রা আদালতে সোপর্দ করবেন। একইভাবে মামলাটি প্রধান মেট্টোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট বা জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট বা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক বিচার্য বলে মনে হলে ২০৫ (সি সি) ধারা অনুসারে তার আদালতে স্থানান্তর করা হবে।

২০৫ (ড) ধারায় বলা হয়েছে যে, কোন নালিশী মামলার অনুসন্ধানকালে ম্যাজিষ্ট্রেট যদি জানতে পারেন যে, সংশ্লিষ্ট অপরাধ সম্পর্কে একটি পুলিশী তদন্ত চলছে, তাহলে তিনি তার কার্যক্রম স্থগিত রাখবেন এবং পুলিশ রিপোর্টের ভিত্তিতে নালিশী মামলার বিচার করবেন।

কখন একজন দায়রা জজ একটি অপরাধের ‘কগনিজেন্স’ নিতে পারেনঃ ফৌজদারী মামলা বিচারের ব্যাপারে দায়রা আদালতের প্রাথমিক এখতিয়ার নেই। ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত প্রাথমিক . বিচারের পর গুরুতর অপরাধের বিচার করার জন্য ফৌজদারী কার্যবিধির ২০৫ ধারা মোতাবেক দায়রা আদালতে সোপর্দ করবেন। মামলাটি গ্রহণ করার পর এই কার্যবিধির ১৯৩ ধারা অনুযায়ী দায়রা আদালত মামলাটির উপর সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রয়োগ করতে পারেন। ১৯৭৮ সালে এ সম্পর্কে এরূপ পরিবর্তন করা হয়েছে। যে আসামীকে পুলিশ নির্দোষ ঘোষণা করেছে প্রয়োজনবোধে দায়রা আদালত তাকেও সমন করতে পারেন।

সরকার সে মর্মে নির্দেশ দান করলে একজন অতিরিক্ত দায়রা জজ ও সহকারী দায়রা জজ ১৯৩ ধারায় একটি অপরাধের কগনিজেন্স নিতে পারেন এবং প্রাথমিক বিচার করতে পারেন।