কথামুখ: অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নানা রঙের দিন’ নাটকটির বেশিরভাগ অংশ জুড়ে রয়েছে কেন্দ্রীয় চরিত্র আটষট্টি বছরের বৃদ্ধ অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যয়ের স্বগতােক্তি। আর এই স্বগতােক্তির সূত্র ধরেই বেশ কিছু অংশে রজনীকান্তের দুটি সত্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
আন্তরসত্তা: গভীর রাতে শূন্য প্রেক্ষাগৃহে মঞ্চের উপরে সম্পূর্ণ নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তার আন্তরসত্তার জাগরণ ঘটে। সেই সত্তাই রজনীবাবুকে অর্থাৎ নিজেকেই শরীরের দিকে নজর দিতে বলে, নিজের বয়সের কথা ভেবে মদের নেশা ছেড়ে দিতে বলে। যখন অন্য প্রবীণ মানুষেরা সংযত জীবন কাটান, পরিমাণমতাে খাওয়াদাওয়া করেন, ঈশ্বরের নাম করেন—তখন মাঝরাতে দিলদারের পােশাক পরে রজনীবাবুর ‘পেটভর্তি মদ গিলে’ ‘থিয়েটারি ভাষায়’ ‘আবােলতাবােল’ বকা একেবারেই যুক্তিযুক্ত মনে হয় না তাঁর।
অভিনয়সত্তা : এই আন্তরসত্তার অন্যপিঠে আছে আর-এক সত্তার করুণ বাস্তব। সেখানে রয়েছে বয়সের ভারে ক্রমশ জীর্ণ হয়ে আসা এক বৃদ্ধ অভিনেতা। সেই অভিনেতার গলায় একদিকে শােনা যায় ব্যক্তিজীবনের নিঃসঙ্গতার হাহাকার, অন্যদিকে থাকে অভিনেতা হিসেবে ক্রমশ নিজের ক্ষমতা হারানাের যন্ত্রণা। সেই যন্ত্রণা থেকেই রজনীকান্তবাবু স্মৃতির পথে হাঁটেন। নিজের অভিনয় জীবনের স্বর্ণযুগে অভিনীত উল্লেখযােগ্য চরিত্ররা ভিড় করে তার মনে। পেশাগত জীবনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনেও সব হারানাের এই হতাশাই চূড়ান্ত হয়ে ওঠে অভিনেতা রজনীকান্তের বাহ্যিক চেতনায়।
Leave a comment