দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন কলকাতার বর্ণনা: সুভাষ মুখােপাধ্যায়ের ‘কলের কলকাতা’ রচনায় দেখা যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৯-১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ) শুরু হলে কলকাতাতেও এসে পৌঁছােয় তার হুংকার। অন্ধকারে কলকাতার দেয়ালে দেয়ালে কারা যেন সেটে দেয় গােটা ‘গােটা হরফের নিষিদ্ধ ইস্তেহার’। বিয়াল্লিশ-এর আগস্টে ট্রাম পােড়ানাে হয় কলকাতায়। রাস্তায় গুলি চলে। কিন্তু কলকাতার অকুতােভয় নবীন যুবকরা ইট হাতে নিয়ে দাঁড়ায় বন্দুকের সামনে, বলে, “ইংরেজ, ভারত ছাড়াে।”

এই আগুন নিভলে শুরু হয় পঞ্চাশের (১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের) মন্বন্তর। গ্রামের মানুষ পেটের জ্বালায় উঠে আসে শহরে। কলকাতার ফুটপাথ ভরে যায় মরা মানুষের ভিড়ে। বাতাসে ভাসতে থাকে মৃতদেহের দুর্গন্ধ। তারপর একদিন গ্রামের বীজ-বােনা মাঠে আবার সােনালি ধানের শিষ পেকে উঠলে শহরে আসা শােক-তাপ-জর্জর গ্রামবাসীরা ফিরে যায় তাদের জন্মস্থানে।

‘কলের কলকাতা’ তখন অনেকটাই স্বাভাবিক হয়। তবে, বােমা পড়ার ভয়ে ‘ব্ল্যাক নাইট’ অর্থাৎ ‘আলাে-নেভানাে রাত্তির’ কাটাতে থাকে কলকাতাবাসী। একদিন ডালহৌসি ও খিদিরপুরে জাপানিরা বোমা ফেলে গেলে বন্দরের শ্রমিকরা মাছির মতাে মারা যায়। এরপর একদিন বিশ্বযুদ্ধ থেমে গেলে রাস্তার আলাের ঠুলিগুলি খুলে নেওয়া হয়, পরিখাগুলি বুজিয়ে দেওয়া হয়। শব্দ- নিবারক পাঁচিল ব্যাফলওয়াল ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। লালকেল্লায় বন্দি হয়। আজাদ হিন্দ ফৌজ।