প্রশ্নঃ ধর্ম ও দর্শনের মধ্যে পার্থক্য বৈসাদৃশ্য তুলে ধর।

অথবা, ধর্ম ও দর্শনের মধ্যে বৈসাদৃশ্য নির্ণয় কর।

ভূমিকাঃ জগৎ ও জীবনের উৎপত্তি, প্রকৃতি ও পরিণতি সংক্রান্ত এমন কিছু মৌলিক বিষয় আছে যেগুলাে যুগপৎ মানুষের মনে বিস্ময় ও কৌতূহল সৃষ্টি করে। এ বিস্ময়বােধ ও কৌতূহলের তাগিদেই মানুষ চালিত হয় অজানাকে জানা এবং জগৎসংসার ও মানবজীবনের বিবিধ রহস্য উঘাটনের লক্ষ্যে। সুতরাং এই পৃথিবীর সৃষ্টিরহস্য আহরণের মনােবাসনা থেকেই দর্শনের সৃষ্টি। আমাদের আলােচ্য বিষয় দর্শনের সাথে ধর্ম এবং বিজ্ঞানের সম্পর্ক। নিম্নে উভয় বিষয়ের সাথে দর্শনের সাদৃশ্য, বৈসাদৃশ্য এবং তারা পরস্পর কতটুকু সম্পর্কযুক্ত তা আলােচনা করা হলােঃ

ধর্মের সাথে দর্শনের সম্পর্কঃ দর্শনের প্রধান হাতিয়ার যুক্তি। অন্যদিকে ধর্মের মূল ভিত্তি হলাে বিশ্বাস। তাই সাধারণভাবে মনে করা হয় যে, দর্শন ও ধর্ম পরস্পর বিরুদ্ধভাবাপন্ন এবং একে অপরের বিরােধিতা করে। কিন্তু প্রকৃত বিচারে ধর্ম ও দর্শনের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য, যা নিচে আলােচনা করা হলােঃ

দর্শন ও ধর্মের মধ্যে বৈসাদৃশ্যঃ ধর্ম ও দর্শনের মধ্যে কতগুলাে বৈসাদৃশ্য রয়েছে। নিম্নে এসব বৈসাদৃশ্য আলােচনা করা হলােঃ

(১) বিশ্বাস ও যুক্তিঃ ধর্ম বিশ্বাসের ওপর নির্ভরশীল, কিন্তু দর্শন যুক্তির ওপর নির্ভরশীল।

(২) আচার-অনুষ্ঠানঃ ধর্মের বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান আছে, কিন্তু দর্শনের কোনাে আচার-অনুষ্ঠান নেই।

(৩) পদ্ধতিগতঃ দর্শন চিন্তামূলক ও বুদ্ধিনির্ভর। ধর্ম বিশ্বাসনির্ভর। দর্শন অভিজ্ঞতাকে বিচার করে সার্বিক সত্যে উপনীত হয়। ধর্ম অনুভূতি ও বিশ্বাসের মাধ্যমে পরম সত্তাকে উপলব্ধি করে।

(৪) সত্যের বিচারঃ দার্শনিক সার্বিক সত্য জানতে আগ্রহী, কিন্তু ধার্মিক সত্যকে নিজের অন্তরে পেতে আগ্রহী।

(৫) বিধিনিষেধঃ দর্শনে কোনাে বিধিনিষেধ নেই, কিন্তু ধর্মে বিধিনিষেধ রয়েছে।

(৬) সত্তা নির্ণয়ঃ দর্শন সত্তা নির্ণয় করতে চায়, কিন্তু ধর্ম চায় সত্তাকে উপলব্ধি করতে।

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, আপাতদৃষ্টিতে ধর্ম ও বিজ্ঞানের সাথে দর্শনের সম্পর্ক বিরােধপূর্ণ মনে করা হলেও প্রকৃতপক্ষে তা নয়। দর্শন ও ধর্ম পদ্ধতিগতভাবে বিরােধপূর্ণ হলেও উভয়ই মানবকল্যাণে কাজ করে এবং উভয়ের উদ্দেশ্য এক। আবার বিজ্ঞান ও দর্শনের ক্ষেত্রেও একই দৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। বিজ্ঞান ও দর্শন পরিপূরক হিসেবেও কাজ করে। তাই ধর্ম ও বিজ্ঞানের সাথে দর্শন পুরােপুরি বিরােধপূর্ণ নয়।