‘নারীবাদ’ কাকে বলে এ বিষয়ে সংক্ষেপে স্পষ্ট করে কিছু বলা সহজ নয়। নারীবাদের ধারণাকে সংজ্ঞায়িত করা সহজ কাজ নয়। ‘নারীবাদী’ ও ‘অ-নারীবাদী’ নির্বিশেষে এরকম অনেক মানুষ আছেন যাঁদের কাছে ‘নারীবাদ’ কথাটি খুব বেশী অর্থবহ নয়। ‘নারীবাদ’ ও ‘নারীবাদী’ কথাগুলি স্বতঃপ্রমাণিত। এ কথাগুলি স্বীকৃত ও সুপ্রতিষ্ঠিত। সুতরাং এ বিষয়ে বৌদ্ধিক আলোচনার এমন কোন প্রয়োজন নেই। এরকম একটা ধারণা অনেকের মধ্যে বর্তমান। কিন্তু সাম্প্রতিককালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের তাত্ত্বিক আলোচনায় নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গি বিশেষ গুরুত্ব লাভ করেছে।
অন্যান্য মতবাদের মতই নারীবাদের তাত্ত্বিক বা ধারণাগত ভিত্তি কোন একক মতাদর্শগত কাঠামোর ভিত্তিতে গড়ে উঠেনি। এই কারণে সর্বকালে ও সকল মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নারীদের এমন কোন নির্দিষ্ট সংজ্ঞার সৃষ্টি হয়নি। ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে সুদৃঢ় বাস্তব এবং সচেতনতা, ধ্যান-ধারণা ও ক্রিয়াকর্মের মানের উপর নারীবাদ প্রতিষ্ঠিত। এই কারণে নারীবাদের সংজ্ঞার পরিবর্তন হতে পারে এবং হয়। মনে করা হয় যে সপ্তদশ শতাব্দীতেই ‘নারীবাদ’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করা হয়। তখন নারীবাদের যে অর্থ ছিল, এই একবিংশ শতাব্দীর গোড়ায় নিশ্চয়ই আর তা নেই। আবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, এমনকি একই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মহিলাদের ‘নারীবাদ’ কথাটি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার করতে দেখা যায়। এই ধারণাগত পার্থক্যের কারণ হিসাবে শ্রেণীগত পটভূমি, শিক্ষার মান, সচেতনতা প্রভৃতি ক্ষেত্রে পার্থক্যের কথা বলা হয়। আবার একই ধরনের মহিলাদের মধ্যেও নারীবাদী চিন্তা-চেতনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধারা ও বিতর্ক বর্তমান। বিশেষত পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও পুরুষ প্রাধান্যের ঐতিহাসিক ভিত্তি; নারী-পুরুষ, জাতি, বর্ণ ও শ্রেণীগত বৈষম্যযুক্ত ও শোষণহীন সমাজের জন্য মহিলাদের সংগ্রামের সিদ্ধান্ত প্রভৃতি বিষয়েও মতানৈক্য বর্তমান।
মতপার্থক্যের অস্তিত্বসত্ত্বেও নারীবাদের একটি গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। কমলা ভাসিন ও নিঘত সইদ খান তাঁদের Feminism শীর্ষক এক পুস্তিকায় এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন। নারীবাদ হল সমাজে, কর্মক্ষেত্রে ও পরিবারের মধ্যে মহিলাদের উপর শোষণ-পীড়ন সম্পর্কে সচেতনতা এবং এই অবস্থা পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে নারী ও পুরুষের সচেতন উদ্যোগ-আয়োজন। কমলা ভাসিন ও নিঘাত সইদ খান বলেছেন: “(Feminism is an awareness of women’s oppression and exploitation in society, at work and within the family, and conscious action by women and men to change this situation.” উল্লিখিত সংজ্ঞা অনুযায়ী যে ব্যক্তি নারী-পুরুষের মধ্যে অসাম্য বৈষম্য, পিতৃতন্ত্র ও পুরুষ-প্রাধান্যের অস্তিত্বকে অনুধাবন করে এবং এর বিরুদ্ধে কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করে, তাকেই নারীবাদী বলা যায়। অর্থাৎ একজন নারীবাদী লিঙ্গগত বৈষম্য চিহ্নিত করার সঙ্গে সঙ্গে পুরুষজাতির প্রাধান্যমূলক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সক্রিয় হবেন। একজন নারীবাদী নানাভাবে নারীনির্যাতন ও পুরুষের স্বৈরাচারী আচরণের বিরুদ্ধে সক্রিয় হতে পারেন।
আগেকার দিনে নারীবাদীদের আন্দোলনের উদ্দেশ্য মহিলাদের জন্য গণতান্ত্রিক অধিকারসমূহ আদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এই সমস্ত অধিকারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: শিক্ষার অধিকার, ভোটাধিকার, সম্পত্তির অধিকার, চাকরির অধিকার, আইনসভায় নির্বাচিত হওয়ার অধিকার, বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকার, পরিবার পরিকল্পনার অধিকার প্রভৃতি। অর্থাৎ সমাজে মহিলাদের আইনগত সমানাধিকার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে আইনমূলক সংস্কার সাধনের কর্মসূচীর মধ্যে নারীবাদীদের কাজকর্ম সীমাবদ্ধ ছিল। আধুনিককালে নারীবাদীদের কর্মসূচীর পরিধি আইনগত সংস্কার সাধনের সীমাকে ছাড়িয়ে গেছে। নারীবাদীরা নারীমুক্তির উপর অধিক গুরুত্ব আরোপের পক্ষপাতী। সাম্প্রতিককালে নারীবাদী আন্দোলনের অন্তর্ভুক্ত বিষয়াদি হল গৃহের মধ্যে নারীর অধীনতামূলক অবস্থানের অবসান, পরিবারের মধ্যে নারীর উপর শোষণ-পীড়নের অবসান; সমাজ-সংস্কৃতি ও কর্মক্ষেত্রে নারীর অবদমিত অবস্থানের অবস্থান প্রভৃতি। কমলা ভাসিন ও নিঘাত সইদ খান বলেছেন : “..feminism challenges the very notions of feminity and masculinity as mutually exclusive, biologically determined categories.” সকল রকমের বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সঙ্গে সঙ্গে নারীবাদে রাষ্ট্র সমাজ ও পুরুষদের দ্বারা সৃষ্টি সকল রকম শোষণ-পীড়ন থেকে নারীজাতির স্বাধীনতা বা মুক্তির কথা বলা হয়। আধুনিককালে নারীবাদের মূল কথা হল গৃহের ভিতরে ও বাইরে নারীজাতির জন্য সাম্য, স্বাধীনতা, মর্যাদা সুনিশ্চিত করার জন্য সফল আন্দোলন সংগঠিত করা। ভাসিন ও খান (Kamala Bhasin and Nighat Said Khan) এ প্রসঙ্গে বলেছেন: “In its essence then, present day feminsm is a struggle for the achievement of women’s equality, dignity and freedom of choice to control our lives and bodies within and outside the home.”
