কাজি নজরুল ইসলামের লেখা ফণি-মনসা কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতায় কবির স্বদেশপ্রেমের অসামান্য প্রকাশ দেখা যায়।
১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশীর প্রান্তরে ভারতবর্ষের যে স্বাধীনতার সূর্য অস্তাচলে গিয়েছিল, তার জন্য কবির আক্ষেপ এই কবিতায় তীব্র স্বরে ধ্বনিত হয়েছে। স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করতে গিয়ে বন্দি ও দেশান্তরী হতে হয়েছে অসংখ্য দেশপ্রেমিককে। আন্দামান আর নির্বাসন তখন সমার্থক হয়ে গেছে। স্বাধীনতার লাঞ্ছনা, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ওপর ব্রিটিশ শাসকদের নির্মম অত্যাচারকে কবি মর্মস্পর্শী ভাষায় এই কবিতায় চিত্রিত করেছেন। কবি দেখেছেন প্রতিবাদের আর মুক্তির কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তির নির্লজ্জ প্রয়াস। এমন এক আইনের শাসনে দেশ বাঁধা, যেখানে সত্য কথা বললে বন্দি হতে হয়, স্বাধীন চিত্তে কথা বললে ‘বিদ্রোহী আখ্যা পেতে হয়। কিন্তু শােষণের অবসান আর স্বাধীনতার উন্মেষের মধ্যেই রয়েছে জীবনের সার্থকতা—এটাই কবির বিশ্বাস। তাই দ্বীপান্তরের বন্দিনী র উপসংহারে কবি এই বিপ্লবী প্রাণের আহ্বানের জন্যই পাঞ্জন্য শাঁখ বাজাতে বলেছেন। ইতিহাসের অনিবার্যতায় দ্বীপান্তর আন্দামানের ঘানিতে লেগেছে এমন এক ঘুর্ণিপাক-যাকে কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না; যা নিশ্চিতরূপে ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে ভারতবর্ষকে স্বাধীন করতে সক্ষম হবেই বলে কবির বিশ্বাস।
সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে অসন্তোষ আর বিক্ষোভেরই প্রকাশ ঘটেছে নজরুলের ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতায়।
দেশের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামরত মানুষজনকে ইংরেজ সরকার শাস্তিস্বরূপ আন্দামানে দ্বীপান্তরে পাঠাতেন। কবির কাছে আন্দামান তাই এমন এক জায়গা যেখানে ‘রূপের-কমল রূপার কাঠির । কঠিন স্পর্শে যেখানে স্নান’। ‘রূপের-কমল বলতে এখানে দেশপ্রেমিক তথা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রাণশক্তির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। কবি নজরুলের মতে, ইংরেজ শাসন যেন এক রুপাের কাঠি, যার ছোঁয়াতে রূপকথার রাজকন্যার মতাে দেশের সার্বভৌমত্ব বা স্বাধীনতার বাসনা বিবর্ণ হয়ে যায়। স্বাধীনতার শতদল সেখানে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় ব্রিটিশ সান্ত্রী বা শস্ত্র-পাণির’ অর্থাৎ ইংরেজদের পুলিশ প্রশাসনের অস্ত্রের নির্মম আঘাতে। অসংখ্য স্বাধীনতা সংগ্রামীর বিপ্লব সাধনাকে এইভাবে দমন করার চেষ্টাকে সান্ত্রীর সাহায্যে বীণার তন্ত্রী ছিন্ন করে দেওয়ার মতাে কাজ বলে কবি উল্লেখ করেছেন। অত্যাচারী ইংরেজ শাসনকে কবি ‘রক্ষ-পুর’ বা ‘যক্ষপুরী’ র সঙ্গে তুলনা করেছেন।
নিরপরাধী সীতাকে যেমন বন্দি করে রেখেছিল রাবণ, ঠিক তেমনি সত্যভাষী দেশপ্রেমিকদের বন্দি করে দ্বীপান্তরে পাঠিয়েছে। রাবণরূপী ব্রিটিশ সরকার। এ সত্যকেই বন্দি করে রাখার হীন প্রয়াস বলে নজরুলের অভিমত।
দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতায় কবি কাজি নজরুল ইসলাম সাম্রাজ্যবাদী শােষণের নগ্ন চিত্রকে পাঠকের সামনে প্রকাশ করেছেন। রূপকথার আশ্রয় নিয়ে কবিতায় এনেছেন রুপাের কাঠির প্রসঙ্গ, যার স্পর্শে ‘রূপের কমল’ অর্থাৎ দেশের স্বাধীনতার জন্য প্রয়ােজনীয় প্রাণশক্তি অসাড় হয়ে যায়। স্বাধীনতাকে ‘বন্দিনী বাণী এবং অত্যাচারী ইংরেজ শাসনকে কবি এই কবিতায় ‘রক্ষ-পুর’ বা যক্ষপুরীর সঙ্গে তুলনা করেছেন। বিচারের নামে প্রহসন ও অত্যাচারের আয়ােজনকে স্পষ্ট করতে বিচারকে ‘চেড়ি’ আর বিপ্লবী প্রাণকে কবি বলেছেন যুগান্তরের ধর্মরাজ।
সপ্তসিন্ধু, শস্ত্রপাণি, ‘রৌপ্য-পঙ্ক’, হােমানল’, ‘পিঞ্জর’ ইত্যাদি অজস্র শব্দের ব্যবহার বিষয়-গান্তীর্য সৃষ্টিতে সাহায্য করেছে। ‘বাণী যেথা ঘানি টানে নিশিদিন’ ইত্যাদি অনুপ্রাসবহুল পঙক্তি সৃষ্টি করে বিষয়ের গাম্ভীর্যের মধ্যেও ধ্বনিময়তা ও গতির সঞ্চার করেছেন কবি। লক্ষণীয়, বক্তব্য-বিষয়কে তীক্ষ্ণ করার জন্য কবি মাত্রাবৃত্ত ছন্দের মধ্যম লয় ব্যবহার করেছেন। সব মিলিয়ে ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতাতে ভাষা ব্যবহার এবং রচনাশৈলীতে নবজীবনের স্বপ্ন ও স্বাধীনতার বাণীকে কবি সার্থকভাবেই সঞ্চারিত করে দিতে পেরেছেন।
কাজি নজরুল ইসলাম তার দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতায় সাম্রাজ্যবাদী শক্তির অত্যাচার ও লাঞ্ছনায় বিপন্ন স্বদেশভূমির সঙ্গে গভীর একাত্মতা অনুভব করেছেন। ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে বন্দি ও নির্বাসিত হয়েছেন অসংখ্য স্বাধীনতা সংগ্রামী। কবির চোখে এই নির্বাসিত বন্দিরা হয়ে উঠেছেন ভারত-আত্মার মূর্ত প্রতীক। ব্রিটিশ শাসকরা চেয়েছিল হিন্দু-মুসলমানকে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতে লিপ্ত করে বা কামান-গােলার সাহায্যে দেশবাসীর মনে ভীতির সঞ্চার করে এদেশের বুকে তাদের সাম্রাজ্যকে অটুট রাখতে। বিদ্রোহী কবি নজরুল চেয়েছেন, সেই অত্যাচারের অবসান ঘটুক।
সেই সময় স্বাধীনতা সংগ্রামের দিকে লক্ষ রেখে তিনি কিন্তু স্বাধীনতাপ্রাপ্তির ব্যাপারে হয়তাে একটু সন্দিহানই ছিলেন। না হলে ‘উঠেছে বাণীর শিশমহল’ বাক্যটি উল্লেখ করে দাঁড়ির পরিবর্তে জিজ্ঞাসা চিহ্ন ব্যবহার করতেন না। রাজনৈতিক দর্শনে শুচিতা বজায় রাখার প্রচেষ্টায় কিছুতেই যে রক্তস্নাত ভারতবর্ষ শুভ্র হতে পারে না, নজরুল তা জানেন। সুসজ্জিত ইংরেজ সৈন্যের কামান-গােলার আক্রমণে স্বাধীনতার স্বপ্নের প্রাসাদ তাই মুহূর্তেই ধূলিসাৎ হয়ে যেতে বাধ্য। এরূপ স্বাধীনতার স্বপ্ন বা আকাঙ্ক্ষাকে কবি এখানে তুলনা করেছেন বাণীর শিশমহল’-এর সঙ্গে। কাচ নির্মিত বাড়ির মতােই নরমপন্থী মনােভাব আর আলাপ-আলােচনার মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভের প্রত্যাশাও নিতান্তই ঠুনকো।
মাতৃত্বের বিচারে জনা চরিত্র কতটা সার্থক?
“এ জনাকীর্ণ ভবস্থল আজি বিজন জনার পক্ষে” -জানা কে? তার কাছে ভবস্থল বিজন কেন?
