প্রশ্নঃ ধর্ম কাকে বলে?

অথবা, ধর্মের সংজ্ঞা দাও।

ভূমিকাঃ ধর্মের সংজ্ঞা নির্ধারণ করা অত্যন্ত কঠিন ব্যাপার। কারণ ধর্ম মানব সমাজের মতই অতি প্রাচীন প্রতিষ্ঠান। ধর্মের সাথে মানুষের আবেগ, অনুভূতি, ভক্তি-শ্রদ্ধা, বিস্ময় ইত্যাদির সম্পর্ক অতি নিবিড়। মানব সমাজ বড় বিচিত্র প্রতিষ্ঠান। এখানে নানা শ্রেণীর লােকের বসবাস। নানা ধরনের ধর্মীয় আচার-আচরণ সমাজে বিদ্যমান থাকায় নৃবিজ্ঞানীগণ বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে ধর্মকে ব্যাখ্যা করেছেন।

ধর্মের সংজ্ঞাঃ অল্প কথায় ধর্মের সংজ্ঞা দেওয়া দুরূহ ব্যাপার। তবে ধর্ম বলতে এমন কতকগুলাে নিয়ম-কানুন, আচার-অনুষ্ঠান বা বিশ্বাসকে বুঝায়, যার মাধ্যমে মানুষ নিজেকে সৎ, সুন্দর ও নীতিবান করে গড়ে তুলতে চায়। ধর্মের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের সার্বিক জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং শুভ ও সুন্দরের দিকে আহ্বান করা।

প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ বিভিন্ন নৃবিজ্ঞানী ধর্মকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। নিম্নে তা বিস্তারিত বর্ণনা করা হলাে-

নৃবিজ্ঞানী টেইলরের মতে, ‘Religion is thebelief in spit being.’ অর্থাৎ ধর্ম হচ্ছে অতিপ্রাকৃত বিশ্বাস।

তিনি আত্মা, ভূত-প্রেত, দৈত্য-দানব ইত্যাদিতে বিশ্বাস স্থাপন করাকে ধর্ম বলেছেন।

অধ্যাপক ইয়ংগার তার ‘Religion, Soociety and Indivitual’ গ্রন্থে ধর্মের ক্রিয়াবাদী সংজ্ঞায় বলেন, ধর্ম এমন একটি ব্যবস্থা যাতে কিছু বিশ্বাস ও কর্মাদি দ্বারা মানুষ তার জীবনের চরম সমস্যাবলি মােকাবেলা করতে চায়।

ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী ডুরখেইম-এর মতে, ধর্ম হল পবিত্র বস্তু সম্পর্কিত কতকগুলাে বিশ্বাস ও প্রথার সমষ্টি।

কার্ল মার্কস বলেন, ধর্ম মানুষকে তন্দ্রাবিষ্ট করে রাখে।

য়ংগার বলেন, ‘ধর্ম এমন একটা ব্যবস্থা যাতে কিছু বিশ্বাস ও কর্মাদি দ্বারা মানুষ তার জীবনের চরম সমস্যাবলী মােকাবিলা করতে চায়।’

সমাজবিজ্ঞানী এম রেভায়েল বলেন, “ধর্ম হলাে রহসাবৃত মহাত্মার সাথে মানবমনের সম্পর্ক সৃষ্টির ভাবানুভূতিগত বন্ধনের নির্ধারক। বিশ্ব ও ব্যক্তির ওপর উক্ত শক্তির প্রভাবকে মানুষ স্বীকার করে নেয় এবং সেই মহাত্মার সাথে নিজের সম্পর্কের কথা ভেবে ব্যক্তিমন পুলতিক হয়।”

সমাজবিজ্ঞানী ট্যাগার্ড বলেছেন, Religion is an emotion resting on a conviction of harmony between ourselves and the universe at large.

অধ্যাপক অগবার্ন ও নিমফক-এর মতে, Religion is the attitude towards super human powers.

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, আমাদের ধর্মীয় প্রার্থনা উদ্দেশ্যবিহীন নয়। প্রার্থনায়, অনুনয়ে, ভক্তিতে স্বীয় উদ্দেশ্য সাধন করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।