সাধারণভাবে বলা যায় যে, পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থা বা ধারার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া হিসাবে নারীবাদী ধ্যান ধারণার উদ্ভব ও বিকাশ ঘটেছে। এক্ষেত্রে ‘পিতৃতন্ত্র’ বলতে সাবেকি বৃহৎ পরিবারে পিতা বা পিতৃপ্রতিম পুরুষের সর্বময় কর্তৃত্বের ব্যবস্থাকে বোঝান হয় না। এ ক্ষেত্রে পিতৃতন্ত্র বলতে নারীর উপর পুরুষের কর্তৃত্ব কায়েম রাখার সামাজিক ব্যবস্থাকেই বোঝান হয়েছে। পুরুষতান্ত্রিকতা বলতে হতভাগ্য নারীদের উপর পাষণ্ড পুরুষদের পীড়নমূলক আচরণকেও বোঝান হয় না। নারীবাদী চিন্তাবিদদের কাছে পিতৃতন্ত্র হল একটি ধারণা বিশেষ। পিতৃতন্ত্র হল নারী ও পুরুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বিষয়ক এক ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থার মধ্যে স্বীকৃত ও প্রতিষ্ঠিত থাকে পুরুষজাতির এক ধরনের প্রতীকী ক্ষমতা। এই ক্ষমতার সুবাদে নারীজাতির উপর পুরুষজাতির সামগ্রিক কর্তৃত্ব কায়েম থাকে। ব্যক্তি-পুরুষের স্বেচ্ছাচার পিতৃতন্ত্র নয়। পিতৃতন্ত্রের একটি প্রাতিষ্ঠানিক মাত্রা বর্তমান। আর্থনীতিক, সামাজিক-সংস্কৃতিক, ধর্মীয়, রাজনীতিক প্রভৃতি ক্ষেত্রে পিতৃতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক অভিব্যক্তি পরিলক্ষিত হয়।
পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নারীজাতিকে নিয়ন্ত্রণের প্রচলিত পদ্ধতিসমূহ সম্পর্কে কমলা ভাসীন সুস্পষ্টভাবে আলোচনা করেছেন। ঘরের এবং ঘরের বাইরের কাজকর্মের ক্ষেত্রে মহিলাদের উৎপাদন ক্ষমতা পুরুষের নিয়ন্ত্রণাধীন। মহিলাদের গৃহকর্ম সামাজিক উৎপাদনের অংশ হিসাবে পরিগণিত হয় না। ঘরের বাইরে কাজের ব্যাপারে মহিলারা স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে না। ব্যক্তি-পুরুষের হস্তক্ষেপের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিস্থিতি-পরিমণ্ডলের প্রতিকূলতাও এক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। নারীত্ব- মাতৃত্বের যুগ্ম আদর্শের মূল হল নারীর প্রজনন ক্ষমতা। পুরুষ, রাষ্ট্র ও ধর্মের সম্মিলিত প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রণ নারীর প্রজনন প্রক্রিয়ার উপর পরিলক্ষিত হয়। নারীর যৌনতার অধিকারও পরুষ-নিয়ন্ত্রিত। পুরুষের যৌনতৃপ্তির উপায় হিসাবেই নারীর যৌনতা স্বীকৃত।
অর্থনীতিতে পুরুষের আধিপত্য অনস্বীকার্য। সম্পত্তির ভাগ ও ভোগের ক্ষেত্রেও পুরুষের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত। আইনী ব্যবস্থাদির ক্ষেত্রেও পুরুষের দাপট দেখা যায়। রাজনীতির জগতেও পুরুষের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত।
নারীবাদীরা নারী-পুরুষের মধ্যে ক্ষমতার সম্পর্ক আলোচনার জন্য ‘পিতৃতন্ত্র’ কথাটি ব্যবহার করে থাকেন। হেউড তাঁর Political Ideologies শীর্ষক গ্রন্থে মন্তব্য করেছেন: “Feminists use the concept of ‘patriarchy’ to describe the power relationship between men and women.” সাবেকি রাজনীতিক তত্ত্ব নারীজাতির উপর পুরুষের অত্যাচারের বিষয়টিকে রোবরই অগ্রাহ্য করে এসেছে। ঐতিহ্যগত রাজনীতিক মতবাদসমূহে লিঙ্গগত ভেদাভেদের বিষয়টির রাজনীতিক তাৎপর্যকে কখনই স্বীকার করা হয়নি। এই অবস্থায় নারীবাদীরা নতুন ধারণা ও মতবাদ গড়ে তুলতে বাধ্য হয়েছেন। নারীবাদীদের উদ্দেশ্য হল নতুন মতাদর্শের মাধ্যমে এই বক্তব্য তুলে ধরা যে, লিঙ্গগত অসাম্য-বৈষম্য ও পীড়নমূলক ব্যবস্থার ভিত্তিতে এই সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। এই