নব্য প্রস্তর যুগে মানুষ আগের তুলনায় আরও বেশি সমাজবদ্ধ হয়। একে অপরের ওপর আরও বেশি নির্ভরশীল হয়ে ওঠে। এসময় থেকেই সমাজে পেশাভিত্তিক শ্রেণির উদ্ভব ঘটে।
[1] কাঠামাে: পুরাতন পাথরের যুগে গড়ে ওঠা সমাজ কাঠামাে নব্য প্রস্তর যুগে এসে আরও পরিশীলিত হয়। খাদ্যের জোগান সুনিশ্চিত হওয়ায় সময়ের অপচয় কমে। পরিবারের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে কাজ করত। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে চিন্তা-চেতনার মিল ছিল। সমাজে বৈবাহিক সম্পর্ক তেমন স্পষ্ট ছিল না।
[2] বিনিময়প্রথা: উৎপাদন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিনিময়প্রথার উদ্ভব ঘটে।বর্ধিত জনসংখ্যার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়তে থাকে চাহিদা। বহুমুখী চাহিদা মেটানাের জন্য মানুষ বিনিময়প্রথার আশ্রয় নেয়।
[3] শ্রমবণ্টন: বিনিময়প্রথার সুবাদে সমাজে শ্রমবণ্টন ঘটে। সন্তান লালন-পালন থেকে শুরু করে শস্য উৎপাদন, কাপড় বােনা ও নানা গৃহস্থালির কাজে নারীরা নিয়ােজিত হয়। আর পুরুষেরা গৃহ নির্মাণ, শিকার, পশুপালন এবং অস্ত্র নির্মাণের মতাে কঠিন শ্রমসাধ্য কাজের ভার নেয়।
কৃষির উদ্ভাবন নব্য প্রস্তর যুগের মানুষের জীবনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসে। এ যুগের মানুষ উদ্ভিদের শিকড় বা ফলের বীজ ঘরের কাছে পুঁতে দিতে শুরু করে। এভাবেই কৃষির সূচনা ঘটে।
[1] প্রথম দিকের অঞ্চলসমূহ: নব্য প্রস্তর যুগে মানুষ নদী ও জলাভূমির তীরে বসতির পাশেই কৃষিকাজ শুরু করে। মিশরে নীলনদের বদ্বীপে, রাশিয়ার স্তেপ অঞ্চলে, ইউরোপের দানিয়ুব নদীতীরবর্তী অঞ্চলে এবং সুইটজারল্যান্ডের হ্রদ তীরবর্তী অঞ্চলে চাষের সূচনা ঘটে।
[2] প্রাথমিক কৃষিকৌশল: মৃত পশুর শিং, ভাঙা গাছের ডাল বা পাথরের চাই দিয়ে মাটি আলগা করা হত। এই আলগা মাটিতে তারা বীজ ছড়িয়ে দিত। যে সমস্ত উদ্ভিদের মূল, ফল ও শস্যের দানা স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু প্রথমে সেগুলির অনুসন্ধান শুরু হয়। তারপর সেগুলিকে তুলে নিয়ে আবাসস্থলের কাছে লাগানাে হয়।
[3] চাষের যন্ত্র: এই যুগের মানুষ নিড়ানি কান্তে ও শস্য পেষাইয়ের জন্য উদখল ব্যবহার করত। এসময়ে চাষের যন্ত্র হিসেবে মসৃণ কুঠার ফলকের ব্যবহার শুরু হয়। কাঠের লাঙলের সঙ্গে লাগিয়ে এগুলিকে ব্যবহার করা হত।
[4] উৎপাদিত কৃষিজ ফসল: নব্য প্রস্তর যুগের মানুষ সর্বপ্রথম যবকে চাষের আওতায় নিয়ে আসে। তারপরে তারা গম ও ধান চাষ শুরু করে। কৃষিকাজের মূল ব্যাপারটি আয়ত্ত হওয়ার পর একে একে বিভিন্ন ধরনের ফল ও সবজি চাষ শুরু হয়।
[5] সুফল: কৃষির আবিষ্কারের ফলে খাদ্যের জোগান সুনিশ্চিত হওয়ায় এখন থেকে মানুষের গড় আয়ু বাড়ে। খাদ্যের উৎপাদন সুনিশ্চিত হওয়ায় অনেক সময় বাঁচে। এই অবসর সময়ে মানুষ বিভিন্ন কারিগরি ও সাংস্কৃতিক দিকের বিকাশ ঘটায়।
Leave a comment