প্রশ্নঃ ধর্ম ও দর্শনের মধ্যে পার্থক্য লিখ।

অথবা, ধর্ম ও দর্শনের মধ্যে বৈসাদৃশ্য ব্যাখ্যা কর।

ভূমিকাঃ মানুষ বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন প্রাণী। তাই সে এসব রহস্য ছিন্ন করেই ক্ষান্ত হয়নি, জীবনের ক্ষেত্রে এর তাৎপর্যকেও আবিষ্কার করেছে। আর এজন্যই দর্শন একটি সর্বাত্মক বিষয়। দর্শন শব্দটি এসেছে সংস্কৃত দৃশ ধাতু থেকে। বাংলা ভাষায় দৃশ ধাতুর অর্থ হলাে দেখা। দৈনন্দিন জীবনে দেখা বলতে আমরা চাক্ষুষ প্রত্যক্ষণকে বুঝি। কিন্তু এখানে দেখা মানে চাক্ষুষ দেখা নয়। দর্শন হচ্ছে জীব ও জগতের স্বরূপ উপলব্ধি।

দর্শন ও বিজ্ঞানের বৈসাদৃশ্যঃ দর্শন ও বিজ্ঞানের মধ্যে নিম্নলিখিত বৈসাদৃশ্য দেখা যায়-

(১) বিজ্ঞান প্রকৃতির এক একটি বিশেষ বিভাগ নিয়ে আলােচনা করে। কিন্তু সমগ্র বিশ্ব জগই দর্শনের আলােচ্য বিষয়। বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে খণ্ড। কিন্তু দর্শনের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে অখণ্ড।

(২) বিজ্ঞান তার আলােচ্য বিষয় ব্যাখ্যার জন্য কতকগুলাে স্বতঃসিদ্ধ সত্য ও নীতিকে বিনা বিচারে স্বীকার করে নেয়। কিন্তু দর্শন আগে থেকে কোনাে নীতি বা সত্যকে বিনা বিচারে মেনে নেয় না।

(৩) বিজ্ঞান ও দর্শনের পদ্ধতির মধ্যে পার্থক্য আছে। বিজ্ঞানীদের পদ্ধতি হলাে- অভিজ্ঞতাভিত্তিক পদ্ধতি, পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষণ এবং আরােহণ পদ্ধতি। দার্শনিকদের পদ্ধতি হলাে বুদ্ধির সাহায্যে আলােচ্য বিষয়ের বিচার বিশ্লেষণ করা।

(৪) বিজ্ঞানের নির্ণীত বিষয়বস্তু অমূর্ত, কিন্তু দর্শনের বিষয়বস্তু হলাে মূর্ত।

(৫) বিজ্ঞান কেবল সত্য সাধক। দার্শনিক হলাে সত্য, শুভ ও সুন্দরের সাধক।

(৬) কোনাে বিষয়ে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সাধারণত সর্বজনগ্রাহ্য। কিন্তু বিভিন্ন দার্শনিক বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে একই বিষয়ের বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে।

(৭) দর্শনের বুৎপত্তিগত অর্থ হলাে জ্ঞানের অনুরাগ, কিন্তু বিজ্ঞানের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হলাে জ্ঞান বা জ্ঞানবিদ্যা।

(৮) বিজ্ঞানের পদ্ধতি হলাে আরােহমূলক, আর দর্শনের পদ্ধতি অবরােহমূলক।

(৯) বিজ্ঞান সষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নিয়ে আলােচনা করে না, পক্ষান্তরে দর্শন সৃষ্টিকর্তা বা ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে আলােচনা করে।

(১০) দর্শনের পরিসর বিজ্ঞানের তুলনায় অনেক ব্যাপক।

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, দর্শন ও ধর্মের সম্পর্ক খুবই নিবিড়। বিষয়বস্তুগতভাবে আমরা দেখেছি যে, দর্শন ও ধর্ম উভয়ই জীবন ও জগতের রহস্য উদঘাটন করে চরম সত্যকে আবিষ্কার করতে চায়। দর্শন যদি নিরপেক্ষ হয় এবং ধর্ম যদি অন্ধ গোঁড়ামির প্রভাবমুক্ত থাকে তাহলে উভয়ে জগতের রহস্যকে সুষ্ঠুভাবে উন্মােচন করতে পারে। পাশ্চাত্যের মুসলিম দার্শনিক ইবনে রুশদ তাই ধর্ম ও দর্শনকে এক ও অভিন্ন মনে করেন। সুতরাং দর্শন ও ধর্মের সম্পর্ক খুবই নিবিড়।