ধারণার ভিত্তিতে নারীবাদীরা ‘লিঙ্গগত রাজনীতি’ (sexual politics)-র তত্ত্ব গড়ে তুলেছেন। এ ক্ষেত্রে তুলনীয় বিষয় হিসাবে ‘শ্রেণীগত রাজনীতি’ ( Class politics )-র ধারণা স্মরণীয়। জাতিগত ভেদাভেদ ও জাতিগত পীড়নের মতই, নারীবাদে লিঙ্গগত ভেদাভেদ ও লিঙ্গগত পীড়নের কথা বলা হয়। নারীবাদীদের কাছে সামাজিক শ্রেণী, জাতি ও ধর্মের মতই লিঙ্গও হল সামাজিক সংঘাতের তাৎপর্যপূর্ণ কারণ বিশেষ। মূল্যাভিমুখী (radical) নারীবাদীদের মতানুসারে লিঙ্গ হল অত্যন্ত গভীর এবং রাজনীতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বিভাজন। হেউড মন্তব্য করেছেন: “Feminist believe that gender, like social class, race or religion, is a significant social cleavage. Indeed, radical feminists argue that gender is the deepest and most politically important of social divisions.” নারীবাদীদের অভিমত অনুযায়ী ‘পুরুষের কর্তৃত্ব এবং মহিলাদের আনুগত্য ও অধীনতা’— এই হল নারী-পুরুষের ক্ষমতা সম্পর্কের প্রকৃতি। পরিবারিক জীবনের ক্ষমতা কাঠামোর ক্ষেত্রে যেমন, তেমনি বৃহত্তর সমাজের ক্ষমতা কাঠামোর ক্ষেত্রেও এই একই ধারা প্রবাহিত। অ্যান্ড্র হেউড মন্তব্য করেছেন: “Patriarchy thus expresses the belief that the pattern of male domination and female subordination that characterizes society at large is, essentially, a reflection of the power structures that operate within domestic life.”
অনেক নারীবাদীর মতানুসারে নারীবাদের মূল কথা হল যে, লিঙ্গগত পার্থক্যের পরিপ্রেক্ষিতে নারীজাতি বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হয়। মহিলাদের এমন অনেক প্রয়োজন আছে যা পুরণ করা হয় না। মহিলাদের অনেক চাহিদা অতৃপ্ত থেকে যায়। নারীজাতির এই সমস্ত প্রয়োজনের পরিতৃপ্তির জন্য আবশ্যক হল এক মৌলিক আমূল পরিবর্তন সাধন। অনেকের মতানুসারে বৈপ্লবিক পরিবর্তন প্রয়োজন। সামাজিক, অর্থনীতিক ও রাজনীতিক ক্ষেত্রে এই পরিবর্তন আবশ্যক। রোজালিন্ড ডেলমার তাঁর What is Feminism? শীর্ষক এক রচনায় বলেছেন: “at the very least a feminist is someone who holds that women suffer discrimination because of their sex, that they have specific needs which remain neglected and unsatisfied and that the satisfaction of these needs would require a radical change (some would say a revolution even) in the social, economic and political order.”
ভ্যালেরী ব্রাইসন তাঁর Feminism শীর্ষক এক রচনায় ‘নারীবাদ’ ও তার বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন। অধ্যাপিকা ব্রাইসনের অভিমত অনুযায়ী সকল নারীবাদী ধারণার সাধারণ সূত্রপাত হিসাবে একটি বিশেষ বিশ্বাসের কথা বলা হয়। এই বিশ্বাসটি হল যে পুরুষদের তুলনায় মহিলারা অসুবিধাজনক অবস্থায় অবস্থিত। নারীজাতির এই অসুবিধাজনক অবস্থার পিছনে জৈবিক পার্থক্যজনিত কোন অপরিহার্য বা স্বাভাবিক কারণ নেই। এর পিছনে যে কারণ বর্তমান তার বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিবাদ এবং পরিবর্তন প্রয়োজন। ব্রাইসন বলেছেন: “A common starting-point for all femeinist ideas is the belief that women are disadvantaged in comparison with men, and that this disadvantage is not a natural and inevitable result of biological difference but something that can and should be challenged and changed.”
