মানুষ যে ধ্বনি উচ্চারণ করে, তাকে বলে বাগধ্বনি বা স্বন। বাগ্যন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত যত বাগধ্বনি বা স্বন আমরা শুনতে পাই, তার মধ্যে সবগুলিই যে প্রত্যেক ভাষায় সমান তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা নেবে এমন নয়। এক এক ভাষায় এক-এক রকমের বাগধ্বনি তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। এখন যে ভাষায় যে বাধ্বনিগুলি তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে, সেই ভাষার সেই বাধ্বনিগুলিই হল ধ্বনিমূল।
আর-একটু অন্যভাবে বিষয়টি স্পষ্ট করা যাক। আমরা জানি, বাধ্বনিই ভাষার প্রধান উপাদান। তাহলে বাধ্বনি আর ধ্বনিমূলের মধ্যে পার্থক্যটা কোথায়? কারণ, ধ্বনিমূলও তত বাধ্বনি। কিন্তু আমরা জানি, যে-কোনাে বাধ্বনি ধ্বনিমূল নয়।
একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে। ভাষার প্রতিটি শব্দ এক বা একাধিক ধ্বনি দিয়ে গঠিত। যেমন বাংলায় শব্দের শুরুতে য-এর উচ্চারণ জ-এর মতাে কিন্তু মধ্যে বা শেষে সর্বদাই ‘য়ু’ উচ্চারণ হয় (যেমনযােগ কিন্তু বিয়ােগ)। তা ছাড়া য’ ধ্বনিটি শব্দের শুরুতে কখনও ‘য়’ এবং মধ্যে বা শেষে ‘জ’ উচ্চারিত হয় না। অতএব, য’ একটি ধ্বনিমূল যার দুটি উচ্চারণবৈচিত্র্য অর্থাৎ সহধ্বনি হল জ এবং ‘য’।
ইংরেজি দৃষ্টান্ত দিয়েও বােঝানাে যায়। যেমন—bat mat দুটি ইংরেজি শব্দ। এ দুটি শব্দ যে ধ্বনিগুলি নিয়ে তৈরি তা হল যথাক্রমে b/a/t এবং m/a/t| এখানে দেখা যাচ্ছে, b আর এই দুটি বাগধ্বনির জন্য দুটি পৃথক অর্থপূর্ণ শব্দ তৈরি হচ্ছে। কাজেই বলা যায় b আর m বাগধ্বনি দুটি হল ধ্বনিমূল। এই যে দুটি ধ্বনিমূলের মধ্যে অর্থ নির্মাণের পার্থক্য বা বিরােধ, সেই ক্ষমতাই এদেরকে অন্যান্য সাধারণ বাধ্বনি থেকে পৃথক করে দেয়।
Leave a comment