অথবা, নারী উন্নয়নের ক্ষেত্রে GAD এর গুরুত্ব বর্ণনা কর।
অথবা, নারী উন্নয়নের ক্ষেত্রে GAD কতটুকু কার্যকরী তা আলোচনা কর।
ভূমিকাঃ অনাদি অনন্তকালের মহান স্রষ্টার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি এই মানবসমাজ। সৃষ্টির সেই অসহায় জীবনের নানাবিধ চড়াই-উত্রাই পেরিয়ে জ্ঞান, বিজ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ হয়ে বিশ্বসমাজ একবিংশ শতাব্দীতে পদার্পণ করেছে। মানব সমাজের সৃষ্টিশীল এ অর্জনে পুরুষের কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছে নারী। এজন্যই হয়তবা কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন- ‘বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’ তাই সব সমাজেই পুরুষের পাশাপাশি নারীদের ভূমিকা ও গুরুত্ব অপরিসীম, নারীদের এই উল্লেখযোগ্য ভূমিকাতে কিছু সংগঠন/প্রতিষ্ঠান প্রত্যক্ষ/পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছিল। যেমনঃ GAD। নিম্নে এ সম্পর্কে লেখা হলো-
জেন্ডার এন্ড ডেভেলপমেন্ট (Gender and Development – GAD) :
উৎপত্তি (Origin) : জেন্ডার এবং উন্নয়ন- ধারণাটি WID এবং WAD এর বিকল্প হিসেবে ১৯৮০ এর দশকে উদ্ভব হয়। GAD জেন্ডার, শ্রেণি, বর্ণ ও উন্নয়নের মধ্যে সংযোগ ও সংঘাত উদ্ঘাটন করে।
তত্ত্বগত দিক (Theoretical Basis) : সমাজতান্ত্রিক নারীবাদী চিন্তা দ্বারা প্রভাবিত। সমাজতন্ত্রী নারীবাদীরা সামাজিক গঠন এবং পুনরুৎপাদনকেই নারী নিপীড়নের ভিত্তি হিসেবে চিহ্নিত করে। তারা নারী এবং পুরুষের মধ্য ক্ষমতা সম্পর্কের প্রতি দৃষ্টিপাত করে এবং বিভিন্ন সমাজে পুরুষ ও নারী উভয়ের প্রচলিত ভূমিকার প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
মনোযোগ (Focus) : নারীর জীবনের সকল ক্ষেত্রের সামগ্রিক উপলব্ধিগত দৃষ্টিভঙ্গি দাবি করে। নারী পুরুষের প্রচলিত ভূমিকা নির্ধারণের ভিত্তি সম্পর্কে প্রশ্ন তোলে।
সহায়ক কর্ম কৌশল (Accompanying Strategies): (১) শ্রেণি সংহতির কথা বলে কিন্তু শ্রেণি বিভক্তিকে অস্বীকার করে না ।(২) সামাজিক সেবা এবং এ সংক্রান্ত সামাজিক অবকাঠামো প্রবর্তনের মাধ্যমে নারী মুক্তিকে ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ মনে করে ।(৩) সামাজিক পরিবর্তন এবং সমাজের বর্তমান নারী-পুরুষের মধ্যকার ক্ষমতা সম্পর্ক পুনঃবিন্যাসের দাবি করে, যা বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে শক্তির ভারসাম্য সৃষ্টি করবে।
ধারণা (Assumption)/ হস্তক্ষেপমূলক দৃষ্টিভঙ্গি : সম্পদ ব্যবহারের সক্ষমতা নারীর সীমিত, তাই রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। জেন্ডারের সামাজিক সম্পর্কের পূর্ণবন্টন জরুরি বলে মনে করা হয়। পরিবর্তন ওপর থেকে চাপিয়ে দিয়ে নর-নারীরা নিজেরাই পরিবর্তন প্রক্রিয়ার উদ্যোগ এবং নিয়ন্ত্রক হবে। শ্রেণি নির্বিশেষে নারীর সংহতি শুধু সম্ভাবনা নয়, আশু প্রয়োজনও বটে। নারীরা এককভাবে কাজ করতে পারে নাই, তাই তাদের পুরুষের সাথে সংযোগ প্রয়োজন।
