বাংলা সাহিত্যে তিরিশের দশকের কবিদের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি জীবনানন্দ দাশ (১৮৯৯-১৯৫৪]। জীবনানন্দ দাশের বহুল আলোচিত ও কবিখ্যাতির দ্যোতক কাব্যগ্রন্থ ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’ ১৯৩৬ সালে প্রকাশিত হয়। ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’র সবগুলো কবিতায় কবির স্বতন্ত্র প্রতিভার মহিমায় সমুজ্জ্বল। দুঃসহ জীবনবোধ, জীবনের জটিলতা, অচরিতার্থ প্রেম, নৈরাশ্য, নিঃসঙ্গতা থেকে মুক্তি পাবার আশায় কবি মুখ লুকিয়েছেন প্রেম, প্রকৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য আবার কখনো মৃত্যুচেতনায়। এ কাব্যের কবিতাগুলোতে সময়-অতীত-প্রকৃতি ও মৃত্যুচেতনা প্রধান বিষয় উপাদান হিসেবে স্থান লাভ করেছে।
সময়-চেতনার সাথে সংশ্লিষ্ট অতীত চেতনা। অতীতের ভাবনা অনবদ্য সৌন্দর্যে প্রকাশ পেয়েছে ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’র অনেক ছত্রে।
‘মৃত্যুর আগে’ কবিতায় কবি বলেছেন-
“আমরা আমরা হেঁটেছি যারা নির্জন খড়ের মাঠে পউষসন্ধ্যায়,
দেখেছি মাঠের পারে নরম নদীর নারী ছড়াতেছে ফুল-“
সময় চেতনা যেমন মানুষের মনকে অতীতে নিয়ে যায়, অতীত তেমনি নিয়ে যায় মৃত্যুচেতনায়। এ কাব্যে কবির মনে যে মৃত্যুচেতনার জন্ম হয়, তা ইতিহাস চেতনা ও প্রকৃতি চেতনার সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। কবির বহু কবিতায় মৃত্যুচেতনার প্রকাশ লক্ষণীয়।
‘স্বপ্নের হাতে’ কবিতায় কবি বলেছেন-
“সময়ের হাত এসে মুছে ফেলে আর সব-
নক্ষত্রেরো আয়ু শেষ হয়।”
‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’ কাব্যগ্রন্থে কবি প্রকৃতিকে তুলে ধরেছেন হেমন্তের চিত্রকল্পে। এখানে প্রকৃতি সম্ভাবনাহীন। কবির কাছে মনে হয়েছে প্রকৃতিতে মানুষের প্রত্যাশার আর কিছু নেই। হেমস্তের নিঃস্ব, রিক্ত, অনুর্বর রূপ যেন এ ক্ষয়িষ্ণু ও সৃষ্টি সম্ভাবনাহীন যুগেরই প্রতিবিম্ব।
‘মেঠো চাঁদ’ কবিতায় কবি বলেছেন-
“ফসল গিয়েছে ঢের ফলি,
শস্য গিয়েছে বারে কত?
বুড়ো হয়ে গেছো তুমি এই বুড়ি পৃথিবীর মতো।”
জীবনানন্দ দাশের কাব্যের মূল উপাদান প্রকৃতি, মৃত্যু এবং ঐতিহ্য চেতনা। এই প্রধান বিষয়গুলো অত্যন্ত সার্থকভাবে স্থান লাভ করেছে ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’ কাব্যগ্রন্থে। যুগের নিষ্ঠুরতা, বিবেকহীনতা, ধ্বংসলীলা, নৈরাশ্য ও হতাশা। কবিকে আহত ও বিছিন্ন করেছে যাপিত জীবন থেকে। তাই কবি এ কাব্যে মুখ গুঁজেছেন অতীত ঐতিহ্যের আবাহনে, মৃত্যুর আলিঙ্গনে আর প্রকৃতির অনাবিল সৌন্দর্যের মাঝে। ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’ জীবনানন্দ দাশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ উপরের লেখায় কোন ভুল থাকে তাহলে দয়া করে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন আমরা সেটা ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করবো, ধন্যবাদ।
Leave a comment