একাঙ্ক নাটক হিসেবে সার্থকতা মাত্র একটি অঙ্ক বা সর্গ পরিচ্ছেদে সমাপ্ত, দ্রুতসংঘটিত নাটকই হল একাঙ্ক নাটক। এটি এমন এক ধরনের নাটক যার প্রধান বৈশিষ্ট্য হল একমুখিতা। অবশ্য আদর্শ নাটকের সমস্ত লক্ষণ একাঙ্ক নাটকেও উপস্থিত থাকে।

অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নানা রঙের দিন’ নাটকটি হল প্রবীণ অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের ফেলে আসা অভিনয়জীবনের স্মৃতিরােমন্থন। মঞ্চে দেখা যায়, দিলদারের পােশাক পরে মধ্যরাতের শূন্য প্রেক্ষাগৃহে এই মানুষটি নেশার ঘােরে রয়েছেন। আসলে তিনি রয়েছেন স্মৃতির ঘােরে। পঁয়তাল্লিশ বছরের অভিনয়জীবনের স্বর্ণযুগ পেরিয়ে এসেছেন সম্পূর্ণ নিঃসঙ্গ এই সু- অভিনেতা। অভিনয়ের জন্য সব কিছু ত্যাগ করা এই মানুষটি হতাশাদীর্ণ হয়ে বলেছেন, “অভিনেতা মানে একটা চাকর, একটা জোকার, একটা ক্লাউন।” তাঁর মনে হয়েছে, “যারা বলে ‘নাট্যাভিনয় একটি পবিত্র শিল্প’—তারা সব গাধা- গাধা।” কিন্তু জীবনসায়াহ্নে উপনীত অভিনেতা সেই অভিনয়ের মধ্যেই আত্মতৃপ্তি এবং গর্বের উপাদান খোঁজেন। অতীতকে সম্বল করে, মঞ্চের রঙিন দিনগুলিকে আঁকড়ে ধরে এই নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ অনুভব করেন, “স্মৃতি সততই সুখের।”

সুতরাং, এক এবং অভিন্ন বিষয় নিয়েই এই নাটকটি রচিত হয়েছে। আর নাটকের প্রাণ হল দ্বন্দ্ব, সেই নাট্যদ্বন্দ্বও এই নাটকটিতে উপস্থিত রয়েছে। অভিনেতা রজনীকান্তের অন্তর্দ্বন্দ্ব নাটকটিকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। ‘ঘটনার ঘনঘটা’ এখানে অনুপস্থিত। মাত্র দুটি চরিত্রের (কালীনাথ ও রজনীকান্ত) সংলাপের মধ্য দিয়ে নাটকটি নির্মিত হয়েছে। রজনীকান্ত চরিত্রটির দীর্ঘ সংলাপ মাঝেমধ্যেই নাটকটির গতি রুদ্ধ করে দিলেও প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠক বা দর্শক টানটান অবস্থায় উপভােগ করতে পারেন। এর নাট্যরস। সুতরাং, অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নানা রঙের দিন’-কে আমরা শিল্পসার্থক একাঙ্ক নাটক বলতেই পারি।