প্রশ্নঃ নাথ সাহিত্য কী? সংক্ষেপে নাথ সাহিত্যের ধারা বর্ণনা কর।

উত্তরঃ মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য প্রধানত বিভিন্ন ধর্ম ও উপধর্ম সম্প্রদায়ের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। শাক্ত, শৈব, বৌদ্ধ, বৈষ্ণব—এগুলো প্রধান ধর্ম সম্প্রদায়। এই মিশ্র ধর্মচেতনা সারা মধ্যযুগকেই নিয়ন্ত্রণ করেছে। বৌদ্ধধর্মের সাথে শৈবধর্মের মিলনে সৃষ্ট ধর্মমতই নাথধর্ম বা নাথপন্থা।

নাথ সাহিত্য নাথধর্মের প্রচার বিষয়ক সাহিত্য। নাথপন্থীদের যোগমাহাত্ম্য এবং ক্রিয়াকাণ্ডের বিবরণ নিয়ে রচিত সাহিত্যকেই নাথ সাহিত্য বলে।

নাথপন্থীরা জড় দেহকে মুক্তির বাধা না বলে সোপান হিসেবে গুরুত্ব দিয়েছেন। তারা নানা ধরনের যৌগিক, তান্ত্রিক, রাসায়নিক, আয়ুর্বেদ সংক্রান্ত ভেষজবিদ্যার সাহায্যে জড় দেহকে পরিশুদ্ধ বা পরিপক্ক করে তার সাহায্যে মোক্ষ মুক্তি নির্বাণ লাভের আকাঙ্ক্ষা করত। শিব এদের আদি গুরু-তিনিই আদি নাথ। তার শিষ্য মীননাথ, মীননাথের শিষ্য গোরক্ষনাথ। রানী ময়নামতী এবং তার একমাত্র সন্তান গোপীচন্দ্র, গোপীচন্দ্রকে নিয়ে কিছু ছড়া পাঁচালী ও কাব্য কাহিনী লেখা হয়েছে।

সাধারণত দশম থেকে একাদশ শতকে নাথ আচার্যদের আবির্ভাবকাল। এ সময়ে নাথ সাহিত্যের বিকাশ ঘটে। নাথ সাহিত্যের লিখিত পুঁথি অষ্টাদশ শতকের আগে পাওয়া যায় নি। নাথ সাহিত্যের কাহিনীকে দু’ভাগে বিভক্ত করা হয় (ক) একটিতে গোরক্ষনাথ কর্তৃক মুনীনাথকে নারী মোহ থেকে উদ্ধার, যার নাম গোরাক্ষ বিজয়, (খ) অপুরটিতে ময়নামতী ও তার পুত্র গোপীচন্দ্রের কাহিনী স্থান পেয়েছে, যার নাম ময়নামতী-গোপীচন্দ্রের গান।

(ক) ‘গোরক্ষ বিজয়’—  নিয়ে তিনখানা পুঁথি আছে-

(i) ডঃ নলিনীকান্ত ভট্টশালী সম্পাদিত কবি শ্যামদাস সেনের ‘মীনচেতন’ (১৯১০)।

(ii) মুন্সী আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ সম্পাদিত শেখ ফয়জুল্লার ‘গোরক্ষ বিজয় (১৯১৭)।

(iii) ডঃ পঞ্চানন মণ্ডল সম্পাদিত ভীমসেনের গোর্খ বিজয় (১৯৪১)। 

(খ) ময়নামতী — গোপীচন্দ্রের গান নিয়ে পুঁথি পাওয়া যায়—

(i) গোবিন্দচন্দ্রের গীত— এতে দুর্লভ মল্লিক, ভবানীদাস, শুকুর মামুদ প্রভৃতি কবিদের ভনিতা মেলে।

(ii) গীয়ার্সন সাহেব ১৮৭৮ খ্রিঃ রংপুর থেকে গোপীচন্দ্রের গান সংগ্রহ করে “মানিকচন্দ্র রাজার গান’ নামে এশিয়াটিক সোসাইটি পত্রিকায় প্রকাশ করেন।

(iii) কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশিত গোপীচন্দ্রের গান ১ম খণ্ড (১৯২২), গোপীচন্দ্রের গান ২য় খণ্ড (১৯২৪)।

(iv) ডঃ নলিনীকান্ত ভট্টশালী ও বৈকুণ্ঠনাথ দত্তের সম্পাদনায় ‘ময়নামতীর গান’।