শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষার্থী কতটা জ্ঞান অর্জন করেছে তা জানার জন্য যে পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়, তা হল পরীক্ষা (Examination)। যেমন— শিক্ষার্থী অঙ্কে বা ইংরেজিতে কতটা জ্ঞান অর্জন করল তা জানার জন্য বিদ্যালয়ে লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়। শিক্ষার ক্ষেত্রে এই প্রাচীন পদ্ধতির পরিবর্তে বর্তমানে নতুন একটি ধারণা গড়ে উঠেছে তা হল মূল্যায়ন। মূল্যায়নের ধারণা অনেক ব্যাপক। একজন শিক্ষার্থীর সবদিকের বিকাশকে পরিমাপ করা হয় মূল্যায়নের মাধ্যমে। তাই মূল্যায়ন ব্যবস্থা শিক্ষার লক্ষ্যের সঙ্গে জড়িত।

ভারতীয় শিক্ষা কমিশন বা কোঠারি কমিশন পরীক্ষা ব্যবস্থার দোষত্রূটি গুলি সংশোধনের জন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বহিঃপরীক্ষা ও অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নের ক্ষেত্রে কয়েকটি নির্দিষ্ট সুপারিশ করে।

(১) CCER প্রথা: মাধ্যমিক স্তরে CCE (Comprehensive Cumulative Evaluation) চালু করে। এই স্তরের শিক্ষার্থীদের Formative ও Summative এই দুটির মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে।

(২) Cumulative Record Card প্রচলন : প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীর Cumulative Record Card সর্বাত্মক পরিচয়পত্র থাকবে। এই কার্ডে শিক্ষার্থীর সবদিকের যেমন— বৌদ্ধিক, সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী, স্বাস্থ্য ইত্যাদি উল্লেখ থাকে। শিক্ষার্থী যখন পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হবে তখন এই রেকর্ড কার্ড তৈরি হবে। এরপর প্রতি বছর এই কার্ডেই শিক্ষার্থীর এই সকল দিক উল্লেখ থাকবে।

(৩) Grade প্রথা প্রচলন : মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে বহিঃপরীক্ষার ফলাফলে নম্বরের পাশাপাশি গ্রেড-এর উল্লেখ থাকবে।

(৪) বাধ্যতামূলক বহিঃপরীক্ষা : দশম, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষা শেষে বহিঃ নিরীক্ষা বাধ্যতামূলক থাকবে।

(৫) অভীক্ষাপত্র দান : প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে পরীক্ষা শেষে অভীক্ষা পত্র স্কুল থেকে দেওয়া হবে এবং এই অভীক্ষাপত্রের শিক্ষার্থীর সর্বাত্মক পরিচয়পত্র থাকবে।

(৬) মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিশেষ বহিঃপরীক্ষা : প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের শেষে প্রতিভাবান ও মেধাবী ছাত্রদের খুঁজে বের করার জন্য বহিঃপরীক্ষার ব্যবস্থা থাকবে। তবে এই পরীক্ষা বাধ্যতামূলক হবে না। বাইরের পরীক্ষকরা এই পরীক্ষার মূল্যায়ন করবে।

(৭) No Detention Policy-র প্রচলন : কমিশনার  বলেছে নম্বরের ভিত্তিতে কোনাে একটি শিক্ষার্থীকে কয়েকটি বিষয়ে পাস করতে পারেনি বলে তাকে ‘ফেল’ বলে গণ্য করা ঠিক হবে না। বর্তমানে তাই No Detention Policy অর্থাৎ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাস-ফেল প্রথা থাকবে না’— এই নিয়ম প্রচলিত আছে।। অষ্টম থেকে নবম শ্রেণিতে ওঠার সময় পাস-ফেল থাকবে।

উচ্চমাধ্যমিক স্তরের পর আসে উচ্চশিক্ষা। উচ্চমাধ্যমিক পাসের পর বিভিন্ন শিক্ষার সুযোগ রয়েছে যেগুলো শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার গঠনে সাহায্য করে। কয়েকটি বিষয় নিম্নে বর্ণনা করা হল— 

(১) কলাবিভাগ : কলা বিভাগ নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক পড়ে থাকে সেই শিক্ষার্থী কলা বিভাগের বিষয় নিয়ে উচ্চস্তরে পড়তে পারবে। যেমন—কলা বিভাগের অন্তর্গত শিক্ষাবিজ্ঞান নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর সে কলেজে এই বিষয় নিয়ে BA Pass অথবা BA Honours পড়তে পারবে। পরবর্তীকাল শিক্ষাবিজ্ঞানে MA, M. Phil, Ph.D করতে পারবে। এ ছাড়া সাধারণ শিক্ষাগ্রহণের পর B.Ed, M.Ed পড়ার সুযোগ আছে।

(২) বিজ্ঞান বিভাগ : বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞানের যে-কোনাে শাখা নিয়ে পড়াশোনা করতে পারে। এ ছাড়া বিজ্ঞান ভিত্তিক বিভিন্ন কোর্স করতে পারে যেমন ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং, ইত্যাদি।

(৩) বাণিজ্য বিভাগ : বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা বাণিজ্য শাখার বিষয় নিয়ে উচ্চশিক্ষার সুযােগ পায়।

(৪) বৃত্তিমুখী শিক্ষার কোর্স : উচ্চমাধ্যমিকের পর বৃত্তিমুখী যেসকল শিক্ষার সুবিধা রয়েছে সেগুলি নিম্নলিখিত —

  • বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ইঞ্জিনিয়ারিং, চিকিৎসা বিজ্ঞান, কৃষি বিজ্ঞান, কম্পিউটার সায়েন্স ইত্যাদি পড়ার সুযোগ পায়।
  • যে কোনাে শাখার শিক্ষার্থীরা আইনশাস্ত্র, ম্যানেজমেন্ট কোর্স (BBA, MBA) সাংবাদিকতা, Leather Technology, Textile Technology ইত্যাদি পড়তে পারে উচ্চমাধ্যমিকের পর।
  • বাণিজ্য শাখার শিক্ষার্থীদের পড়ার সুযোগ পায় CA (Chartered Accountancy) ICWA (Institute of Cost and works accountants of India)