অথবা, নতুন প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্যাবলি সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ।
ভূমিকাঃ নতুন প্রস্তর যুগ বা নব্য প্রস্তর যুগ হচ্ছে নবােপলীয় বিপ্লবের যুগ। এ যুগে মানুষ এমন কিছু পদ্ধতি ও প্রথা সমাজে চালু করে যা পূর্বে কখনাে ছিল না। এ সকল পদ্ধতি ও প্রথার কারণে সমাজে আমূল পরিবর্তন চলে আসে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, এ যুগে মানুষ খাদ্য সংগ্রহ অর্থনীতি থেকে খাদ্য উৎপাদন অর্থনীতিতে প্রবেশ করে।
নব্য প্রস্তর যুগের উল্লেখযােগ্য বৈশিষ্ট্যঃ মানুষ খাদ্য সংগহের জন্য যে কষ্ট করতাে তা অনেকাংশে লাঘব হয়। নিম্নে নব্য প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্যাবলি আলােচনা করা হলাে-
(১) আগুনের আবিষ্কারঃ পাথরের সাথে পাথরের ঘর্ষণে আগুন উৎপন্ন হয়। এ প্রক্রিয়া মানুষ নব্য প্রস্তর যুগে আবিষ্কার করতে শেখে। আগুনের আবিষ্কার মানব সভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ আবিষ্কার। আগুন আবিষ্কারের ফলে মানুষ ধাতু গলাতে সক্ষম হয়। ফলে হাতিয়ার ও বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি আবিষ্কার করা সহজতর হয়।
(২) ধর্মীয় বিশ্বাসঃ নব্য প্রস্তর যুগে মানুষ আত্মা ও প্রেতাত্মা সম্পর্কে একটা ধারণা লাভ করেছিল। ফলে তারা পূর্বপুরুষ ও মৃত ব্যক্তির পূজা করতাে। তারা বিশ্বাস করতাে যে আত্মা ও প্রেতাত্মার উপকার ও ক্ষতি করার সামর্থ্য আছে। ফলে তাদেরকে সন্তুষ্ট করার জন্য তারা বিভিন্ন ধরনের পূজা করতাে।
(৩) কৃষিকাজঃ কৃষিকাজের মাধ্যমে শস্য উৎপাদন নব্য প্রস্তর যুগের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। নব্য প্রস্তর যুগের পূর্বে মানুষ বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতাে ও ফলমূল আহরণ করতাে। কিন্তু কৃষিকাজ শুরু হওয়ায় তারা উৎপাদন অর্থনীতিতে প্রবেশ করে। পর্যায়ক্রমে কৃষিকাজের মাধ্যমে উদ্বৃত্ত ফসল উৎপাদন সম্ভবপর হয়। ফলে কিছু মানুষ অন্যান্য পেশায় প্রবেশ করার সুযােগ পায়। ফলে শ্রমবিভাজন দেখা দেয়।
(৪) পরিবার প্রথাঃ নব্য প্রস্তর যুগে মানব সমাজে পরিবার প্রথা গড়ে ওঠে। মূলত কৃষিকাজের সুবিধার জন্য একটি নির্দিষ্ট স্থানে স্থায়ীভাবে বসবাস করার প্রয়ােজন হয়। একটি স্থানে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে গিয়েই তাদের মধ্যে। পরিবার প্রথাগড়ে ওঠে। ফলে মানুষ বাবা-মা, ভাই-বােন, সন্তান-সন্তুতি ইত্যাদি বিভিন্ন পরিচয়ে পরিচিত হয়।
(৫) কর্মবৈচিত্র্যঃ নব্য প্রস্তর যুগে সমাজে কৃষক, কামার, কুমার, তাঁতী, জেলে ইত্যাদি বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ গড়ে ওঠে। তারা প্রত্যেকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য উৎপাদন করতাে। ফলে সমাজে শ্রমবিভাজন দেখা দেয়। শ্রমবিভাজনের ফলে সমাজে আসে কমবৈচিত্র্য।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, নব্য প্রস্তর যুগে মানব সমাজে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়। ব্যক্তিগত ও সমাজ জীবনে আসে আমূল পরিবর্তন। সমাজে নতুন ধ্যান-ধারণা ও প্রথার প্রচলন হয়। জীবনযাপনের পদ্ধতিতে আসে পরিবর্তন। সমাজ জীবনে গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়।
Leave a comment