সমাজ সংস্করণে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান বিশ্লেষণ কর
উত্তর: রাজা রামমোহন রায় বাঙালির সমাজ, ধর্ম ও সাহিত্যাকাশে বহুল আলোচিত নক্ষত্র। তিনি ১৭৭২ সালে হুগলির রাধানগর নামক গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত হিন্দু ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকালেই তিনি সংস্কৃত ও ফারসি শিক্ষা লাভ করেন। তিনি নিজের প্রয়োজনে ইংরেজি ও হিব্রু ভাষাও চর্চা করেন। রাজরামমোহন রায় কর্মজীবনে ছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারী, ইংরেজ সরকারের রাজদূত ও শেয়ার ব্যবসায়ী।
১৮১৭ সালে তিনি স্থায়ীভাবে কলকাতায় বসবাস শুরু করেন। তখন থেকেই সমাজ, সাহিত্য ও ধর্মে তিনি স্বতন্ত্র প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে থাকেন। সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলে ১৮২৯ সালে তিনি সতীদাহ বিরোধী আইন পাস করেন।
রাজা রামমোহন রায় নতুন আবহে বাংলার সমাজ, ধর্ম ও শিক্ষা সংস্কার আন্দোলনের প্রথম ও প্রধান নায়ক হিসেবে বহু জটিল বিষয় সমাধানের চেষ্টা করেছেন। হিন্দুধর্মের বর্ণবৈষম্যের কারণে ইংরেজ মিশনারিরা খ্রিষ্টান ধর্ম প্রচার করতে থাকে। পরকালের মুক্তির জন্য না হলেও ইহকালের আর্থিক ও রাজনৈতিক প্রলোভনে উনিশ শতকের গোড়াতেই অনেক হিন্দু খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করতে থাকে। বাঙালি তথা ভারতীয় হিন্দুর জীবনে এ ধর্মান্তর একটা উভয় সংকটের জন্ম দিয়েছিল। জাতীয় জীবনে এ সংকট যথাযথ উপলব্ধি করেই হিন্দু, ইসলাম ও খ্রিষ্টধর্মের সার সংকলন করে তিনি ব্রাহ্মধর্মের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সে সময় তিনি যে মুক্তবুদ্ধির পরিচয় দিয়েছিলেন, উনিশ শতকের ভারতীয় হিন্দু সমাজ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সে জন্য লাভবান হয়েছে। সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন, স্ত্রীলোকের সম্পত্তিতে অধিকার, পাশ্চাত্য শিক্ষার সম্প্রসারণ প্রভৃতি বিষয়ে রামমোহনই পথিকৃৎ।
সুতরাং সব বিষয় বিবেচনা করে বলা যায় যে, সমাজ সংস্কারের দিক থেকে রামমোহনই যথেষ্ট সফলতার দাবিদার।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ উপরের লেখায় কোন ভুল থাকে তাহলে দয়া করে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন আমরা সেটা ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করবো, ধন্যবাদ।
Leave a comment