“লােকমাতা রমা কি হে এ ভ্রষ্টা রমণী?” -‘অষ্টা রমণী’ বলতে কার কথা বােঝানাে হয়েছে? বক্তার এই প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিত আলােচনা কর।
‘বাড়ির কাছে আরশীনগর’—লালনের এই গানটির মূল বক্তব্য ও তার রূপক অর্থ সংক্ষেপে আলােচনা করাে।
‘বাড়ির কাছে আরশীনগর’ গানে বাউলতত্ত্ব কীভাবে প্রতিফলিত হয়েছে তা আলােচনা করাে।
‘বাড়ির কাছে আরশীনগর’-এই রচনাটিতে লালনের কবিপ্রতিভার যে পরিচয় পাওয়া যায় তার মূল্যায়ন করাে।
“আমার বাড়ির কাছে আরশিনগর/ও এক পড়শী বসত করে” -মন্তব্যটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করে, কবির সঙ্গে তাঁর পড়শির কাছাকাছি থাকা সত্ত্বেও ‘লক্ষ যােজন ফাক’-এর কারণ বিশ্লেষণ করাে।
“গ্রাম বেড়িয়ে অগাধ পানি / ও তার নাই কিনারা নাই তরণী পারে” -মন্তব্যটির তাৎপর্যের আলােকে এই অগাধ পানি’কে কীভাবে অতিক্রম করা সম্ভব তা আলােচনা করাে।
“বাড়ির কাছে আরশিনগর/ও এক পড়শী বসত করে” -আরশিনগরে থাকা পড়শির পরিচয় দাও। কবির সঙ্গে এই পড়শির সম্পর্ক আলােচনা করাে।
“..ক্ষণেক থাকে শূন্যের উপর/ ক্ষণেক ভাসে নীরে।” -প্রসঙ্গ উল্লেখ করাে। এই মন্তব্যের আলােকে কবির মানসিকতা বিশ্লেষণ করাে।
“পড়শী যদি আমায় ছুঁত / আমার যম-যাতনা সকল যেত দূরে।” -মন্তব্যটির তাৎপর্য আলােচনা করাে।
“নাই কিনারা নাই তরণী পারে”- মন্তব্যটির প্রকৃত অর্থ বিশ্লেষণ করাে। সেখানে যাওয়ার অন্য কোন্ পথের কথা কবি উল্লেখ করেছেন?
“হস্ত-পদ-স্কন্ধ-মাথা নাই রে”—মন্তব্যটির তাৎপর্য আলােচনা করাে। এরকম পড়শী কবিকে স্পর্শ করলে কী হত?
“সে আর লালন একখানে রয় / তবু লক্ষ যােজন ফাঁক রে।”— একখানে থাকার তাৎপর্য কী?
“তবু লক্ষ যােজন ফাক রে” -লক্ষ যােজন ফাক বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
বাউল তত্ত্ব ভাবনার উৎপত্তি কীভাবে হয়েছে লেখাে।
বাউল সাধক লালন ফকির কীভাবে চিত্ত পরিশুদ্ধির কথা বলেছেন?
‘বাড়ির কাছে আরশীনগর’ ‘বাড়ির কাছে আরশীনগর’ বলতে কী বােঝানাে হয়েছে?
লালনের মতে যম-যাতনা কীভাবে দূর করা যেতে পারে?
‘বাড়ির কাছে আরশীনগর’ কবিতায় বর্ণিত ‘পড়শী’-র স্বরূপ বর্ণনা করাে।
পাঠ্য লালন-গীতিতে বাউল সাধনার যে গুহ্যতত্ত্ব প্রকাশিত হয়েছে তা সংক্ষেপে লেখাে।
“আমি বাঞ্ছা করি দেখব তারি” -কবি কী বা করছেন এবং কেন?
“আমি বাঞ্ছা করি দেখব তারি” -বক্তা কাকে দেখতে চান? কিভাবে তার দর্শন পাওয়া যাবে?
“ও সে ক্ষণেক থাকে শূন্যের উপর/আবার ক্ষণেক ভাসে নীরে।” -কার কথা বলা হয়েছে? মন্তব্যটির তাৎপর্য আলােচনা করাে।
“..এক পড়শী বসত করে।” -পড়শী বলতে কবি কাকে বুঝিয়েছেন? বক্তা তার পড়শীকে দেখতে পাচ্ছেন না কেন তা কবিতা অবলম্বনে আলােচনা করাে।
“আমার বাড়ির কাছে আরশীনগর” -কার বাড়ি? আরশীনগর কথাটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করাে।
Leave a comment