যে-কোনাে রাষ্ট্রেরই উন্নতির ক্ষেত্রে সেদেশের মহিলাদেরও গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে। মানব সম্পদের পরিপূর্ণ বিকাশ, সামাজিক ন্যায় স্থাপন, গৃহপরিবেশের উন্নতি তথা পরিবার পরিকল্পনার জন্য নারীশিক্ষার একান্ত প্রয়ােজন। স্বাধীনােত্তরকালে ভারতবর্ষে নারীশিক্ষার প্রসারে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। ১৯৪৮-৪৯ খ্রিস্টাব্দে গঠিত রাধাকৃষ্মণ কমিশন, ১৯৫২-৫৩ খ্রিস্টাব্দে গঠিত মুদালিয়র কমিশন, ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে শ্রীমতি দুর্গাবাঈ দেশমুখ-এর নেতৃত্বে গঠিত National Council for Women Education (NCWE) নারীশিক্ষার উন্নতিকল্পে বিবিধ সুপারিশ করেছিল। পরবর্তীকালে জাতীয় নারীশিক্ষা পর্ষদ ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে শ্ৰীমতী হংসরাজ মেহতার নেতৃত্বে মেয়েদের পাঠক্রম সংক্রান্ত নানা সমস্যার সমাধান ও তাদের পাঠক্রম রচনার জন্য একটি কমিটি নিয়ােগ করে। নানাবিধ সুপারিশ সত্ত্বেও নারীশিক্ষার অবস্থার সন্তোষজনক উন্নতি ঘটেনি। গ্রাম, পার্বত্য এলাকা ও পশ্চাৎপদ অঞ্চলের মেয়েরা নানা কুসংস্কারের শিকার। গ্রামাঞ্চলে মেয়েদের শিক্ষার দ্রুত প্রসারের উদ্দেশ্যে নারীশিক্ষার প্রতি উদাসীনতার কারণ অনুসন্ধানের জন্য জাতীয় নারীশিক্ষা পর্ষদ ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে আরও একটি কমিটি গঠন করে, যার সভাপতি হন শ্রীভক্তবৎসল। এই কমিটি নারীশিক্ষার উন্নয়নকল্পে যেসব সুপারিশ করে সেগুলি হল—
(১) নারীশিক্ষার জন্য জনগণের সাহায্যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে।
(২) গ্রামাঞ্চলে শিক্ষিকা ও ছাত্রীদের জন্য ছাত্রাবাসের ব্যবস্থা করতে হবে।
(৩) শিক্ষিকা হওয়ার জন্য মেয়েদের উৎসাহিত করতে হবে ও চাকুরির অবস্থার উন্নতি ঘটাতে হবে।
(৪) সংসারী মহিলাদের জন্য গ্রামে আংশিক সময়ের জন্য শিক্ষকতা করার ব্যবস্থা করতে হবে।
(৫) দরিদ্র ছাত্রীদের স্কুল থেকে বিনামূল্যে পােশাক ও বই দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
(৬) প্রাথমিক স্তরে সহশিক্ষার প্রচলন করতে হবে।
(৭) বেসরকারি উদ্যোগের সাহায্য নিয়ে স্কুলগৃহ নির্মাণ করতে হবে।
(৮) শিক্ষিকাদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি করতে হবে।
(৯) নারীশিক্ষা বিষয়ে যাবতীয় কুসংস্কার ও রক্ষণশীলতা দূর করতে হবে।
(১০) বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য সম্মেলন, বেতার প্রচার, শিক্ষা সহায়ক উপকরণ সরবরাহ, ছাত্রী সংগ্রহ করা ও এসব কাজের জন্য জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের সাহায্য প্রয়ােজন।
(১১) যেসব অঞ্চল দুর্গম পার্বত্য বা অনগ্রসর, সেখানে অতিরিক্ত বেতন ও ভাতা দিয়ে শিক্ষক নিয়ােগ করতে হবে।
(১২) গ্রামাঞ্চলের শিক্ষিকাদের শিক্ষক-শিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে ভরতির জন্য অগ্রাধিকার দিতে হবে।
(১৩) বিদ্যালয় পরিদর্শনের জন্য মহিলা পরিদর্শক নিয়ােগ করতে হবে, যাতে শিক্ষার মান উন্নত হয় এবং অপচয় ও অনুন্নয়ন হ্রাস পায়।
(১৪) নারীশিক্ষার যাবতীয় ব্যয়ভার কেন্দ্রীয় সরকারকে গ্রহণ করতে হবে।
(১৫) নারীশিক্ষাকে উৎসাহিত করার জন্য একে অবৈতনিক করতে হবে ও বাধ্যতামূলক করার জন্য রাজ্য সরকারকে কেন্দ্রের সাহায্যে আইন তৈরি করতে হবে।
(১৬) যেখানে ৩০০ জনের মতাে জনসংখ্যা সেখানে ১ মাইলের মধ্যে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৫০০ জনের বসতি থাকলে ৩ মাইলের মধ্যে একটি মিডল স্কুল ও ৫ মাইলের মধ্যে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে।
Leave a comment