নারীবাদ এই দুনিয়াকে দেখার এক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছে। এই দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী কেন্দ্রীয় রাজনীতিক বিষয় হিসাবে নারীজাতির অবস্থা অবস্থান এবং নারী-পুরুষের মধ্যে অসাম্য-বৈষম্যের উপর জোর দেওয়া হয়। এদিক থেকে বিচার করলে রাজনীতির প্রকৃতি ও আলোচনাক্ষেত্র সম্পর্কে বিদ্যমান ও প্রাধান্যমূলক ধ্যান ধারণার প্রতি নারীবাদ হল একটি মৌলিক চ্যালেঞ্জ। সুতরাং প্রচলিত ও প্রাধান্যমূলক রাজনীতিক মতবাদ ও ধ্যান-ধারণার সঙ্গে নারীবাদ সামঞ্জস্য-রহিত। ব্রাইসন বলেছেন: “Unlike traditional political theories and ideologies, feminism provides a way of looking at the world that sees women’s situation and the inequalities between men and women as central political issues, as such, it provides a fundamental challenge to dominant assumptions about the scope and nature of politics.”
আধুনিক নারীবাদীদের অভিমত অনুযায়ী রাজনীতিক ক্রিয়াকলাপ কেবলমাত্র সরকার বা সরকারী সংস্থাসমূহ সম্পর্কিত বিষয়াদির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। সকল সামাজিক গোষ্ঠীর মধ্যে রাজনীতিক ক্রিয়াকর্ম সংঘটিত হয়। যখন এবং যেখানেই সামাজিক সংঘাতের সৃষ্টি হয়, তখন এবং সেখানেই রাজনীতির অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয়। নারীবাদীদের যুক্তি অনুযায়ী লিঙ্গগত অসাম্য-বৈষম্য অব্যাহতভাবে বর্তমান। কারণ সমাজে লিঙ্গগত শ্রমবিভাজন অব্যাহত। এই লিঙ্গগত শ্রমবিভাজনকে রাজনীতিক নয়, স্বাভাবিক বলে মনে করা হয়। সমাজবিজ্ঞানী জিন. বি. এলশটেইন তাঁর Public Man. Private Women (1981) শীর্ষক গ্রন্থে এ বিষয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন। প্রথাগতভাবে রাজনীতি, শিল্প, সংস্কৃতি, ঘরের বাইরের সর্বসাধারণের কাজকর্ম প্রভৃতি পুরুষদের একচেটিয়া বলে পরিগণিত হয়ে আসছে। অপরদিকে পারিবারিক ও ঘর-গৃহস্থলীর দায়-দায়িত্ব ও ব্যক্তিগত ক্ষেত্রসমূহের মধ্যেই মহিলাদের পরিধি সীমাবদ্ধ। গৃহবধূ ও জননীরা ব্যক্তিগত ভূমিকার মধ্যে মহিলাদের বন্দী রেখে, রাজনীতি থেকে তাদের তফাতে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাজনীতিকে যদি সরকারী ক্ষেত্রসমূহের বিষয় হিসাবে বিবেচনা করা হয়, তা হলে মহিলাদের ভূমিকা ও লিঙ্গগত অসাম্য বৈষম্যের কোন রকম রাজনীতিক গুরুত্ব থাকে না। নারীবাদীরা নারী-পুরুষের মধ্যে এই ‘পাবলিক-প্রাইভেট (public-private) ভেদাভেদমূলক ধারণার বিরোধিতা করেছেন।
র্যাডিক্যাল (radical) নারীবাদীদের অভিমত অনুযায়ী রাজনীতিক ক্রিয়াকলাপ ঘরের সদর দরজায় গিয়ে থেমে যায় না। ব্যক্তিগত বিষয়াদিও রাজনীতিক প্রকৃতি পায়। জনজীবনের সকল ক্ষেত্রেই নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে থাকে এবং বিভিন্ন দিক থেকে বিচার করলে পরিবারের মধ্যেই এর সূত্রপাত ঘটে। এই কারণে র্যাডিক্যাল নারীবাদীরা প্রাত্যহিক জীবনের রাজনীতির বিচার-বিশ্লেষণের উপর অধিকতর গুরুত্ব আরোপের পক্ষপাতী। ঘর-গৃহস্থালীর কাজকর্ম ও আনুষঙ্গিক দায়-দায়িত্বের বণ্টন, লিঙ্গগত ও ব্যক্তিগত আচরণের রাজনীতি, পরিবার পরিচালনার প্রক্রিয়া প্রভৃতি প্রাত্যহিক জীবনের রাজনীতির অন্তর্ভুক্ত।
Leave a comment