ধারণা গঠন সম্পর্কে মনােবিদদের নানা পরীক্ষার সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ধারণা গঠনের তত্ত্বকে তিনভাগে ভাগ করা যায়一
(১) প্রকল্প মূল্যায়ন তত্ত্ব: এই তত্ত্বে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থী যখন কোনাে বিষয়ে ধারণা গঠন শুরু করে, তখন বিষয়টির নানান বৈশিষ্ট্য শিক্ষার্থীর কাছে ছােটো ছােটো প্রকল্প হিসেবে গৃহীত হয়। যেগুলি কঠিন বা বোঝার ক্ষেত্রে অসুবিধাজনক সেগুলি ব্জিত হয়। এইভাবে মূল্যায়ন করে গ্রহণ-বর্জনের মাধ্যমে শিক্ষার্থী সঠিক তত্ত্বের দিকে এগিয়ে যায় এবং তার মধ্যে ধারণা গঠনের কাজটি সম্পন্ন হয়।
(২) সংযোগমূলক তত্ত্ব: প্রাচীন এই তত্ত্বে বলা হয়েছে উদ্দীপক এবং প্রতিক্রিয়ার বন্ধনের মাধ্যমে ধারণা গঠিত হয়। এই তত্ত্বটি শিশুদের ধারণা গঠনের ক্ষেত্রে উল্লেখযােগ্য ভূমিক পালন করলেও বয়স্ক ব্যক্তিদের ধারণা গঠনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ নয়।
(৩) তথ্য প্রক্রিয়াকরণ তত্ত্ব: কৃত্রিম বুদ্ধি বা কম্পিউটারের বৌদ্ধিক ক্ষমতা-সংক্রান্ত গবেষণা থেকে এই তত্ত্বটি কল্পিত হয়েছে। জ্ঞানবাদী মনস্তত্ত্ববিদগণ (যাদের মধ্যে ব্লুনার অন্যতম) শিখনের তত্ত্ব হিসেবে উদ্দীপক প্রতিক্রিয়া বন্ধনের পরিবর্তে জ্ঞানমূলক বা বৌদ্ধিক প্রক্রিয়াকে গুরুত্ব দিয়েছেন। ধারণা কীভাবে গড়ে ওঠে সে সম্পর্কে নিম্নেক্ত ক্রমপর্যায়গুলি উল্লেখ করা হয়েছে一
-
শিক্ষার্থী বিষয়বস্তু বা ঘটনা প্রত্যক্ষপ করে এবং তার বৈশিষ্ট্য বা গুণকে সংরক্ষণ করে,
-
বৈশিষ্ট্যগুলির প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থী একটি প্রাথমিক ধারণা অনুমান করে (এই পর্যায়কে প্রকল্প গঠনের পর্যায় বলে),
-
পরবর্তী পর্যায়ে শিক্ষার্থী যখন অন্য বস্তু প্রত্যক্ষ করে তখন প্রাথমিক অনুমিত ধারণার প্রেক্ষিতে সেটিকে বিচার করে এবং শ্রেণিভুক্ত করার চেষ্টা করে। যদি শ্রেণিকরণ সঠিক হয়, তবে শিক্ষার্থী আর-একটি বস্তু প্রত্যক্ষণ করে| আর সেটি সঠিক না হলে,
প্রশ্নটির সঠিক উত্তরদানের জন্য প্রয়ােজন হল সংবেদন, প্রত্যক্ষণ ও ধারণা সম্পর্কে অবহিত হওয়া।
(১) সংবেদন: কোনাে অন্তর্বাহী স্নায়ুর গ্রাহক অংশ উদ্দীপিত হয়ে, সেই উদ্দীপক মস্তিষ্কে সঞ্চালিত হলে তার দ্বারা যে সহজ মানসিক প্রক্রিয়ার সৃষ্টি হয় তাকেই সংবেদন বলে।
(২) প্রত্যক্ষণ: সংবেদন যখন নির্দিষ্ট অর্থ বহন করে তখন তাকে প্রত্যক্ষণ বলা হয়। অর্থাৎ অর্থপূর্ণ সংবেদন হল প্রত্যক্ষণ। এটিও একটি মানসিক প্রক্রিয়া তবে অপেক্ষাকৃত জটিল।
(৩) ধারণা: একই ধরনের বস্তু সম্বন্ধে ব্যক্তি যেসব অভিজ্ঞতা অর্জন করে, সেই অভিজ্ঞতাগুলির মধ্যে যে সাধারণ গুণগুলি দেখা যায়, তাদের সম্পর্কে জানার পর একটি নামকরণ করাই হল ধারণা। ধারণা অপেক্ষাকৃত জটিল মানসিক প্রক্রিয়া।
উপরােক্ত আলােচনার মাধ্যমে সংবেদন, প্রত্যক্ষণ এবং ধারণার ক্রম-জটিল মানসিক প্রক্রিয়া তিনটির মধ্যে সম্পর্ক স্পষ্ট হয়। এই প্রক্রিয়াগুলির সাহায্যে আমরা বস্তু বা ব্যক্তি সম্বন্ধে জানতে পারি।
সংবেদন, প্রত্যক্ষণ ও ধারণার মাধ্যমে জানার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণতা পায়। জানার প্রক্রিয়াকে বিশ্লেষণ করে যে ধারাবাহিক পর্যায়গুলিকে দেখা যায় সেগুলি হল—বাহ্যিক উদ্দীপক ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার ফলে সংবেদন সৃষ্টি হয়। এই সংবেদনকে পূর্ব-অভিজ্ঞতার সঙ্গে সম্পর্কিত করে অর্থপূর্ণ করা হয়, যার ফলে প্রত্যক্ষণ ঘটে। প্রত্যক্ষ বিষয় বা বস্তুকে যখন বিশ্লেষণ, তুলনাকরণ, পৃথককরণ ও সামান্যীকরণ করার পর একটি নাম দেওয়া হয়, তখন তাকে ধারণা বলা হয়| সংবেদন ব্যতীত প্রত্যক্ষণ হয় না এবং সংবেদন ও প্রত্যক্ষণ ব্যতীত ধারপা গঠন সম্ভব নয়। তাই বলা যায় যে সংবেদন, প্রত্যক্ষণ ও ধারপা গঠন সম্পর্কযুক্ত।
Leave a comment