অবদান (Contribution) : শুধুমাত্র নারী স্বাধীনতার ওপর বিশেষভাবে জোর দেয় না, অনুভূতিপ্রবণ মানুষের অবদানকেও স্বাগত জানায়। GAD অর্থনৈতিক উৎপাদনসমূহ গৃহের ভেতর ও বাইরের কাজের অবদানকে স্বীকৃতি দেয়।
বৈশিষ্ট্য (Features) : GAD সরকারি ও বেসরকারি দ্বি-বিভাজনকে পরিত্যাগ করে GAD তথাকথিত ব্যক্তিগত সম্পত্তির বদৌলতে পরিবারে নারীর ওপর নিপীড়নের দিকে বিশেষ গুরুত্বারোপ করে । নারী মুক্তি ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে সামাজিক সেবা প্রদানে রাষ্ট্রিয় কর্তব্যের ওপর জোর দেয় । নারীকে উন্নয়নের সহায়ক বা পরোক্ষ অংশিদাররূপে নয় বরং পরিবর্তনের প্রতিনিধি হিসেবে দেখে আরো কার্যকর রাজনৈতিক মুখপাত্র হবার জন্য নারীদের নিজেদের সংগঠিত হবার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়। GAD সমাজের পুরুষ ও নারীর মধ্যকার বর্তমান ক্ষমতা সম্পর্কের পূর্নবিন্যাসের প্রেক্ষিতে কথা বলে।
সীমাবদ্ধতা (Limitations) :
(১) বাস্তবায়ন কঠিন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিরোধ সৃষ্টি হবে।
(২) সমাজের কাঠামোগত পরিবর্তনের দৃঢ় অঙ্গীকার দাবি করে।
(৩) নারীদের নিজেরাই তাদের শ্রেণিগত স্বার্থের সংঘাত এবং সেই সাথে অন্যান্য আদর্শগত সংঘাত মিটমাট করা প্রয়োজন বলে মনে করা হয়।
নারী ও পরিবেশ (Women and Environment – WED) :
উৎপত্তি (Origin) : নারী এবং পরিবেশ- নিয়ে আলোচনা শুরু হয় ১৯৭০ এর দিকে পশ্চিমা দেশগুলোতে। ১৯৭০ সালে Ecology এর সাথে মহিলাদের সম্পর্ক বোঝাতে USA তে Eco-Familism ধারণার প্রসার হয়। ১৯৮০ এর দিকে নারী ও পরিবেশের মধ্যে আন্তঃসম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে যে নীতিমালার উদ্ভব হয়, তাকে সংক্ষেপে WED বলে।
তত্ত্বগত দিক (Theoretical Perspective) : নারী, উন্নয়ন ও পরিবেশ (WED) প্রত্যয়গুলো এমন ঘনিষ্ঠ যেন একটি মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ পশ্চিমা তাত্ত্বিকরা Women and Environment-এর এই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে বিভিন্ন তাত্ত্বিক কাঠামো দ্বারা দেখানোর চেষ্টা করেছে। মূলত তারা ৩টি তত্ত্বের কথা বলেছেন- (1) Technocontrism (2) Ecocontrism (3) Ecofeminism.
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, নারী উন্নয়নের ক্ষেত্রে WAD, WID WED এবং GAD কোনোটিরই গুরুত্ব কম নয়। প্রত্যেকেই নারী উন্নয়নের জন্য নানা কর্মসূচির মাধ্যমে নারীবাদী আন্দোলকে অগ্রগামী করেছেন। যার ফলে সমাজ থেকে নারীর প্রতি সকল প্রকার সহিংসতা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। এসকল আন্দোলনের কারণে নারী তাদের অধিকারের ব্যাপারে অনেক সচেতন হয়েছে। তাই নারী উন্নয়নে এগুলোর গুরুত্ব অসীম।
Leave a comment